স্বামী বা স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করলে কী করবেন?
প্রকাশিত : ০৫:২৬ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ১০:১৯ পিএম, ২ অক্টোবর ২০১৭ সোমবার
আমাদের সমাজে দ্বিতীয় বিয়ের প্রচলন এখনও রয়ে গেছে। কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করলে ওই পরিবারে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় আইনে স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের জন্যই প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেসব প্রতিকার নিয়ে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের পাঠকদের আইনি পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক আশরাফ উজ জামান।
স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রী কী করবেন
উপমহাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্ত্রীরা মূলত স্বামীর ওপর নির্ভরশীল। তাই স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে তারা খুবই অসহায় হয়ে পরেন। ভরনপোষন দেবে না-স্বামীর এমন হুমকিতে তাদের অসহায়ত্ব আরও বেড়ে যায়। তবে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের আইন সেসব অবহেলিত নারীদের জন্য আইনী সহায়তা নিশ্চিত করেছে। মানসিক সাহস জড়ো করে আইনের দরজায় কড়া নাড়লে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
প্রতিকার
১) স্ত্রী’র সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় যদি স্বামী অন্য এক বা একাধিক বিয়ে করেন তবে ওই স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ দেনমোহর (যদি বাকি থাকে) সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়ার অধিকার রাখেন। মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ধারা ৬ অনুযায়ী, স্বামী ১ম স্ত্রী থাকা অবস্থায় আরও এক বা একাধিক বিয়ে করলে, তাতক্ষণিকভাবে প্রথম স্ত্রীকে পাওনা যেকোনো ধরনের দেনমোহর পরিশোধ করে দিবেন। যদি তিনি তা পরিশোধে ব্যর্থ হন তবে স্বামীর সব সম্পত্তি থেকে ওই স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
২) একই সঙ্গে আগের স্ত্রী তার ভরনপোষনের জন্যও স্বামীকে বাধ্য করতে পারেন। পূর্বের স্ত্রী যদি আলাদাও থাকেন এবং সেখানে যদি কোনো নাবালক/নাবালিকা সন্তান থাকে তবে স্ত্রী ও সন্তানের ভরনপোষনের দায়িত্ব ওই স্বামীর। যদি সে ভরনপোষনে ব্যর্থ হন তাহলে আগের মতই তার সম্পত্তি থেকে এই খরচ মেটানো হবে।
৩) সেইসঙ্গে, পূর্বের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই স্বামীকে ১ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
৪) এমনকি পূর্বের স্ত্রী তার স্বামীর থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন। মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ অনুযায়ী ভুক্তভোগী ওই স্ত্রী তার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভরণপোষন, দেনমোহর ও বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ওই নারীকে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে।
তবে স্বামী যদি আরবিট্রেশন কাউন্সিলের অনুমতি নিয়ে দ্বিতীয় বা পরবর্তী আর কোন বিয়ে করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে এসব পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। কোন মুসলিম পুরুষ যদি তার স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বা তারও বেশি বিয়ে করতে চান তাহলে প্রথম স্ত্রী (দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে) অথবা সর্বশেষ যে স্ত্রী আছেন (তৃতীয় বা পরবর্তী বিয়ের ক্ষেত্রে) তার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করবেন। চেয়ারম্যান তখন আরবিট্রেশন কাউন্সিল গঠন করবেন। আরবিট্রেশন কাউন্সিল যদি ঐ স্বামীকে দিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করতে অনুমতি দেন তাহলে স্বামীর বিরুদ্ধে আর কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। তবে আরবিট্রেশন কাউন্সিল স্বামীকে বিয়ের অনুমতি দিতে কিছু বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করবে। আরব্রিটেশন কাউন্সিলের কোন সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ পক্ষ সহকারি জাজের আদালতে আপিল করতে পারেন।
স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন
মুসলিম আইন অনুযায়ী, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকাবস্থায় কোনো মুসলিম নারী যদি আরেকটি বিয়ে করেন তবে সেই বিয়ে অবৈধ। এক্ষেত্রে প্রথম স্বামী স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী, ওই স্ত্রীকে সর্বোচ্চ ৭বছর মেয়াদের যে কোন মেয়াদের কারাদণ্ডে দন্ডিত করা যাবে। সেইসঙ্গে আর্থিক জরিমানাও করা যাবে। তবে সেই স্ত্রী যদি তার পূর্বের স্বামীর ৭বছর যাবত কোন খোঁজ না পান, অথবা তিনি জীবিত থাকতে পারেন এমন কোন তথ্য জানা না থাকে তাহলে পরবর্তী স্বামীকে অবস্থা বর্ণনা করে তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীকে আইনজীবীর সাহায্য নিতে পরামর্শ দেন প্রভাষক আশরাফ উজ জামান।
//এস এইচ/এআর