ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সিদ্দিকুরের প্রতিবেদন কাল

‘চাকরি চাই না, চোখের আলো ফিরিয়ে দিন’

প্রকাশিত : ০১:০৩ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:২২ পিএম, ৮ আগস্ট ২০১৭ মঙ্গলবার

‘চোখের আলো ফিরিয়ে দিন, আমি পৃথিবীর আলো দেখতে চাই, প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ চাই। আমার সরকারি চাকরির দরকার নেই। প্রয়োজনে আমি যেকোনো কাজ করে খাব। গায়ে খাটব। তা-ও আমি অন্তত একটা চোখের আলো ফেরত চাই।’
ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে চিকিৎসাধীন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর এভাবেই তাঁর বন্ধু শেখ ফরিদের কাছে সোমবার এই আকুতি জানান। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সিদ্দিকুর দেশে ফেরার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে তাঁর চাকরির ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের বাঁ চোখেও দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ ছাড়া আপাতত তাঁর চোখ প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনাও নেই। ফলে সিদ্দিকুর বেশ বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তার বন্ধু শেখ ফরিদ। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ১১ জুলাই শুক্রবার সিদ্দিকুর দেশে ফিরবেন।
শেখ ফরিদ জানান, ডাক্তাররা বৃহস্পতিবার আবার সিদ্দিকুরকে দেখবেন। আগামী চার-পাঁচ সপ্তাহ চোখে ওষুধ দেওয়া আর পর্যবেক্ষণে রাখা ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা নেই। চোখে আলো ফিরবে কি না, এর পরই তা বোঝা যাবে। দেশের হাসপাতালে রেখেও এ পর্যবেক্ষণ চলতে পারে। তাই সিদ্দিকুরকে দেশে ফিরিয়ে এনে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রাখা হবে।
শেখ ফরিদ আরো জানান, চেন্নাইয়ের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, রেটিনা মূলত চোখে আলো দেয়। সেই রেটিনার ৯০ শতাংশই একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে সিদ্দিকুরের। এ ছাড়া বেশির ভাগ নার্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে চোখ প্রতিস্থাপনের সুযোগও নেই। যদি পরে আরো উন্নত চিকিৎসা করা যায়, তাহলে বোঝা যাবে প্রতিস্থাপনের কোনো সুযোগ আছে কি না।
গত ২০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা চেয়ে বিক্ষোভের সময় শাহবাগে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে সিদ্দিকুরের দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার দিনই তাঁকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকায় অস্ত্রোপচারের পর সিদ্দিকুর রহমানের ডান চোখে দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে জানান চিকিৎসকরা।

তদন্ত রিপোর্ট কাল

সিদ্দিকুরের ওপর হামলার ঘটনায় গঠিত দুই তদন্ত কমিটির পৃথক দুটি প্রতিবেদন কাল বুধবার প্রকাশ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিঞা সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করবেন। তদন্তকাজে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার সূত্রে মঙ্গলবার এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে যেসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। একারণে রমনা বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পর আজ রাতেই ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পেশ করা হবে। কাল বুধবার সেটি প্রকাশ করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বিধি-বহির্ভূত অ্যাঙ্গেলে’ সিদ্দিকুরের চোখে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।টিয়ার শেল ছুড়তে গিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তার অসতর্কতার কারণেই সিদ্দিকুরের চোখের এ অবস্থা। যিনি টিয়ারশেল মেরেছেন তিনি দাঙ্গা পুলিশের সদস্য। তার বিষয়ে সবকিছুই দুই তদন্ত রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওই সদস্য যার কমাণ্ডের আওতায় ছিলেন, সেই কর্মকর্তাকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একইভাবে রমনা বিভাগ  ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম)  অন্তত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা খুঁজে পেয়েছেন তদন্তকাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উচ্চতর কমিটি ও রমনা জোন পুলিশের তদন্ত কমিটি- এই দুই কমিটিতেই তদন্তকাজে যুক্ত ছিলেন রমনা বিভাগ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আশরাফুল আলম। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে গণমাধ্যমে যেসব রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। প্রকৃত তথ্য কমিশনার মহোদয় বুধবার প্রকাশ করবেন।