ঋতুস্রাবের সময় নারীকে নির্বাসন দেয়া হয় যেখানে
প্রকাশিত : ০৬:১৪ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার
ঋতুস্রাব নারীদের যে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া একথা মানতে নারাজ নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। তাই ঋতুবর্তী সময়ে নারীকে দূরে কোথাও পঠিয়ে দেয়া হয়।
এ সময় তারা নারীদের অপবিত্র বলে মনে করেন। তাই তাদের পরিবারের সঙ্গে রাখা হয় না। দেবতা অসন্তুষ্ট হবেন বলে তাদেরকে পানির টিউবয়েল পর্যন্ত ধরতে দেয়া হয়না।
স্থানীয় ভাষায়, এই নির্বাসন প্রথাকে বলা হয় ছাউপাদি। দেশটিতে ২০০৫ সাল থেকে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে বেআইনি ঘোষণা করা হলেও এখনো অনেক সমাজে এটি প্রচলিত আছে।
দেশটির পশ্চিম এলাকায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী সংলগ্ন গ্রাম ঢাংগাদি। এ গ্রামের বাড়িগুলো মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি। এখানকার প্রায় সব পরিবারই ছাউপাদি প্রথা পালন করে। প্রথা অনুযায়ী ঋতুবর্তী নারীকে একই কাপড় পরে চারদিন ধরে কাটাতে হয়। ওই সময় কোনো পুরুষকে স্পর্শ করা যাবে না এবং বিশেষ কিছু খাবার খেতেও বারণ।
এরপর ৬ষ্ঠ অথবা ৭ম দিনে গরুর মূত্র গায়ে ছিটিয়ে তাদের ঘরে তোলা হয়। এতে ‘অপবিত্রতা’ দূর হল বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
লহ্মীমালা নামে স্থানীয় এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, তার নিজের বেলাতেও এমনটি ঘটেছে। এখন তিনি এ প্রথার বিরুদ্ধে পরিবারগুলোকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন।
লহ্মী বলেন, আমরা প্রতিটা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বলছি, আপনার মেয়েকে বাড়ির বাইরে থাকতে বাধ্য করবেন না। তাদেরকে এসময়টায় ঘরের ভেতর থাকতে দিন। কিন্তু লোকজন আমাদের সাথে ঝগড়া করে, অভিশাপও দেয়। বেশিরভাগ সময় পুলিশ সাথে নিয়ে গ্রামগুলোতে ঢুকতে হয়।
যেখানে ওই নারীদের ‘নির্বাসন’ দেওয়া হয় সে ঘরগুলো মাটির তৈরি। প্রবেশের দরজা এতই ছোট যে হাতে-পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। কোনো কপাট নেই। ওই নারীদের নিরাপত্তার জন্য শীতের সময় একটি মশারি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। অন্যসময় খোলাই থাকে। রাতে স্থানীয় নিরাপত্তাকর্মীরা টহল দেয় আর কুকুর ঘোরাফেরা করে। ফলে এটা নিরাপদ ভাবে তারা।
লহ্মী আরও জানান, শহরাঞ্চলে মেয়েদের কাছে স্যানিটারি প্যাড পরিচিত হলেও, এখানকার মেয়েরা ঋতুস্রাবের সময় পুরনো কাপড় ব্যবহার করে। স্যানিটারি প্যাড কেনার মত টাকা তাদের হাতে নেই।
সূত্র: বিবিসি,আল জাজিরা।