জীবনের শেষ সাঁতারেও রেকর্ড গড়লেন ক্ষিতিন্দ্র
প্রকাশিত : ০৯:৫৭ পিএম, ৬ আগস্ট ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৩:৩৫ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৭ মঙ্গলবার
এটাই জীবনের শেষ সাঁতার। আর কোনোদিন নদীতে রেকর্ড গড়ার জন্য সাঁতরাবেন না মাত্র ৬৬ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিন্দ্র বৈশ্য। এবার তিনি ১৪৬ কিলোমিটার নদীপথ সাঁতরে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে নতুন রেকর্ড গড়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে নেত্রকোনার মদন উপজেলার এই কৃতী সাতারু ফুলপুর উপজেলার কংস নদের সরচাপুর সেতু থেকে সাঁতার শুরু করেন। দীর্ঘ ১৪৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন মাত্র ৪৩ ঘণ্টায়। গন্তব্য ছিল নেত্রকোনার মদন উপজেলার মগড়া সেতু পর্যন্ত।
ফুলপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি যৌথভাবে এই সাঁতারের আয়োজন করে।
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কংস নদের সরচাপুর সেতু থেকে শুক্রবার বিকেল ৬টা ৫০ মিনিটে সাঁতার শুরু করেন তিনি। নেত্রকোনার মদন উপজেলার মগড়া সেতু পযর্ন্ত ১৪৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রোববার বেলা ২টা ১৫ মিনিটে পৌঁছেছেন মদন উপজেলার মগড়া সেতু পর্যন্ত।
মদন মগড়া সেতুতে পৌঁছার পর তাকে মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই দীর্ঘ পথ সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার পরও তিনি সুস্থ।
রোববার বেলা সোয়া ২টায় যখন তিনি তার লক্ষ্য স্থান মদনের সেতুতে পৌঁছেন তখন উপস্থিত ছিলেন মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ালিউল হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আকন্দ, মদন পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার শামীম ও মদনের সাবেক পৌর মেয়র দেওয়ান মোদাচ্ছের হোসেন শফিক প্রমুখ।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ সাঁতার শুরুর সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
বীর এই মুক্তিযোদ্ধা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
সাঁতরানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ১৯৭০ সালে। ওই সময় সিলেটের ধুপাদীঘি পুকুরে অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। পরে একই বছর মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে তিনি ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে এলাকায় আলোচিত হন। এটিই তার প্রথম সাঁতার।
পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারি হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন।
জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করায় ওদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ডাকসুর উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে স্মারক ফলক নির্মাণ করা হয়।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তার একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতেরও দূরপাল্লার সাঁতার প্রর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি।
১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গীপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য জানান, তিনি ৬৬ বছর বয়সে ৪৩ ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার নদী সাঁতরে বিশ্বে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তাকে যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ডব্লিউএন