ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

কারিপাতার গুনাগুণ

প্রকাশিত : ০৮:৪৪ পিএম, ১২ আগস্ট ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৫:১৯ পিএম, ১৮ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার

কারি পাতা সাধারণত খাবারে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয় বেশি। নিম পাতার মতো দেখতে এ পাতা মিষ্টি নিম কিংবা বারসুঙ্গা নামেও পরিচিত। এর পাতা ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। প্রায়শই ঝোল জাতীয় রান্নায় ব্যবহার করা হয় বলে সাধারণত একে ‘কারি পাতা’ বলা হয়।

কারি পাতা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, প্রোটিন, আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন সি, বি, এ, ই। এসব কারণে এ পাতা ব্যবহার করে খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়ায় এবং এর মাধ্যমে রূপচর্চাতেও বহু উপকার পাওয়া যায়। চকচকে সবুজ কারি পাতা কোলেস্টেরল এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার পরিমান  ঠিক রাখে। লিভারের জন্য কারি পাতা বেশ উপকারি। এবং  হজমেও সহায়তা করে।

এ পাতাটি রূপচর্চায় ব্যবহার করেও যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়। এ বিষয়ে দিল্লীর সানশাইন ক্লিনিকের ড. নম্রতা ঘাই এর বরাত দিয়ে এনডিভির এক প্রতিবেদনেবলা হয়েছে, কারি পাতা শরীরে আয়রন এর জন্য একটি ভালো উৎস, এছাড়াও হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে এর ভূমিকা অপরিসীম। দক্ষিণ ভারতের নারীদের চুল অনেক দীর্ঘ, পুরু এবং  মজবুত ও হয় এই কারি পাতার কারণে।

কারি পাতার অনেক স্বাস্থ্যের উপকারিতা আছে। তার কিছু কিছু নিচে উল্লেখ করা হল-

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কারি পাতা

পেটে ব্যথা কিডনির সমস্যার পিছনে অন্যতম কারণ হতে পারে। কারি গাছের বাকল বদহজম, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য পেটের সমস্যার থেকে ত্রাণ পেতে সাহায্য করে। আপনি যদি পিত্তজনিত বমিতে ভুগে থাকেন, তাহলে কারি পাতা আপনার জন্য একটি বিস্ময়কর প্রতিকার হতে পারে। গর্ভাবস্থার পরে নারী শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের পিছনে এই বমি-বমি ভাব দায়ী। আপনি কারি পাতা সেদ্ধ করা পানি পান করতে পারেন, অস্বস্তি এবং সকালে অসুস্থতা কমানোর জন্য গর্ভবতী নারীদের পক্ষে এটি সত্যিই কার্যকর হতে পারে। তাছাড়া আপনি চাইলে কারি পাতার চা খেতে পারেন রোজ। কাজেই আপনার খাদ্য তালিকায় রোজ কারি পাতা রাখুন।

চুলের যত্নে কারি পাতা

কারি পাতা চুলের রঙের উন্নতিতে সাহায্য করে। চুলের তেলে কয়েকটি কারি পাতা যোগ করুন তারপর তেল ফুটিয়ে নিন এবং মাথার খুলির উপর এটি লাগান। এটি চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে। কারি পাতা চুলের অকালপক্বতা প্রতিরোধ করে। কারি পাতা চুলের যত্নের জন্য ভালো কাজ করে। খাবার থেকে ফেলে না দিয়ে পাতাগুলি নিয়ে নিন। নয়তো সকালে প্রাতরাশে ক্যারি পাতার পাউডার খেতে পারেন।এছাড়া আমলকি, শিকাকাই এবং মেথি ও কারি পাতা চুলের জন্য বেশ উপকারি। কচি-কারি পাতার পেস্ট আপনার চুলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কাজ করে। মেথি বা মেথি বীজ চুলের উপকারী। এটি আপনার চুলকে একটি দর্শনীয় উজ্জ্বল করে, এমনটাই বলেছেন ড. নম্রতা।

টক দই আর কারিপাতা

চুলের যত্নে ব্যবহৃত উপাদানের মধ্যে কারিপাতা আর টক দইয়ের ব্যবহার সবচেয়ে অন্যতম। কারি পাতা এবং দইয়ের একটি পেস্ট তৈরি করতে পারেন (আপনি যদি চান তবে কয়েকটি নীম পাতা যোগ করুন), তেলের কয়েকটি ড্রপ এবং এটি একটি মাস্ক হিসাবে প্রয়োগ করুন। এই মিশ্রণ ১ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় মাথায় লাগিয়ে রেখে তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আমলা, শিকাকাই, ভাইরাসরাজ এবং মেথির মতো উপাদান এখন ভারতের নানা হারবাল ওষুধ ও পণ্যগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিশুদ্ধতার কারণে এগুলো ব্যকহার করে অনেকেই উপকৃত হয়।

দিল্লীর চর্ম ও চুল বিশেষজ্ঞ ড. দেপালি বলেছেন, আমার মতে কারি পাতা আপনার নিয়মিত চুল যত্নে বিশেষ উপাদান হতে পারে। তাছাড়া চুলে তেল বা মাস্ক এর ব্যবহারে কোনো ক্ষতি নেই।

এছাড়ও কারি পাতা আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের চুল ও স্বাস্থের জন্য অনেক উপকারি-

  • কারি পাতা দৃষ্টিশক্তি উন্নতিতে সহায়ক হয়। চোখের ছানি প্রতিরোধ করতে পারে।
  • কারি পাতা বদহজম এবং বমি বমি ভাবের প্রতিকার করে। কারি পাতা থেকে রস বের করে নিন এবং এটি তাজা লেবুর রস এবং চিনির সঙ্গে মিশ্রিত করুন। এটা বমি বমি ভাব এবং বদহজম চিকিৎসার জন্য সাহায্য করে।
  • কারি পাতা ডায়রিয়ার জন্য ভালো প্রতিকার। কারি পাতায় কার্বজোল আলকালয়েড থাকে যা ডায়রিয়ার চিকিৎসায় প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। ডায়রিয়ার চিকিৎসা করতে, কারি পাতা নিন এবং সরাসরি এর পেস্ট বা রস তৈরি করুন।
  • এগুলি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আপনার শরীরকে চর্বিমুক্ত করতে সাহায্য করে।
  • কারি পাতা কেমোথেরাপি এবং বিকিরণ থেরাপির জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে।
  • এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো খাবার। এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাতরাশে কারি পাতার পাউডার ব্যবহার করা ভালো।
  • কারি পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যালকালয়েড রয়েছে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর পক্ষে এবং পাচনতন্ত্র উন্নত করার ক্ষেত্রে এটি বেশ ভালো।

 

ডব্লিউএন