ইফতারির মুড়িমাখায় জিলাপির পক্ষে না বিপক্ষে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:২৬ পিএম, ৫ মার্চ ২০২৫ বুধবার

পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস পালন করছেন বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান। সুর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হয়। আমাদের দেশে ইফতারের ঐতিহ্যবাহী এক আইটেম মুড়িমাখা। যে আইটেমই থাকুক না কেন, সঙ্গে মুড়িমাখা না থাকলে যেন ইফতারি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
বাঙালীদের কাছে ইফতারে মুড়ি মাখানো খুবই জনপ্রিয়। সাধারণত আলুর চপ, বেগুনি, পেয়াজু ও ছোলা দিয়ে মুড়ি মাখানো হয়। তবে মাঝেমধ্যে এই মুড়ি মাখায় জিলাপি মেশানো হবে কি না তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। সম্প্রতি এই বিতর্ক ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু হয়ে ফেসবুকের ইভেন্ট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মুড়িতে জিলাপি, পক্ষ/বিপক্ষ’ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ইভেন্টের নাম ‘মুড়ি মাখাতে জিলাপি বন্ধ কর্মসূচি’। এই ইভেন্ট খোলার পর মুড়িমাখায় জিলাপি দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে ভার্চুয়াল বিতর্ক শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ইফতারে মুড়িতে জিলাপি মাখার পক্ষে vs বিপক্ষে মারামারি চাই’ শিরোনামে আরও একটি ইভেন্ট দেখা যায়। সেখানেও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নানারকম মন্তব্য করতে থাকেন, তুলে ধরতে থাকেন পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি।
এর মধ্যে এক ফেসবুক ব্যবহারী লিখেছেন, ‘ঝাল মুড়ির ভিতরে মিষ্টান্ন (জিলাপি, বুন্দিয়া) মিক্স করে খাওয়া একটা স্বৈরাচারি পদ্ধতি!’
অপর একজন লিখেছেন, ‘ঝাল মুড়ির ভিতরে মিষ্টান্ন (জিলাপি, বুন্দিয়া ) যারা মিক্স করে তারা হাউন আংকেল।’
অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘পূর্বের ন্যায় মুড়ি মাখাতে জিলাপি থাকবে এবং এই ধারা আমৃত্যু অব্দি অব্যাহত চাই। লাউড এন্ড ক্লিয়ার।’
যারা জিলাপিতে মুড়িমাখা পছন্দ করেন না, তাদের স্বাদগ্রন্থি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একজন। তিনি লিখেছেন, ‘মুড়িমাখাতে জিলাপি না হইলে, সেইডা আবার কিসের মুড়ি মাখা! ডাক্তার দেখান। আপনাদের টেস্টবাড গেছে গা।’
মুড়ি ও জিলাপির আদি আলাপ
মুড়ি শতাব্দী প্রাচীন একটি খাবার। চাল দিয়ে তৈরি এ খাবারটি বেশ হালকা হওয়ায় সহজেই হজম হয়ে যায়। এটি বেশ ঝামেলামুক্ত হালকা নাশতা হিসেবে জনপ্রিয়। ইফতারে সাধারণত সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, আলুর চপ, বেগুনি, পেয়াজু আর ছোলা মিশিয়ে মুড়ি মাখানো হয়।
অপর দিকে, মোঘল আমলের খাবার হলো জিলাপি। যা এই উপমহাদেশে এসেছিল পারস্যের ব্যবসায়ীদের হাত ধরে, যারা আমাদের মতোই ডুবো তেলে ভাজা মিষ্টান্নপ্রেমী ছিলেন।
এদিকে, অনেকেই এটি উপভোগ করেন, আবার কেউ এই মিশ্রণ যারা পছন্স করেন- তাদের নিয়ে নানাভাবে হাস্যরস করে থাকেন। কেউ কেউ মনে করেন এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও। চলুন তাহলে জেনে নিই মুড়ি ও মিষ্টিজাতীয় খাবারের সংমিশ্রণের নানা দিক-
পুষ্টিগুণ ও প্রভাব: মুড়ি মূলত একটি কম-ক্যালরিযুক্ত, সহজপাচ্য শস্যজাতীয় খাবার, যা কম পরিমাণে ফ্যাট ও ফাইবারযুক্ত। এটি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং হজমের জন্যও সুবিধাজনক। অপরদিকে জিলাপি, বুন্দিয়া বা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়ায়। যখন মুড়ির সঙ্গে মিষ্টি মিশিয়ে খাওয়া হয়, তখন এটি শরীরে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) তৈরি করে, যা তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি: আগে থেকেই যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা স্থূলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য এই ধরনের খাবার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট একত্রে গ্রহণ করলে তা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একইসঙ্গে, বেশি পরিমাণে তেল ও চিনিযুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।
তাহলে কী করা উচিত?
কারও যদি শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকে, তবে পরিমিত পরিমাণে (যেমন সপ্তাহে এক-দুবার) মুড়ির সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এটি যেন পরিমাণে সীমিত থাকে এবং অতিরিক্ত তেল ও চিনি গ্রহণ এড়ানো হয়। এর থেকে ভালো বিকল্প হতে পারে মুড়ির সঙ্গে দই, ফল বা বাদাম মিশিয়ে খাওয়া, যা একইসঙ্গে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি
ইফতারে মুখরোচক খাবার থাকা স্বাভাবিক, তবে তা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। সবার মনে রাখা উচিত, স্বল্পমেয়াদি রসনার আনন্দের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুস্বাস্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার হাইপ বা ট্রেন্ডের চেয়ে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া উচিত। সুস্থতা ও স্বাদ দুটোই যদি সমন্বয় করতে হয়, তবে সঠিক পুষ্টিকর বিকল্প বেছে নেওয়া হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।
এমবি//