কৃষিতে ড্রোনের ব্যবহার,বাড়াবে ফসলের উৎপাদন
প্রকাশিত : ০১:০৬ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৮:৫২ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০১৭ বুধবার
ড্রোনের ব্যবহার কৃষির চেহারা বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে খামারের বেড়া কোথাও ভেঙে গেলো, কোথায় পানি কমে ফসল শুষ্ক হয়ে গেছে, খামারের কোন অংশে ফসল কম হয়েছে অথবা কোথায় মাটির চেহারা দেখতে কেমন সবই উঠে আসবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্টার্ন কেপ অঞ্চলে ড্রোন ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
দেশটির ওয়েস্টার্ন কেপ অঞ্চলে ইদানিং প্রায়ই মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায় ড্রোন। মনে হয় যেন বড় ধরনের একটি মাছি অনেক শব্দ করে ভন ভন করে উড়ে গেলো। এ অঞ্চলেই ফার্স্ট ফ্রুট গ্রুপ নামের একটি লেবুর বাগান রয়েছে, যেটি পুরোটা ড্রোনের নিয়ন্ত্রণে।বাগানটির বেশির ভাগ লেবুই রপ্তানি হয় মধ্যপ্রাচ্যে, বাকিটা চলে যায় স্থানীয় সুপার মার্কেটে।
বাগানটির প্রধান নির্বাহী হাইন গার্বার জানান, সাধারণত আপনার চোখ যতদূর যাবে আপনি তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এছাড়া সময়েরও একটা ব্যাপার আছে। এই দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করবে আপনি দিনে আপনার বাগানের নির্দিষ্ট কতটুকুর উপর নজর রাখতে পারবেন। কিন্তু ধরুন বাগানের অন্য কোন অংশে আপনার যাওয়া হলো না আর সেখানে কোন সমস্যা হয়ে গেলো, এখন আপনি কি করবেন।ড্রোন ব্যবহার করে বেশ উপকৃত হচ্ছেন বলেও জানান হাইন গার্বার।
তিনি বলেন, এই ধরণের সমস্যারই সমাধান করছে ড্রোন। আপনি নিজে উপস্থিত না হতে পারলেও উড়ে উড়ে পুরো বাগানোর উপর নজর রাখছে দুর থেকে পরিচালিত ছোট এই উড়ন্ত যন্ত্রটি। এতে সময় যেমন কমবে তেমনই পুরো বাগানটির খোঁজও আপনি পাবেন সহজে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এই প্রযুক্তির উদ্যোক্তারা জানান, আপনার খামারের কোথায় কি ধরণের সমস্যা, খামারের কোন অংশে ফসল কম হয়েছে বা মাটি শুষ্ক হয়েছে সবই উঠে আসবে ড্রোনের তোলা ছবি থেকে। এরপর সে সম্পর্কিত ডাটা আপনি পাবেন কম্পিউটারে। এটা নিয়ে আপনি নিয়মিত বিশ্লেষণও করতে পারবেন।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াবে দশ বিলিয়নে। এত বিপুল মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীর কৃষি উৎপাদন অন্তত ৭০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে আফ্রিকার দেশগুলো। কেননা পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমি রয়েছে আফ্রিকাতে।
এ অঞ্চলে ড্রোন দিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ওয়েস্টার্ন কেপ অঞ্চলের কৃষি খামারগুলোকে ড্রোন সেবা দিয়ে থাকে অ্যরোবটিকস নামের একটি কোম্পানি। এরপর ড্রোন থেকে তোলা ছবি তারা বিশ্লেষণ করে।
কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী জেমস প্যাটারসন বলেন, এই মুহূর্তে মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করা এই অঞ্চলের জন্য সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওয়েস্টার্ন কেপ অঞ্চলে এই মুহূর্তে খরা বিরাজ করছে। বাগানগুলো তাই সঠিকভাবে সেচ ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করছে। যেমন কোন অংশে কম সেচ দেয়া হয়েছে, সেই বিষয়ের উপর নজর রাখা যায় ড্রোনের মাধ্যম। ফসলে কোন সমস্যা হয়ে ওঠার আগেই ধরতে পারছি। খামারিরা যাতে মোবাইল ফোনে অ্যাপ দিয়ে নিজেরা এসব ড্রোন পরিচালনা করতে পারেন সে ব্যবস্থাও চালু করা চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ড্রোনের ব্যবহার আফ্রিকার কৃষির চেহারা বদলে দিতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে ইন্টারনেটের গতি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড্রোনের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার একই সাথে তরুণ প্রজন্মের কাছে কৃষিকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। এই পদ্ধতিকে বলাই হচ্ছে স্মার্ট ফার্মিং।
সূত্র : বিবিসি।
/আর/এআর