জেলেনস্কিকে যা বললেন ট্রাম্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:০৬ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে আজ শুক্রবার আলোচনায় বসার পূর্বে বলেছেন, জেলেনস্কির প্রতি তার "অনেক সম্মান" আছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার বিষয়ক চুক্তির বিষয়ে আজ দুই দেশের প্রেসিডেন্টের একসাথে হোয়াইট হাউজে বসার কথা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বিবিসির তরফ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে সম্প্রতি মি. জেলেনস্কিকে "স্বৈরশাসক" বলার কারণে তিনি ক্ষমা চাইবেন কি না।
তার উত্তরে তিনি বলেন যে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তিনি এই কথা বলেছেন। সেইসাথে, তিনি এসময় মি. জেলেনস্কিকে "খুব সাহসী" বলেও অভিহিত করেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সাথে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা করার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বলছিলেন।
তিনি আশা করছেন যে ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে তার আসন্ন বৈঠক "খুব ভালো" হবে এবং বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা "খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।"
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের তিন বছরেরও বেশি সময় পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সর্বপ্রথম মস্কোর বৈঠক হয়েছে। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন তার পশ্চিমা মিত্রদের বিস্মিত করেছে।
আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প মি. জেলেনস্কিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দায়ী করে বলেছিলেন, "আপনি তিন বছর ধরে সেখানে আছেন। আপনার এটি শেষ করা উচিৎ ছিল... এটি শুরুই করা উচিৎ ছিল না। আপনি একটি চুক্তি করতে পারতেন।"
গতকাল বৃহস্পতিবার কিয়ার স্টারমারের সাথে আলোচনার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা মি. জেলেনস্কি'র সাথে আসন্ন বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
তখন তিনি বলেন, "আমার ধারণা আগামীকাল আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হবে।"
ওই সময় তাকে বিবিসি সংবাদদাতা ক্রিস ম্যাসন জিজ্ঞেস করেন যে তিনি এখনও ভলোদিমির জেলেনস্কিকে "একনায়ক" মনে করেন কি না।
উত্তরে তিনি বলেন, "আমি সেটা বলেছিলাম? আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না সেটা।"
মি. জেলেনস্কি আশা করছেন, আজ শুক্রবারের বৈঠক থেকে তিনি ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চয়তা পাবেন এবং এই বৈঠক সম্ভাব্য শান্তি চুক্তিরও ভিত্তি হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি "অনেক বিষয়ে উদার"। কিন্তু তিনি চান, কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নির্ধারিত হওয়ার আগে রাশিয়া এবং ইউক্রেন একটি চুক্তির বিষয়ে সম্মত হোক।
ভলোদিমির জেলেনস্কি আজ যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার দেয়া বিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন যে ইউক্রেনে মার্কিন খনির কার্যক্রম রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আক্রমণ থেকে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, "আপনি বলতে পারেন যে এটি একটি ব্যাকস্টপ। আমরা যদি সেখানে আমাদের কর্মীদের নিয়ে থাকি এবং আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে কাজ করি, আমার মনে হয় না যে সেখানে কেউ আক্রমণ করবে।"
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন যে যুদ্ধ শেষ হলে শান্তিরক্ষী বাহিনীর অংশ হিসেবে ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাতে যুক্তরাজ্য প্রস্তুত। তবে সেটি তখনই পাঠাতে পারবে, যদি বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোট নেটোর প্রধান সদস্য যুক্তরাষ্ট্র সেখানে প্রয়োজনীয় সমর্থন প্রদান করে।
রাশিয়া যদি ব্রিটিশ সেনাদেরকে আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ব্রিটিশদের সৈন্যরা অসাধারণ। তাদের অসাধারণ সামরিক বাহিনী রয়েছে। তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে সক্ষম। কিন্তু তারা সাহায্য চাইলে আমি করবো, ঠিক আছে?"
নেটো'র আর্টিকেল পাঁচ অনুযায়ী, সদস্যদের কেউ আক্রমণের শিকার হলে তারা মিত্রদের রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউক্রেনে শান্তি ফেরাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের "ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির" প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ইউক্রেনের মাটিতে বুট ও আকাশে বিমান রাখতে যুক্তরাজ্য প্রস্তুত।"
"আমরা এখন ইউক্রেনে চলমান বর্বর যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের বিষয়ে মনোযোগী।"
তবে তিনি যোগ করেছেন, শান্তি চুক্তি এমন হওয়া উচিত নয়, "যা আগ্রাসী শক্তিকে পুরস্কৃত করে বা ইরানের মতো শাসনব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে।"
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও তাকে প্রশ্ন করা হয়। তখন তার উত্তরে বলেন যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি সবার জানা।
এই প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয় যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মি. পুতিনকে বিশ্বাস না করলেও তিনি কেন মি. পুতিনকে বিশ্বাস করেন?
উত্তরে তিনি বলেন, "আমি অনেক লোককে চিনি যাদের সম্পর্কে আপনি বলবেন যে তারা কখনোই আপনাকে প্রতারণা করবে না। কিন্তু তারা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানুষ।"
"আমি অন্যদেরকেও চিনি, যাদের সম্পর্কে আপনি নিশ্চিতভাবে বলবেন যে তারা আপনাকে প্রতারণা করবে। অথচ তারা শতভাগ সৎ। তাই, কে কেমন তা আপনি বলতে পারেন না।"
এদিকে, গত বুধবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ কায়া কালাস বলেছেন, "ইউরোপের মাটিতে কোনও চুক্তি কার্যকর করতে হলে তাতে ইউরোপীয়দেরও সম্মতি দিতে হবে।"
সেদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে কায়া কালাসের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক ছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবেই সেই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। বাতিলের কারণ হিসাবে উভয় পক্ষই সময়সূচি সংক্রান্ত জটিলতার কথা বলেছে।
সূত্র: বিবিসি
এসএস//