ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

৩৫ বছর ধরে নিম্নবিত্তদের জন্য ষ্টারের ‘ষ্টাফ খাবার’

ইয়াসির আরাফাত রিপন

প্রকাশিত : ০৪:৫৬ পিএম, ১২ আগস্ট ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৪:৫২ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

আজ থেকে ৫২ বছর আগে এক হাজার বর্গফুট জায়গায় মীর মমতাজ উদ্দিন চালু করেছিলেন স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। পুরান ঢাকার ঠাটারীবাজার থেকে ১৯৬৫ সালে যাত্রা শুরু করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ডানা মেলেছে স্টার। অভিজাত শ্রেণিকে টার্গেট করে রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু হলেও মানবসেবার বিষয়টি ভুলে যাননি মীর মমতাজ উদ্দিন।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ষ্টার হোটেলের শাখা বর্তমানে ১৪টি। এর মধ্যে জয়কালি মন্দির রোডের হোটেল সুপার, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড, বনানী, এলিফ্যান্ট রোড, জনসন রোড হয়ে মাস তিনেক আগে  চালু হয়েছে জজ কোর্টের সামনে। এটিই স্টারের সর্বশেষ শাখা।

এই রেস্তোরাঁয় সাধারণত আনাগোনা থাকে সমাজের অভিজাত শ্রেণির মানুষের। সময়ের সঙ্গে বেড়েছে গ্রাহক সংখ্যাও। যেখানে দুপুর কিংবা রাতের খাবার খেতে ব্যয় করতে হয় ১৪০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বা তারচেয়ে বেশি। কিন্তু এই স্টারেই রয়েছে নিম্নবিত্ত মানুষের অল্প খরচে পেটপুরে খাবারের ব্যবস্থা। ‘স্টাফ খাবার’ নামে মাত্র ৩৫ টাকায় নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য খাবার বিতরণ করে স্টার।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টারের ১৪টি শাখাতেই দুপুর ও রাতের জন্য থাকে ‘স্টাফ খাবার’ । ইদানীং শুধু নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষই নন, মধ্যম আয়ের মানুষও এই ‘স্টাফ খাবার’ খাবার খান।

হোটেল সংশ্লিষ্টরা ইটিভি অনলাইনকে জানান, ১৯৮২ সাল থেকে স্টার হোটেলে চালু আছে ‘স্টাফ খাবার’। মীর মমতাজ উদ্দিন ‘স্টাফ খাবার’ চালু করেছিলেন দিনমজুরদের কথা ভেবে। প্রথমে এটা শুরু হয়েছিল নাশতা দিয়ে। তখন রুটি কিনতে হতো, ভাজি দেওয়া হতো বিনামূল্যে। এরপর এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৫ টাকায় দুপুর ও রাতের খাবার দেওয়া হয় নিয়মিত। যেখানে ওই টাকার মধ্যে ইচ্ছেমতো ভাত ও ডাল খেতে পারেন ক্রেতারা। পাশাপাশি ভাজি ও মাছ, ডিম বা গিলা কলিজার যেকোনো একটি পদ দেওয়া হয়।

এই সুবিধা সব শাখাতেই চালু আছে। তবে জায়গা স্বল্পতার কারণে স্টারের কারওয়ান বাজার শাখায় স্বল্প পরিসরে ব্যবস্থা রয়েছে এ খাবারের। বাকি শাখাগুলোতে গ্রাহকদের জন্য পৃথক বসার জায়গা রয়েছে।

স্টারের কারওয়ান বাজার শাখার ম্যানেজার আবু তাহের ইটিভি অনলাইনকে বলেন, রেস্তোরাঁয় এসে ‘স্টাফ খাবার’ বললেই এই খাবারটা পাবেন দিনমজুর বা স্বল্প আয়ের ক্রেতারা। তবে এজন্য তাদের ৩৫ টাকা পরিশোধ করে একটা টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। এই টোকেন দেখিয়েই তাদের খাবার দেয়া হয়। এই খাবারের জন্য তাদেরকে এক বাটি তরকারির (ডিম/মাছ/গিলা-কলিজা) সঙ্গে ভাত এবং ডাল দেওয়া হয় প্রয়োজনমত।

‘স্টাফা খাবার’ এর বিষয়ে সাইদুল নামের কারওয়ান বাজার ষ্টারের এক গ্রাহক বলেন, এখানে খাবারের মান ভালো, দামও কম। তাই এখানে নিয়মিত খেতে আসি। অপর গ্রাহক স্বপন বলেন, আমাদের আয় কম তাই এখানে আসি। গরিব মানুষদের জন্য হোটেলটি যে ব্যবস্থা করেছে সেটি মহান কাজ। এসময় তিনি অন্য হোটেলগুলোতে স্টাফ খাবার চালুর দাবি জানান।

ষ্টারের এলিফ্যান্ট রোড শাখা ম্যানেজার রানা জানান, সব শাখার মতো তাদের শাখায়ও ‘স্টাফ খাবার’ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চালু আছে। সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যম আয়ের মানুষও স্টাফ খাবার খান।

রান্নার মেনুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ইটিভি অনলাইনকে বলেন, স্টাফ খাবারের জন্য আলাদাভাবে রান্না করা হয়। বিশেষ করে তরকারি। তবে ভাত, ডাল থাকে সবার মতো। গ্রাহক ৩৫ টাকা দিয়ে টোকেন নিলেই এক বাটি তরকারির সঙ্গে ভাত, ডাল ফ্রি দেয়া হয়। তরকারি তাদের পরিমাণ মতো দেয়া হয় যাতে তারা পেটপুরে খেতে পারেন।

স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের অন্য শাখায় কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন দুপুরের খাবারের জন্য দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ‘স্টাফ খাবার’ দেয়া হয়। আবার রাতের খাবারের জন্য রাত ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘স্টাফ খাবার’ এর ব্যবস্থা থাকে।

আর/ডব্লিউএন