মনস্তত্ব না বদলালে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন (ভিডিও)
মুহাম্মদ নূরন নবী, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ৬ আগস্ট ২০২২ শনিবার
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু চলে গেছে মানবিক বিপর্যয়ের পর্যায়ে। প্রতিরোধে শৈথিল্য দেখালে অরাজকতা আরও বাড়বে। পরিবহন সেক্টরে জমে থাকা অব্যবস্থাপনার শুদ্ধি অভিযানে নামার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা, পরিবহন ব্যবসায়ী, চালক-শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের আন্তরিকতাও।
প্রতিদিনই গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের বিষয়টা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে। নিত্যনৈমত্তিক সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু, যার স্বজন চলে যায়, ক্ষতিটা সেই বোঝে।
মহামূল্যবান প্রাণগুলো থাকলে দেশের অর্থনীতিতেও থাকতো অবদান।
সেভ রোর্ড এন্ড ট্রান্সপোর্ট অ্যালাইন্সের আহবায়ক অধ্যাপক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “পরিবহন খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি পিলার। এই খাত থেকে দেশের অর্থনীতি বা সমাজ যা পাওয়ার কথা সেই পর্যায়ে পাচ্ছে না কেউ।”
এটি একটি ব্যস্ততম মহাসড়ক। রাস্তার চিত্রে আর মানুষের দেহভঙ্গিতে কিন্তু তা মনে হয় না। ফুটওভার ব্রিজ ঠায় দাঁড়িয়ে, কেউ উঠে না। সড়ক বিভাজক ডিঙিয়ে পথ চলছে অনায়াসে।
বলা নেই, কওয়া নেই, চলন্ত গাড়িকে থামিয়ে সড়ক পারাপারের চেষ্টাও কম নয়। বাস-বে নেই, মূল সড়কে যাত্রীর উঠা-নামা। ইজিবাইক, মোটরসাইকেলের রেস তো আছেই। ভারি বাহনের মাঝে কারণ ছাড়াই চলে আসে।
চালকরা জানান, “কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকার ফুডওভার করেছে। কিন্তু মানুষ ওঠে না। সোজা রাস্তা দিয়ে যায়। মোটরসাইকেলগুলোর কোন ডিসিপ্লিন নাই, ফাঁক পেলেই ঢুকিয়ে দেয়। একটার সামনে গিয়ে ঢেউ খেলছে।”
রাস্তা কোথাও কোথাও উন্নত কিন্তু ট্রাফিক সিগন্যাল সেই ম্যানুয়ালি। ট্রাফিক পুলিশের কথা বা নির্দেশনাই বা শোনার সময় কয়জনের আছে। গাড়িগুলোর ফিটনেসও নেই, দেখে-শুনে চালনার সময়ও যেন খুব কম।
কি পথচারী, কি পরিবহন সংশ্লিষ্ট- লাভের পাল্লা ভারি করতে চায় সবাই। উল্টো দুর্ঘটনায় প্রাণ বা অঙ্গহানি হয়েই চলেছে।
পরিবহন পরিচালনাও একধরনের বিজ্ঞান। পথচারী ও চালকের মনস্তত্বও চলে বিজ্ঞানের নিয়মেই। সেই জায়গায় না বদলালে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামসুল হক বলেন, “সে যদি ভদ্র হয়েও গাড়িটা চালাতে চায়, দেখা যায় তার ইনকাম কম। আর যে অভদ্রভাবে চালালো তারই ইনকামটা বেড়ে গেছে। সুতরাং এক করিডোরে এক অপারেটর, পুলিশও লাগবে না ট্রেনিংও লাগবে না। যেটা হাতিরঝিলে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “মহাসড়ক টাচ না করে ছোট যানবাহনগুলো পাসিং হবে এটি যদি নিশ্চিত করতে পারি, জাতীয় মহাসড়কগুলোর পাশে যদি সার্ভিস লেন নির্মাণ করতে পারি- এই তিনটা ওষুধেই সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানী অর্ধেকের বেশি নীচে নামিয়ে আনা যাবে।”
এখন পর্যন্ত বেপরোয়া গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সড়কে গাড়ির স্প্রিড পরিমাপ ব্যবস্থার বিকাশ হয়নি। দুর্ঘটনায় দায়ী সড়কের ব্ল্যাকস্পটগুলোও চিহ্নিত। কিন্তু নেই ত্রুটিগুলো সারানোর কোনো উদ্যোগই।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, “গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সেটা অর্জন করতে একেবারেই আমরা পারিনি।”
অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধে রুটভিত্তিক সীমিত অপারেটরের গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠাও বড় ব্যর্থতা, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্যক্তি জীবনে অনেক ব্যস্ততা থাকবে, মানুষের সময়ের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু একটি বারেই কি ভেবে দেখেছি যে সবকিছু ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান হলো মানুষের জীবন। জীবনই যদি না থাকে তাহলে এতসব ব্যস্ততা কোন কিছুরই কোন মূল্য থাকবে না। আমার একটিমাত্র ভূল পুরো পরিবার, রাষ্ট্রের, জনগণের বড় রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ব্যক্তি পর্যায়ের সতর্কতা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা কিছুতেই সম্ভব নয়।
এএইচ