ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৭ ১৪৩১

বর্ষায় থাকুন পরিপাটি

প্রকাশিত : ০৫:২৬ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০৪:০৭ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৭ বুধবার

এই সময়ে আকাশের মন বোঝার সাধ্য আছে কার? ঝলমলে রৌদ্রজ্বল আকাশটা মুহূতের্ই ঢেকে যেতে পারে কালো মেঘে। মেঘ-রোদের এই লুকোচুরি খেলার মাঝেই কাটাতে হবে পুরো বর্ষাকাল। ভেজা আকাশ, কর্দমাক্ত চারপাশ নিয়েই আমাদের বর্ষাযাপন। এ ঋতুতে আবহাওয়ায় থাকে স্যাঁতসেঁতে ভাব। যার প্রভাব পড়ে আমাদের দেহমনে। তাই এ সময় সতর্কতা অবলম্বন করে চলাটা খুব জরুরি। একটু বাড়তি যত্ন ও সচেতনতাই পারে বর্ষার গুমোট বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে আপনাকে চাঙা রাখতে। 

পোশাকে পরিপাটি
ড্রয়ারের তাক খুলেই মেজাজ খারাপ। পরিষ্কার করে শুকিয়ে রাখা সাধের পোশাকগুলোর এ কি হাল! কড়কড়ে পোশাকটা কেমন যেন নেতিয়ে গেছে। উৎকট গন্ধ বেরোচ্ছে। পোশাকের ওপরে জমে গেছে ছিটা দাগ। ভেজা দিনের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই ঝামেলায় পড়েন অনেকেই। বাইরে যাওয়ার আগমুহূর্তে এমন ঝামেলা এড়াতে তাই আগের দিনই পোশাকটা বের করে নিতে পারেন।


ড্রয়ারে রাখা পোশাকগুলো মাঝেমধ্যে বাইরে খোলা জায়গা কয়েক ঘণ্টা ছড়িয়ে রেখে দিতে পারেন। মাঝেমধ্যে রোদের দেখা মিললে একটা একটা করে রোদের তাপে দিতে পারেন। এতে পোশাকটা ভালো থাকবে। আর বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই পোশাকটা শুকিয়ে তারপর ড্রয়ারে রাখুন।
এই সময়ে পোশাকটা যতেœ রাখতে কী করতে পারেন সে বিষয়ে কথা হয় ফ্যাশন ডিজাইনার ও লন্ড্রি কর্মীদের সঙ্গে। কীভাবে যতœ নেবেন বাদলা দিনের পোশাক-আশাক, দেখে নিন তারই কিছু পরামর্শ-

পোশাকের যত্ন


*রোদের দেখা পেলেই পোশাকগুলো হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বা তারের ওপরে মেলে শুকিয়ে নিন।
* টানা কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি চললে কাপড়গুলো ঘরের মধ্যে আলনায় ছড়িয়ে দিয়ে দরজা-জানালা খোলা রাখুন। অথবা বাইরে যাওয়ার আগে মাঝেমধ্যে আলমারির পাল্লা খুলে রেখে দিলে বাতাস চলাচল করতে পারবে।
* ফ্যানের নিচে কাপড় রেখে বাতাসে শুকিয়ে নিতে পারেন।
* পরিষ্কার শুকনো কাপড়ের সঙ্গে ময়লা কাপড় রাখবেন না, এতে পরিষ্কার কাপড়ের ওপরে সহজেই ছিটা দাগ পড়বে।
* বাইরে থেকে ভেজা কাপড়ে আসলে অবশ্যই সেটা ভালো করে ধুয়ে বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।
* এই সময়ে যতটা সম্ভব মোটা কাপড়ের পোশাক এড়িয়ে চলুন। জিনস বা খাদি ধরনের কাপড় হলে শুকাতে সময় লাগবে।
* সাদা পোশাক পরে বাইরে গেলে যদি বৃষ্টির ছাঁট লেগে যায় তাহলে ঘরে ফিরেই শুকিয়ে নিন। না হলে কাপড়ে পানির স্থায়ী দাগ পড়ে যাবে।
* বাইরে যাওয়ার সময় ছাতা বা বর্ষাতি সঙ্গে রাখুন, এতে নিজের পাশাপাশি পোশাকও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাবে।
* সম্ভব হলে অতিরিক্ত দুই একটা পোশাক অফিসের ড্রয়ারে রেখে দিতে পারেন। কাকভেজা হয়ে তো অফিস করতে পারবেন না।
* পোশাকের গুমোট ভাব কাটাতে চাইলে বাজার থেকে সুগন্ধি সাবান কিনে ওয়্যারড্রোব বা আলমারির মধ্যে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়া কমলা বা মাল্টার খোসার ওপর লবঙ্গ দিয়ে গোটা কমলাটা ড্রয়ারের ভেতরে রাখতে পারেন এক দিন। তাতে কাপড় থেকে সুগন্ধ ছড়াবে।
বেছে নিন মৌসুম উপযোগী পোশাক
*সুতি কাপড় ঘরে পরুন ঠিক আছে; কিন্তু বাইরে বেরুনোর সময় একে এড়িয়ে চলাটাই ভালো। কেননা সুতি কাপড় ভিজে গেলে সহজে শুকায় না। কাদা লাগলে দাগ ওঠানো মুশকিল হয়ে পড়ে।
*অন্যদিকে সিনথেটিক কাপড় ভিজে গেলেও পানি শুষে নেয় সহজেই। হালকা বাতাসে শুকিয়ে প্রায়। কাদা-মাটি লাগলে ওঠাতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয় না। তাই এ সময় সিনথেটিক কাপড় বেছে নিতে পারেন।
*বর্ষায় প্রকৃতি সাজে গাঢ় রঙে। তাই এ সময় `গাঢ়` রঙকেই প্রাধান্য দিন। সেটি হতে পাওে কমলা, লাল, সবুজ, নীল এসব। গাঢ় রঙে কাদা-মাটি লাগলে চট করে চোখে পড়ে না।


*এই সময়ে ভুলেও সাদা রংয়ের পোশাক পড়তে যাবেন না।
*অফিসগামী নারীরা এ ঋতুতে সালোয়ার-কামিজই নিত্যসঙ্গী করুন। শাড়ি পরে রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে হাঁটা কষ্টকর। অন্যদিকে সালোয়ার-কামিজ পরে হাঁটা অনেকটা স্বস্তিদায়ক।
* পুরুষরা `জিন্স`কে এড়িয়ে চলতে পারেন ভারী বর্ষায়। জিন্স ভিজে গেলে কড়া রোদ ছাড়া শুকানো যায় না। আর ভেজা জিন্সের ভ্যাপসা গন্ধ অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়।

সাজসজ্জায় সাবধানতা

*রুপ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্ষার সাজটা হওয়া উচিত হালকা ধরনের। এ সময় ভারী মেকআপ না নেওয়াই ভালো। দিনের সাজে গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা ফাউন্ডেশন লাগাতে পারেন। চোখে কাজল এবং কপালে হাতে আঁকা কুমকুমের টিপ দেবেন না। বৃষ্টিতে ভিজে লেপ্টে বিশ্রী অবস্থা হতে পারে।
*আইলাইনার ও মাশকারা ওয়াটারপ্রুফ হলেই ভালো। চুলগুলো ছেড়ে না দিয়ে পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকাতে কিংবা পনিটেল করে বাঁধতে পারেন। যাওয়ার পথে বর্ষার নবধারা জলে চুল যদি ভিজে যায়, তাহলে পৌঁছানোর পর ছেড়ে দিয়ে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন। ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না। এতে চুল থেকে ভ্যাপসা গন্ধ বেরুতে পারে।
*বাদলা দিনে চামড়ার ব্যাগ ব্যবহার করবেন না। রেক্সিন বা প্লাস্টিকের ট্রান্সপারেট ব্যাগই ভালো হবে।
*এই সময়ে রাবার বা প্লাস্টিক সোলের জুতা বা স্যান্ডেল বেছে নিন। স্যান্ডেল উঁচু বা ফ্ল্যাট না হয়ে মাঝারি হিলের হলে বর্ষার রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে হাঁটতে সুবিধা হবে।
*সঙ্গে রাখতে পারেন বড় সাইজের ব্যাগ, যাতে এর ভেতর বর্ষাতি বা রেইনকোট রাখা যায়। সঙ্গে সব সময় ছোট একটা তোয়ালে রাখতে ভুলবেন না।


*বর্ষায় ত্বকের প্রতি হতে হয় যতœশীল। এ মৌসুমে ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশনসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই ত্বকের যত্ন নেবেন। বাসায় ফিরেই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন। নিম বা চন্দন সাবানও ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক পরিচর্যা টোনিংটাও উপকারী। রোদের তেজ নেই ভেবে সানস্ক্রিন দেওয়া বাদ দেবেন না।
*ফেরার পথে ভিজে গেলে বাসায় ফিরে গোসল সেরে নেবেন। আষাঢ়ের আকাশ চিরে কখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে তার কি কোনো ঠিক আছে! কাজেই বারিধারার এই দিনে প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হোন।

//এআর