ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

চুরির অপবাদে শিশুকে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন

প্রকাশিত : ০৫:৪৩ পিএম, ১০ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:১৪ এএম, ১১ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার

ছবি : সংগৃহিত

ছবি : সংগৃহিত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় মুঠোফোন চুরির অপবাদ দিয়ে দুই শিশুকে আমগাছের ডালে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়াজুড়ে তোলপাড় চলছে। পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।  

প্রত্যক্ষদর্শী ও দুই শিশুর পরিবারসূত্র জানায়, ৪-৫দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার চরমণ্ডলপাড়া এলাকার রূপালী নামে এক নারীর মুঠোফোন চুরি হয়। ওই ঘটনায় তারা একই এলাকার ৭ বছরের এতিম শিশু জুয়েল ও আসিফকে সন্দেহ করে।

বুধবার বিকালে একই এলাকার প্রভাবশালী তানজিল ও মীর আক্কাস ওরফে মিরু তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তানজিলের শ্বশুরবাড়ির সামনে আমগাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে তাদের ঝুলিয়ে বেধরক পেটায়।

এসময় শিশু দু`টি মোবাইল চুরি করেনি বলে শত আকুতি করলেও নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। পরে শিশু আসিফের পরিবারের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে আসিফকে ছেড়ে দেয় নির্যাতনকারীরা। জুয়েল গুরুতর আহত হয়ে পড়লে রাতে স্থানীয়রা তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক হুসাইন মহম্মদ শিহাব জানান, শিশুর শরীরের কয়েকটি স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।

স্থানীয় যুবক আশরাফুল জানান, তিন বছর আগে জুয়েলের বাবা সিরাজুল মারা যায়। মা দেশের বাইরে থাকে। রাজমিস্ত্রি বড় ভাইয়ের কাছে থেকে সে লালনশাহ মাজারের সামনে একটি দোকানে কাজ করতো।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার নুর মহম্মদ জানান, নির্যাতনের ভিডিওটি বুধবার রাতেই দেখেছি। এ ব্যাপারে নির্যাতিত ওই শিশুর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

কুষ্টিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুয়েল জানায়, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে তাকে এক যুবক দোকান থেকে ধরে তানজিলের বাড়ির সামনে নিয়ে যান। তার দুই হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে আমগাছের সঙ্গে টানানো হয়। মোবাইল ফোন সেট চুরির অভিযোগ তুলে তানজিল আমগাছের ডাল ভেঙে তাকে মারতে থাকেন।

জুয়েল জানায়, মারধরের সময় আশপাশের লোকজন দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ কিছু বলেনি। মারধরে তানজিলের সঙ্গে মিরু ও এক নারী যোগ দেন।

জুয়েল বলে, ‘আমাকে অনেকক্ষণ ধরি মারিছে। আমি কিছু জানি না বললেও তারা থামেনি। প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল মান্নান বলেন, তিনি ঠেকাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বাধা দেন তানজেল। চোরের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধাক্কা মারেন।

খবর পেয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে যান জুয়েলের ভাই রব্বেল। তিনি জুয়েলকে উদ্ধার করে সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেন।

এ ঘটনায় বুধবার রাতেই কুমারখালী থানায় মামলা হয়। কুমারখালী থানা পুলিশ এ ঘটনার ছেঁউড়িয়ার চর মণ্ডলপাড়ার তানজিল ও তার শাশুড়ি রোকেয়া খাতুনকে বুধবার রাতেই গ্রেফতার করেছে। তবে এ ঘটনার জন্য দায়ী মীর আক্কাস ওরফে মিরুকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

কুমারখালী থানার ওসি আব্দুল খালেক বলেন, নির্যাতিত শিশুটির পরিবার মামলা করতে চায়নি। আমরা তাদেরকে থানায় ডেকে নিয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়ে মামলা করিয়েছি। নির্যাতিত শিশু জুয়েলের বড় ভাই রবজেল খান বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় বৃহস্পতিবার এ মামলা দায়ের করেন বলে জানান ওসি।

//এআর