মায়ের দুঃখ ভোলাতে পুতুল সন্তান!
প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ৬ জুলাই ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৮:৫৬ এএম, ৭ জুলাই ২০১৭ শুক্রবার
দক্ষিণ কলকাতার এক মনোবিদের চেম্বার। বিকেল। দৈনন্দিন রুটিন মতো রোগী দেখছেন তিনি। কিন্তু সে দিন এমন এক কেস হ্যান্ডেল করেছিলেন যা তাকেও চমকে দিয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই মনোবিদ জানাচ্ছেন, এমন অনেক কেস হ্যান্ডেল করেছেন যেখানে পুতুল নিয়ে ভুলে থাকেন মা। পুতুলকেই নিজের সন্তান মনে করেন। তীব্র মানসিক আঘাত থেকে তাদের ওই অবস্থা। কিন্তু সেটা কখনওই সর্বজনীন অভ্যেস নয়। তবে তার ওই রোগী এমন এক পুতুলের ছবি দেখেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় যাকে নকল ভাবাটাই কঠিন। তারও তেমনটাই চাই! কেমন সেই পুতুল?
লালচে গায়ের রং। হালকা কোঁচকানো গায়ের চামড়া। মাথা ভর্তি চুল হয়েছে তার…। নিশ্চিন্তের ঘুম দিচ্ছে সে। এই পর্যন্ত এক্কেবারে ঠিক। দেখে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই কয়েক ঘণ্টা মাত্র বয়স শিশুটির। আপাতত: হয়ত ঠিকানা নার্সিংহোম। দিন কয়েকের মধ্যেই মায়ের সঙ্গে বাড়ি চলে যাবে। এখানেই ভুলটা করলেন আপনি। শিশুটি তো মানুষই নয়। মায়ের সঙ্গে বাড়ি যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে?
অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন, এমন ভুল কথা লেখা হল কী করে? না! ভুল নয়। এখনও হলফ করে বলা যায়, শিশুটি মানুষ নয়। তা হলে?
বলতে পারেন এটি একটি পুতুল। প্ল্যাটিনাম কিওর্ড সিলিকন (platinum cured silicone) দিয়ে তৈরি। কিছু কিছু কসমেটিক সার্জারির ক্ষেত্রে এই সিলিকন ব্যবহার করা হয়। দেখতে আসল মানব শিশুর মতোই। দূর থেকে তো বটেই, সামনাসামনি দেখেও চট করে তফাত্ বের করা মুশকিল। কারণ দৈর্ঘে, প্রস্থে এমনকি ওজনেও আসলের সঙ্গে এক্কেবারে মানানসই!
তৈরি হয় কোথায়?
ঠিকানা স্পেন। উত্তর স্পেনের বিলাবাও শহর থেকে ১৫ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে লিওনা মিউনিসিপ্যালিটি। সেখানেই রয়েছে এই ‘ক্লোন’ ফ্যাক্টরি। ডিরেক্টর ক্রিস্টিনা ইগনেসিয়াসের দাবি, পৃথিবীতে একমাত্র তার কারখানা থেকেই এহেন বেবি ক্লোন তৈরি হয়। কখনও অর্ডার অনুযায়ী বেবি ডল তৈরি করে দেন ক্রিস্টিনার টিম। সেখানে রেফারেন্স হিসেবে থাকে আসল কোনও মানব সন্তানের ছবি। কখনও বা ক্রেতা নিজের পছন্দ মতো বেবি ডলের ত্বক, চুলের রঙ বা হাত-পায়ের গড়ন অর্ডার দেন। কখনও বা ক্রিস্টিনা নিজের শিল্পসত্তা ফুটিয়ে তোলেন বেবি ডলের মধ্যে।
শুরু কীভাবে?
সাত বছর আগে এই ধরনের স্পেশাল এফেক্টস ওয়ার্কশপের কাজ শুরু করেন ক্রিস্টিনা। ২০১৩ থেকে শুরু করেন তাদের বেবি ক্লোন ব্র্যান্ড। স্পেনে এই ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউটার সিলভিয়া অর্টিজের মাথায় প্রথম এই ‘হাইপার রিয়্যালিস্টিক’পুতুল তৈরির আইডিয়া আসে। তিনি ক্রিস্টিনার সঙ্গে তা শেয়ার করেন। ক্রিস্টিনা ভেবেছিলেন, এটা খুব অদ্ভুত ধারণা। সিলিকন দিয়ে যে বেবি ডল তৈরি করা যায়, সেটা তিনি ভাবেননি। কেন মানুষ এই ধরনের পুতুল পছন্দ করবেন, সেটাও তাঁর প্রশ্ন ছিল। একটা-দু’টো করে এ ধরনের পুতুল তৈরি করার পর দেখা গেল, সেগুলো বিক্রি হচ্ছে। চাহিদাও ভালো। তখনই এটা নিয়ে বড় আকারের ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন তিনি। সিনেমায় ব্যবহার হয় এমন কিছু টেকনিকও এই ধরনের পুতুল তৈরিতে কাজে লাগান ক্রিস্টিনা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
আরকে/ডব্লিউএন