ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

জাঁকজমক আয়োজনে হাবিবা গেল শ্বশুর বাড়ি

প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০২:০৩ পিএম, ১৫ জুলাই ২০১৭ শনিবার

জাঁকজমক আয়োজনে সম্পন্ন হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের হাবিবা আক্তারের বিয়ে। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে হাবিবার বাবার ভূমিকায় থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের উপস্থিতে কাজী আবু জামাল হাবিবা-জাকারিয়ার বিয়ে পড়ান। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয় ২ লাখ ১ হাজার টাকা।

হাবিবা-জাকারিয়ার আলোচিত এ বিয়েতে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে বরযাত্রী নিয়ে শিশু পরিবারে হাজির হন বর জাকারিয়া আলম। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত ও শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগম বরকে বরণ করে নেন।

বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ সুপারের সরকারি বাংলো থেকে হাবিবাকে জাকারিয়ার হাতে তুলে দেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী ফারহানা রহমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

শিশু পরিবারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সম্পন্ন হয় হাবিবার গায়েহলুদ। গায়ে হলুদ উপলক্ষে শিশু পরিবারের পুরো এলাকা আলোকসজ্জা করা হয়।

মা-বাবা হারিয়ে ছয় বছর বয়সে হাবিবা আক্তার আশ্রয় নিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরকারি শিশু পরিবারে। প্রায় এক যুগ কেটেছে এখানে। এবার ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তাকে শিশু পরিবারে ছাড়তে হবে। কিন্তু হাবিবাকে যেনতেনভাবে বিদায় না দিয়ে তার জন্য বর ঠিক করে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান অনাথ হাবিবার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তার বর ঠিক করেন। বর জাকারিয়া আলমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সোনারগাঁ গ্রামে।

জাকারিয়াকে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি দিয়েছেন এসপি মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান জানান, বিয়েতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক দেবেন সোনার গয়নার সেট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ঘর নির্মাণ করে দেবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে আরও কিছু স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজ, আলমারি ইত্যাদি।

হাবিবার কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন সরকারি শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগম।

এসএসসি পাশ হাবিবার বিয়েকে ঘিরে গত এক সপ্তায় দফায় দফায় সভা হয়েছে। বিয়ের রঙ্গিন নিমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে বলেও এসপি মিজানুর জানান।

হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হকের মৃত্যুতে মন্ত্রী তার সফরসূচি বাতিল করেন।

শিশু পরিবারের উপতত্ত্বাবধায়ক রওশন আরা বেগম বলেন, কয়েক মাস আগে হাবিবার বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হয় তখন নীতিমালা অনুযায়ী তাকে শিশু পরিবার ছাড়ার বিষয়টি জানানো হয়। এক পর্যায়ে হাবিবার মামা-মামিকে খবর দেওয়া হলো হাবিবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মামা-মামি এসে নিয়ে যেতে চাইলে হাবিবার বিদায়বেলায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

‘‘ওই সময় হাবিবা আমার ওড়না ধরে রেখেছিল। তখন আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি। আমিও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। তখন বিষয়টি পরিচালনা কমিটিকে জানাই। সিদ্ধান্ত হলো হাবিবা আপাতত শিশু পরিবারেই থাকবে। তাকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হবে।”

রওশন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তারপর তিনিই সব করলেন।

তিনি বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব নেন। এগিয়ে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার। হাবিবার বিয়ে নিয়ে তারা কথা বলেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। বিয়ের কাজে যুক্ত হন সমাজসেবা অধিদপ্তর ও সরকারি শিশু পরিবার সংশ্লিষ্টরা।

আয়োজকরা জানান, বিয়েতে বরযাত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য খাবারের তালিকায় ছিল আট পদের খাবার। এর মধ্যে মুরগির রোস্ট, পোলাও, টিকা, গরুর মাংস, সবজি, ডাল, সালাদ ও মিষ্টি।

ডব্লিউএন