‘আমাদের অাশ্রয় দেন; দ্যাশের অবস্থা ভালো হলে চলি যাব’
প্রকাশিত : ০৭:৩৯ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৭ সোমবার
"আমাদের দ্যাশে বহুত গোলাগুলি চইলতেছিল, মানুষ মারা গেছে অনেক। দিনে চার-পাঁচবার করি গোলাগুলি চইলছে। একদিন অপেক্ষা করে দেখছি, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয় নাই।সেইজন্য বাড়িঘর ছেড়ে প্রাণ হাতে নিয়া পালাই আসছি। পরিবার নিয়া কয়েক মাইল রাস্তা পায়ে হেটে, তারপর ছোট একটা খাল পার হয়ে আসছি আমরা।"
এভাবেই কাথাগুলো বলছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ডেকিবুনিয়া গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা দীন মোহাম্মদ। পরিবারের আটজন সদস্যকে নিয়ে রোববার সকালে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছেছেন তিনি।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে শনিবার রাত ও রোববার ভোরে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া প্রায় হাজার খানেক রোহিঙ্গার একজন দীন মোহাম্মদ।
রোববার বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ডেকিবুনিয়া গ্রামে তার মৌসুমি ফলের এবং মনিহারি দোকান আছে। নিজের দেশের সহিংস পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তিনি।
তিনি বলেন, "ছেলে, মাইয়া, আমার পরিবার (স্ত্রী), আর তিনটা নাতি নিয়া আসছি। সাথে অন্য অনেক মানুষ ছিল। আমরা সকালের আগে পৌঁছছি এখানে। তারপর হঠাৎ দেখি বিজিবি ঘিরে ধরলো আমাদের।"
"এখনো (রোববার সন্ধ্যায়) বিজিবি আমাদের ঘিরে রাখছে। কোথাও যাইতে দিচ্ছে না। আমরা এইখানেই তাঁবু খাটাইয়া আছি। চিনা মানুষ নাই। কিন্তু তারপরও খাবার দাবার আনছে তারা আমাদের জন্য। তাঁবু আর খাবার যারা দিছে, তাদের চিনি না আমি। এই দেশের সরকারের কাছে আমাদের আশ্রয় দেবার জন্য অনুরোধ করব। আমাদের দেশে পরিস্থিতি ভালো হলে চলে যাব।"
দীন মোহাম্মদ জানিয়েছেন, তার গ্রামের অন্তত আরো দুইশত রোহিঙ্গা পরিবার তমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছে গত কয়েকদিনে।
বাংলাদেশ আশ্রয় না দিলে, কি করবেন দেশে ফিরে গিয়ে, এমন প্রশ্ন শুনে দীন মোহাম্মদের কথা থেমে যায়।
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দেন, "আমাদের দ্যাশের অবস্থা ভালো হলে চলি যাব। এখন যদি পাঠাই দেয়, একটু অপেক্ষা করি দেখবো আরকি। আমাদের দ্যাশের কি পরিস্থিতি দেখবো, যদি ভালো হয়, তাইলে চলি যাবো।"
তবে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটি তার কথায় বেশ বোঝা যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
আরও সহিংসতার আশঙ্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে।
সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষীদের গুলি করার ঘটনাও ঘটেছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।