ছোলার যত গুণ
প্রকাশিত : ০৬:০০ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৪৯ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার
উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ছোলা। ছোলা কাঁচা, ভাজা, সেদ্ধ কিংবা রান্না করেও খাওয়া যায়। এছাড়া কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে,আদার কুচি দিয়ে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান রাখে আর অ্যান্টিবায়োটিক যেকোনো অসুখের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকে।
ছোলা দেহকে রাখে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলার মধ্যে আছে আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্রা ৫ গ্রাম, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও বি-২।
এছাড়াও এতে ভিটামিন ‘বি’ও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ কমায় মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা। সালফার নামক খাদ্য উপাদানের বসতিও এই ছোলাতে। সালফার মাথা ও হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমায়। ত্বকে আনে মসৃণতা। এক্ষেত্রে কাঁচা ছোলা ভীষণ উপকারী। তবে ছোলার ডালের তৈরি ভাজা-পোড়া খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে :
অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়। ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ আছে যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-৬ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এর ডাল আঁশসমৃদ্ধ যা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম ছোলা খায় হৃদরোগ থেকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯% কমে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে :
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে সকল অল্পবয়সী নারী বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়। যেহেতু ছোলায় বেশ ভালো পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া ছোলা বয়:সন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে :
অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ১/২ কাপ ছোলা, শিম এবং মটর খান তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে :
কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার এর ঝুঁকি থেকে নিজিদেরকে মুক্ত রাখতে পারেন। এছাড়া ফলিক এসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়। আর তাই নিয়মিত ছোলা খান এবং সুস্হ থাকুন।
কোলেস্টেরল :
ছোলা শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য এটি বেশ ভালো। ছোলার আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খাবারের আঁশ হজম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী অতিক্রম করতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম করে থাকে।
ডায়াবেটিসে উপকারী :
১০০ গ্রাম ছোলায় আছে প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভালো।
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে :
যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ছোলার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালিতে জমে থাকা পুরোনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনা ছোলা ভাজা। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় ও ছোলার শাকে। তাই শুধু রমজান মাস নয়, ১২ মাসেই ছোলা হোক আপনার সঙ্গী।
রক্তের চর্বি কমায় :
ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তের চর্বি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ করে :
কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায় এবং অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসুখের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
মানসিক অস্থিরতা ভাব দূর করে :
ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
জ্বালাপোড়া দূর করে :
ছোলাতে সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে। সালফার মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমায়।
মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করে :
ছোলায় ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ কমায় মেরুদণ্ডের ব্যথা, দূর করে স্নায়ুর দুর্বলতা। এতে আমিষ মাংস বা মাছের সমান। তাই খাদ্যতালিকায় ছোলা থাকলে মাছ মাংসের প্রয়োজন পরে না।
কেআই/ডব্লিউএন