আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো অনেক কঠিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩০ এএম, ৬ মার্চ ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দলটির সরকারের পতনের সাত মাস হতে চলেছে। কিন্তু সাত মাসে দলটির দেশের ভেতরে কোনো অবস্থান তৈরি করতে বা দেখাতে পারেনি।
বিবিসি বাংলায় রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ধর্মী এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়, টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের এক পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার স্বাদ নিতে সুবিধাবাদীদের ভিড় জমেছিল দলটিতে। তারা একতরফা ও বিতর্কিত তিনটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে ছিল প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার ওপর ভর করে।
আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভ বা মনোভাবকে পাত্তাই দেয়নি। নানা সংকট চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা ছিল। কতৃত্ববাদী মনোভাবে থাকা আওয়ামী লীগ সমস্যাগুলো রাজনৈতিকভাবে সমাধান করেনি। সেকারণে গণঅভ্যুত্থানে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে তাদের পতন হয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনাসহ নেতাদের বড় অংশকে বিদেশে পালাতে হয়েছে; যে নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।
ফলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির ভঙ্গুর চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। নেতারা পালিয়েছেন, সুবিধাবাদীরা সরে পড়েছেন। দেশে পালিয়ে থাকা নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নৈতিকতার প্রশ্ন।
কারণ তাদের শাসনের সময় অর্থপাচার, দুর্নীতি-অনিয়মের এত অভিযোগ উঠছে, যার প্রভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানসিকভাবে শক্ত অবস্থান নিতে পারছেন না। এছাড়া তাদের সরকারের পতনের আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না করা প্রশ্নে এখন সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আছে। কিন্তু এই দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগকে সহসাই রাজনীতিতে সুযোগ না দেওয়ার ব্যাপারে একটা ঐকমত্য আছে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেতৃত্ব প্রকাশ্যে এসে দলকে সংগঠিত করবে, সেই সাহস কেউ দেখাতে পারছে না বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
বিদেশে যারা অবস্থান করছেন, তারা সংগঠিত হয়েছেন বলে তাদের অনেকে দাবি করছেন। কিন্তু বাস্তবতার কারণে তাদের কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশের ভেতরে নেতা-কর্মীদের মনোবলে কতটা প্রভাব ফেলতে পারছে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল। তখনও দেশে অল্প সময়ের মধ্যে দলটির পরের স্তরের নেতারা রাজনীতির মাঠে নেমেছিলেন। তাদের মধ্যে বিভক্তি এলেও তারা দেশের ভেতরে রাজনীতিতে ছিলেন।
তিনি মনে করেন, এরপরও বিভিন্ন সময় সংকটে আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতির মাঠ ছাড়েনি। কিন্তু এবার মনোবল হারানো ভঙ্গুর দলটি এখনও কোনো অবস্থান নিয়ে নামতে পারছে না।
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে আবার বলছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে তারা সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সেই সুবিধা কিছুটা সহায়ক হতে পারে। কিন্তু দলগত অবস্থান দৃশ্যমান না হলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।
কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় দলটি
ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যারা অবস্থান করছেন, তাদের অনেকে বলছেন, দেশের ভেতরে কর্মসূচি দিয়ে তা পালনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ভালো নয়। নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার হতে হয়েছে। সে কারণে দেশের ভেতরে তারা এখনই কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ আলী আরাফাত, বিদেশে অবস্থান করা একাধিক নেতা ও দেশের ভেতরে কয়েকটি জেলার নেতার সঙ্গে কথা হয়। তারা দাবি করেন, দেশে এ মুহূর্তে কোনো কর্মসূচিতে না গিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই তারা দলকে সংগঠিত করছেন।
আরাফাত বলেন, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। আর নির্বাচন হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, এই অবস্থান নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে চাপ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মূল কথা হচ্ছে, দেশের ভেতরে অবস্থান নিয়ে দাঁড়াতে তারা সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে সহসাই সেই সুযোগ মিলবে, এমনটা মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এএইচ