ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

রাজধানীর বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে কড়া নিরাপত্তা

প্রকাশিত : ০৯:৫১ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:৩৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হুমকি পাচ্ছেন—  এমন অভিযোগ আমালে নিয়ে রাজধানীর বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে পুলিশ।

বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক বড়ুয়া জানান, বাসবো, উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর, নর্দা, মিরপুর, ঢাকার মেরুল বাড্ডা  এবং আশুলিয়ার বৌদ্ধ মন্দিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ মোতায়েন করায় আপাতত কোনো আশঙ্কা করছি না।

নারায়ণগঞ্জে একটি বৌদ্ধ মন্দিরেও পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।  

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে গত ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের এক সমাবেশে জানানো হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে একটি ‘স্বার্থান্বেষী’ মহল বাংলাদেশে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ‘বিচ্ছিন্নভাবে’ হুমকি দিচ্ছে।

সম্মিলিত বৌদ্ধ সমাজের ব্যানারে ওই সংবাদ সম্মেলনে অশোক বড়ুয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উসকানিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে মিয়ানমার পরিস্থিতির অকারণ দায়ভার এ দেশের শান্তিপ্রিয় নিরীহ বৌদ্ধদের উপর চাপিয়ে তাদের উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইছে কোনো স্বার্থান্বেসী মহল।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই সমাবেশে উপস্থিত বৌদ্ধ নেতারা বলেন, ক্রমাগত হুমকির মুখে তারা ‘শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতায়’ ভুগছেন।

শুক্রবার মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের দুই দিকে ডিআইটি প্রোজেক্টের ৯ ও ১০ নম্বর সড়কে পুলিশ ব্যারিকেড দেখা যায়। সেই সঙ্গে রয়েছে পুলিশি পাহরা। মন্দিরের পাশেই রাখা হয়েছে পুলিশের সাঁজোয়া যান। অন্য সময় এই বৌদ্ধ মন্দিরে ২ জন পুলিশ ও একজন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতেন বলে জানা গেছে।

বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারের নিরাপত্তাও জোরদারে সেখানে ১২ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

 পুলিশের পাশাপাশি ছয়জন আনসার সদস্যদেরও এই বিহারে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে এআইজি (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) সাহেলী ফেরদৌস ইটিভি অনলাইনকে বলেন, সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিরাপত্তা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্গাপূজা এবং মহররম উপলক্ষেও বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

রোহিঙ্গারা যাতে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে ব্যাপারেও পুলিশ প্রশাসন সজাগ রয়েছে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগিতার বাইরে তাদের যেন বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া না হয় সে ব্যাপারেও সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ব্যাপারে বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের ভিক্ষু শ্রদ্ধানন্দ নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে ইটিভি অনলাইনকে বলেন, এতে আমরা খুশি। তবে আরেকটু নিরাপত্তা বাড়ালে ভালো হতো। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর যে নির্যাতন হচ্ছে সেটাকে অনৈতিক বলে মনে করছেন তিনি। 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ আগস্ট পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর বিদ্রোহী দমনে গণহত্যা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ প্রেক্ষাপটে জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এভাবে চলতে থাকলে চলতি মাসের শেষে বাংলাদেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আসবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

ডব্লিউএন