ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বদলাবে অর্থনীতির চিত্র

প্রকাশিত : ০৯:৪০ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:২৮ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার

উদ্যোক্তা তৈরির জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বর্তমান বিশ্বে একটি উন্নত ব্যবসায়িক পদ্ধতি। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশ যেকোনো দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। শিল্প ও সেবা খাতে আসতে পারে অভাবনীয় পরিবর্তন। দেশে নতুন নতুন উদ্যোক্তার জন্ম হতে পারে। তৈরি হতে পারে লাখ লাখ কর্মসংস্থান।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের জনতা টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটালঃ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরাম (ইআরএফ) ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ভিসিপিইএবি’র সভাপতি শামীম আহসান। প্রধান অতিথি ছিলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য পারভেজ ইকবাল, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সাল আহমেদ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি আলী আশফাক, ভিসিপিইএবির সহ-সভাপতি ও ভিআইপিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল রহমান, স্ট্রাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এহসানুল কবীর, ভারতীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল আবিষ্কারের প্রতিনিধি সঞ্চায়ন চৌধুরী  প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ভিসিপিইএবির সাধারণ সম্পাদক ও বিডি ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার সব ধরনের হাতিয়ারকে ব্যবহার করতে চায়। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ভালোমন্দের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)- এই ৩ প্রতিষ্ঠান সাথে সংশ্লিষ্ট। এই খাতে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা মোকাবেলায় এই তিন প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

তিনি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশে সর্বোচ্চ প্রণোদনা দিতে সংস্থা তিনটির প্রতি আহ্বান জানান।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, উন্নত দেশগুলোতে শিল্পায়নে পুঁজিবাজারের চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখছে ভেঞ্চার ক্যাপিটালসহ বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সাধারণত নতুন, সৃজনশীল ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগে বিনিয়োগ করে থাকে। এ ধরনের উদ্যোগগুলো তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বলে ব্যাংকগুলো সাধারণত এড়িয়ে যায়। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল শুধু টাকা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে না। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর মান উন্নয়নে তদারকি করে; কারিগরি সহায়তা দেয়।

ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে ফেসবুক ও গুগলের ব্যবসা শুরু হয়েছিল জানিয়ে ভিসিপিইএবির সভাপতি শামীম আহসান বলেন, যুক্তরাষ্টসহ উন্নত দেশগুলোর অনেক বড় বড় কোম্পানির বিকাশের পেছনে রয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ভূমিকা।

ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, জনসংখ্যার এখন বোনাস কাল। পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি। কর্মক্ষম মানুষকে চাকুরিমুখী না করে কর্মমুখী করার ক্ষেত্রে ভেঞ্চার কেপিটাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভেঞ্চার কেপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং তা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে। 

এনবিআর সদস্য পারভেজ ইকবাল বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশে করসুবিধাসহ সব ধরনের প্রণোদনার বিষয়ে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করবে এনবিআর।

বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জে শিগগিরই স্মল ক্যাপ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হবে। এটি হলে মাঝারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে পারবে। এটি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশে সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশে প্রয়োজন হলে বিএসইসি সংশ্লিষ্ট আইন পরিবর্তন করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সাল আহমেদ বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিকাশে অর্থ কোনো সমস্যা নয়। প্রধান চ্যালেঞ্জ আস্থার। যদি বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, তাদের বিনিয়োগ মোটামুটি নিরাপদ থাকবে বা ভালো রিটার্ন আসবে, তাহলে তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। এ ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় ও সামাজিক সংলাপ চালাতে হবে।

ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, গত ১০ বছরে দেশের জনগোষ্ঠির দৃষ্টিভঙ্গীতে একটা পরিবর্তন এসেছে। আগে লেখাপড়া শেষ করে সবাই চাকরির পেছনে ছুটত, কেউ উদ্যোক্তা হতে চাইতো না। এখন অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু অর্থায়ন সমস্যার কারণে এ স্বপ্ন আলোর মুখ দেখে না। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

তিনি বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করতে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সহজ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে স্মল ক্যাপ বোর্ড চালু করা ও মার্জার, অ্যাকুইজিশন ও টেকওভার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ভেঞ্চার কেপিটাল আপনার নতুন উদ্ভাবন বা আইডিয়াকে বাস্তবায়ন করতে অর্থ যোগান দেয়। যে ব্যবসা উদ্ভাবনীয়, বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে সেদিকে বেশি নজর দেয় ভেঞ্চার কেপিটাল। উদ্ভাবন শুধু বৈজ্ঞানিক হবে তা নয়- নতুন ধরনের পণ্য বা সেবা অথবা নতুন কোনো চাহিদা মেটানোও হতে পারে। 

ডব্লিউএন