ঢাকা, শুক্রবার   ১৪ মার্চ ২০২৫,   ফাল্গুন ৩০ ১৪৩১

প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরকে পাঁচ প্রস্তাব বিজিবিএ’র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৪১ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৫ শুক্রবার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেশ কয়েকটি নীতি সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এ আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।  

বিজিবিএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান সহায়তা চেয়ে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। এগুলো হলো- অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সাড়ে ৭ শতাংশ করা, নমুনার জন্য একটি পৃথক পাস বই চালু, লোকাল সোর্স ফ্যাব্রিক ও ট্রিমস ব্যবহার করে রফতানির অনুমতি, রপ্তানির পর শুল্ক প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড মেলার জন্য ভর্তুকি। 

এছাড়া পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমন কিছু সহায়তা চেয়েছেন সাইফুর রহমান। 

বৃহস্পতিবারের এ আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দুর্নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহদাত হোসেন সোহেল বলেন, ব্যবসায়ীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আপনি দুর্নীতি বন্ধ করুন। ব্যবসায়ীরা আপনাদের সবকিছু দেবে। চট্টগ্রাম পোর্টের বিভিন্ন জায়গায় অনেক কিছু ঘটে। আমার কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। ভয়েস ম্যাসেজসহ আপনাকে পাঠিয়েছিলাম। এখনো বন্ধ হয়নি। আপনার কাছে আবারও অনুরোধ করবো, আপনার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক শক্তিশালী। মেম্বার সাহেবও আপনার থেকে শক্তিশালী।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম ইকবাল বলেন, কদিন আগে পানগাঁও স্টেশনে দুটি কন্টেইনার আটকানো হয় আমান প্ল্যাস্টিকে। দুটির ডিউটি সাত কোটি টাকা দাবি করা হয়। ওই ছেলেটা এক সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমি ওকে ফিরিয়ে এনেছি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই কন্টেইনার ছেলেটি কোটি টাকা দিয়ে ছাড়িয়েছে।

আলোচনায় বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন উৎসে কর্তনের হার হ্রাস, নগদ প্রণোদনা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার কমানো এবং ১০ কাউন্ট ও ২০ কাউন্ট সুতায় শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংগঠনটি আগামী ৫ বছরের জন্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার, ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার, কোম্পানির ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী আমানত, স্থায়ী আমানত ইত্যাদির সুদ/মুনাফার ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।

তথ্য প্রযুক্তিখাতে কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বেসিস। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠার আগে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের শর্ত শিথিল করার, দেশি সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার রপ্তানিতে প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

প্লাস্টিকের খেলনা প্রস্তুতে ২৪ ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে করছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।

আমদানি করা ১৪টি কাঁচামালে কর ছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি। রপ্তানির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচামাল বাবদ আরোপযোগ্য শুল্ক ও করের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।

দ্য বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হিরা আমদানির রপ্তানিতে মূসকের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বর্ণের গহনার ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য মূসকের ওপর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এআইটি ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএম) ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।

বিটিএম’র পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতীয় সুতার প্রভাবে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ৭-৮ কোটি টাকার সুতা অবিক্রিত রয়েছে। আমরা মুনাফা করতে পারছি না।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট কর যেটা নিই সেটা আয়ের ওপর পারসেন্টেজ। গত ৫-৭ বছরে করপোরেট কর অনেক কমিয়েছি। কমাতে কমাতে ২৫ শতাংশে এনেছি। ১০০ টাকা লাভ হলে ২৫ টাকা সরকারকে দেবেন। আপনাদের লাভ হয় না বলছেন। তাহলে সরকারকে টাকা দেওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে আপনার রিডিউস রেট যেটা আছে ১৫ শতাংশ সেটা আপনাদের কেন দরকার। এই ১২-১৫ শতাংশ কার দরকার, যার অনেক লাভ হয়। ২৫ শতাংশ হলে হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়। রেগুলার ট্যাক্স রেট হলে সমস্যা কী। পাশাপাশি ভারতীয় সুতা এত কম দামে আসে কীভাবে?

তবে ১৫ শতাংশ কর হার রাখার যুক্তিতে নানান বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যরা।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ১৫ শতাংশ কেন হবে। এটার কোনো লজিক দেখি না। এটাতে আপনাদের বদনাম হচ্ছে। বলা হচ্ছে টেক্সটাইল খাতে কর হার কম। আপনারা রেগুলার রেটে চলে আসেন। ট্যাক্স হলে দেবেন, না হলে দেবেন না।

এএইচ