ভাসমান সবজি চাষে সফলতা
প্রকাশিত : ১২:২৪ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৪:১৮ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার
কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ এলাকা নিন্মাঞ্চাল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিতে নিমজ্জিত থাকে বহু জমি। উত্তরাঞ্চলের হাওড় এলাকা শুকনো মৌসুমেও পানিতে ডুবে থাকে। সে কারণে দানাশষ্যসহ সবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এ কারণে বর্ষা মৌসুমে গ্রামে সবজি চাষ করা সম্ভব না হওয়ায় রাজধানীসহ গোটা দেশে শাক-সবজির সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি মানুষজন। এ দিকটা বিবেচনা করে গবেষণা শুরু করেন বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা। তেমনি এক গবেষণায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক ভাবে ভাসমান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ শুরুর চিন্তা করছেন গবেষকরা। এমনটি সম্ভব হলে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে জানান গবেষকরা।
ভাসমান কৃষি বিষয়ক গবেষণা কর্মসূচির প্রধান গবেষক ড. মো. আলীমুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৪ সালে এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেন তারা। এরইমধ্যে গবেষণা মাঠে ‘ভাসমান বেড ও মাঁচা পদ্ধতিতে’ চাষকৃত লতাজাতীয় সবজি যেমন- শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, বরবটি, করলা প্রভৃতি ফসলের আশাব্যাঞ্জক ফলন পাওয়া গেছে। তবে ভাসমান বেডে হাইব্রিড জাতের সবজির ফলন স্থানীয় জাতের তুলনায় অনেক বেশি।
কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল ওহাব বলেন ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা নির্মাণের ফলে প্রতিবছর চাষের জমি কমে যাচ্ছে। গত তিন দশকে দেশে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর কৃষি জমি কমে গেছে এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পাশাপাশি শাক-সবজিকে তীব্র প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। কৃষি জমি হ্রাসের ফলে বিকল্প উপায়ে সবজি চাষে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
এই পদ্ধতিতে জলাবদ্ধ এলাকায় বাঁশের মাচা তৈরি করে কিংবা সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে তাতে সবজি চাষাবাদ করা হয়। মাটি থেকে সহজেই সবজি চারা ওই মাচায় বেয়ে বেড়ায়। এই পদ্ধতিতে লাউ, শিম, কুমড়া, ঝিঙ্গা, শশা, কাকরল, কইডা, করলা, ধুন্দল ইত্যাদি সবজি চাষাবাদ করা সম্ভব। এভাবে পুকুরে মাছ ও সবজির সবন্বিত চাষাবাদও সম্ভব।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর মধ্যম নিচু থেকে অতি নিচু জমি রয়েছে যা দেশের মোট ভূমির শতকরা প্রায় ২১ ভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, হঠাৎ উপকূলীয় বন্যার কারণে সারা দেশে ব্যাপক এলাকা জলমগ্ন থাকে। এর মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও হাওড় অঞ্চল অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলে ও সিলেটের হাওড়াঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন।
গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক লাগসই ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে জলমগ্ন বা পতিত জমি ফসল আবাদের কাজে ব্যবহার করা যায়। এতে ফসলের সার্বিক উৎপাদন বাড়বে যা পরিবর্তিত জলবায়ুগত পরিস্থিতিতে দেশের জলমগ্ন এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
//এআর