কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা গরুর মাংস শরীরের যেসব ক্ষতি করে
প্রকাশিত : ০১:১৩ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০৮:৫২ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার
গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আমাদের দেশের খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণের পরিকল্পনা নেন।
যদিও মোটাতাজাকরণের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্বীকৃত পদ্ধতি রয়েছে। গরু দ্রুত মোটা ওজনদার করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই খামারিরা অনৈতিকভাবে স্টেরয়েডসহ বেশকিছু হরমোন প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের কাছে বেশি ওজন মানেই বেশি মাংস; বেশি মাংস মানেই বেশি লাভ।
গবেষকরা বলছেন, হরমোন প্রয়োগে মোটাতাজা করা এ সব পশুর মাংস খেলে মানুষের ব্রেস্ট, কোলন, প্রোস্টেট এবং ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের ডা. বদরুল আলম।
তিনি জানান, এ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত দুই থেকে আড়াই কেজি ইউরিয়া, লালিগুড় ও খড়ের একটি বিশেষ ধরনের মিকচার খাওয়ানো হয়।
টানা ৮ দিন কোনো পাত্রে এ মিকচার মুখবন্ধ অবস্থায় রাখার পর, তা রোদে শুকিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। একটানা ৬ মাস এটা খাওয়ালে খুব দ্রুত গরু মোটাতাজা হয়ে ওঠে। আরও দ্রুত এবং আরও বেশি মোটাতাজা করার আশায় খামারিরা স্টেরয়েডসহ আরও কিছু হরমোন এবং মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া প্রয়োগ করে থাকে।
বাড়তি ইউরিয়ায় গরুর বিষক্রিয়া
কোরবানিতে দ্রুত মোটাতাজাকরণের উদ্দেশে গরুগুলোকে অতিরিক্ত ইউরিয়া খেতে দেয়া হয়। গরুকে কয়েক মাস ধরে ইউরিয়া খাওয়ালে গরু দ্রুত দানব আকৃতি ধারণ করে।
এর ফলে গরুর শরীরের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিডনি, লিভার, ব্রেইন নষ্ট হয়ে গরুর মৃত্যুকে অনিবার্য করে তোলে।
অতিরিক্ত ইউরিয়া বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে গরু প্রাকৃতিকভাবে বেঁচে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় হাটেই এ সব গরু মারা যায়।
এ ধরনের গরুকে বিষাক্ত গরু বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরিয়া বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে মানুষও ইউরিয়া বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ফলে কিডনি বিকল হওয়ার মতো ঝুঁকিও থাকে।
এক নজরে হরমোন ইনজেকশনের ইতিহাস
গরু মোটাতাজাকরণের ইতিহাস খুঁজলে অনেক আগে থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃত্রিমভাবে তৈরি হরমোন প্রয়োগ করা হয়েছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গরুর মাংসপেশিতে হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয় কিংবা কানের চামড়ার নিচে পুঁতে দেয়া হয়। কানের চামড়ার নিচে পুঁতে দেয়া এই হরমোন ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করে থাকে। কৃত্রিমভাবে তৈরি ইস্ট্রোজেন এবং টেসটোসটেরন ইনজেকশনই এক সময় বেশি প্রয়োগ করা হতো।
সত্তর দশকের দিকে এই হরমোনের একটি উপাদান ডাই ইথাইলস্টিলবেস্টেরলের সঙ্গে যোনীপথের ক্যান্সার সৃষ্টির যোগসূত্র ধরা পড়লে তা নিষিদ্ধ করা হয়। এদিকে ইস্ট্রোজেনের সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর এই হরমোনটির প্রয়োগও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
বর্তমানে ব্যবহৃত হরমোন এবং এর ঝুঁকি নিয়ে বিতর্কের ঝড় আরও বেশি নিরাপদ হরমোন খুঁজতে গিয়ে তৈরি হয় বোভাইন সোমাটোট্রপিন (বিএসটি) অথবা রিকম্বিনেন্ট বোভাইন গ্রোথ হরমোন (আরবিজিএইচ)।
১৯৯৩ সালে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) গরুর দুধ ও গরুর দৈহিক বৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য কৃত্রিমভাবে তৈরি এই হরমোনের প্রয়োগকে অনুমোদন দিলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডাসহ বেশকিছু দেশ তা অনুমোদন দেয়নি।
কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, হরমোন ব্যবহার গরুর জন্যই ক্ষতিকর। এ সব হরমোন ব্যবহারে গরুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনের প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে গরুকে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক দিতে হয়। এন্টিবায়োটিকের উচ্ছিষ্ট অংশ গরুর মাংসেও বিদ্যমান থাকে।
//এআর