ঈদযাত্রার ১১ দিনে সড়কে প্রাণ হারাল ২৪৯ জন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০২৫ সোমবার

এবারের ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে ১১ দিনে (২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল) দেশে ২৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।
সোমবার (৭ এপ্রিল) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়। তিনি জানান, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এই ১১ দিনে আহতর সংখ্যা ৫৫৩ জন হলেও, বাস্তবে আহতের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। শুধু ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালেই (পঙ্গু হাসপাতালে) ঈদের ২ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৫৭১ জন, যার অধিকাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত। এই বাস্তবতায় ১১ দিনে সারা দেশের হাসপাতালসমূহে আহত মানুষের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি হবে। আর নিহতের মধ্যে নারী ৪১ জন ও শিশু ৫৯ জন।
১১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১০৬ জন, যা মোট নিহতের ৪২.৫৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪৪.৩৫ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৩৯ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৫.৬৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৩২ জন, অর্থাৎ ১২.৮৫ শতাংশ। এছাড়া এই সময়ে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত ও ১৫ আহত হয়েছেন। ১৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যম এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১০৬ জন (৪২.৫৭%), বাস যাত্রী ১৪ জন (৫.৬২%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৯ জন (৩.৬১%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস আরোহী ১৮ জন (৭.২২%)।
এছাড়াও থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ৪৯ জন (১৯.৬৭%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-আলগামন) ১০ জন (৪%) এবং বাইসাইকেল আরোহী ৪ জন (১.৬০%) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৮৭টি (৩৩.৮৫%) জাতীয় মহাসড়কে, ৯৮টি (৩৮.১৩%) আঞ্চলিক সড়কে, ৪৩টি (১৬.৭৩%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২৯টি (১১.২৮%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন:
দুর্ঘটনাসমূহের ৬৮টি (২৬.৪৫%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১৩টি (৪৩.৯৬%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৪১টি (১৫.৯৫%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ২৪টি (৯.৩৩%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (৪.২৮%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-ড্রাম-ট্রাক-ট্যাঙ্ক লরি ১৩%, বাস ১৯.১১%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ৭.৩৫%, মোটরসাইকেল ২৯.১৬%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান)
২১.৫৬%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-আলগামন) ৫.১৪%, বাইসাইকেল-রিকশা ২.৬৯% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ১.৯৬%।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৪০৮টি। (বাস ৭৮, ট্রাক ২৯, কাভার্ডভ্যান ৪, পিকআপ ৫, ট্রাক্টর ৬, ট্রলি ৫, ড্রাম ট্রাক ৩, ট্যাঙ্ক লরি ১, মাইক্রোবাস ১১, প্রাইভেটকার ১৮, জীপ ১, মোটরসাইকেল ১১৯, থ্রি-হুইলার ৮৮ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান)।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ২১ (নসিমন-করিমন-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-আলগামন), বাইসাইকেল-রিকশা ১১ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ৮টি।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:
বিভিন্ন সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৩.১১%, সকালে ২৩.৩৪%, দুপুরে ২১%, বিকালে ২৬.৮৪%, সন্ধ্যায় ৮.১৭% এবং রাতে ১৭.৫০%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৮.৭৯%, প্রাণহানি ২৪.৮৯%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৩৯%, প্রাণহানি ১৪.৪৫%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.১৭%, প্রাণহানি ২০.৮৮%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.৯৫%, প্রাণহানি ১৫.৬৬%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.২২%, প্রাণহানি ৫.৬২%।
এছাড়া সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ২.৭২%, প্রাণহানি ২.৪০%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৩৯%, প্রাণহানি ৭.৬৩% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৩৩%, প্রাণহানি ৮.৪৩% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৭৪টি দুর্ঘটনায় ৬২ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৭টি দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৮টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় ৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছেন।
ঈদযাত্রা ও দুর্ঘটনা পর্যালোচনা:
এবারের ঈদুল ফিতরে রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি এক কোটি ১৫ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৪ কোটি মানুষ যাতায়াত করেছেন। ঈদের আগে-পরে যথেষ্ট ছুটি থাকা, অনুকূল আবহাওয়া, বিভিন্ন সড়কের অবস্থা ভালো থাকা এবং সরকারের ব্যাপক তৎপরতার কারণে ঈদযাত্রা স্বস্তিকর ছিল। তবে সড়ক ও নৌ-পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে ২৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৫ জন নিহত এবং ৪৫৪ জন আহত হয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ২০.৩৫ জন।
২০২৪ সালে ১৫ দিনে ৩৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬৭ জন নিহত ও ১৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ২৪.৪৬ জন। এই বছরে ১১ দিনের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ২২.৬৩ জন। এই হিসেবে গত বছরের তুলনায় প্রাণহানি কমেছে ৭.৪৮ শতাংশ।
ঈদ উদযাপনকালে ব্যাপকহারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে। কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে আক্রান্ত হয়েছে। বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ১৩ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।
এসএস//