গণহত্যা নিয়ে তামশা শুরু করেছে মিয়ানমার: তুন কিন
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:০৮ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৪১ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার
গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমার সরকার পুরানো খেলায় মেতেছে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংগঠন ‘বার্মিজ রোহিঙ্গা আর্গানাইজেশন ইউকে (ব্রোক)’-এর সভাপতি মং তুন কিন। বাংলাদেশে অবস্থানরত মং তুন কিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে একথা বলেন।
তুন কিন বলেন, এসব তাদের পুরানো খেলা, এখন তারা বলছে হিন্দুদের গণকবর পাওয়া গেছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিক, তাহলে বুঝা যাবে সেখানে আসলে কি হয়েছে।
ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালিয়ে তারা এখন বিশ্বের দৃষ্টিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এসব তাদের পুরানো কৌশল এবং বিশ্ব এটা জানে।
এর আগে কক্সবাজারের একটি হোটেলে কথা হয় বিশ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত মং তুন কিনের সঙ্গে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সাথে। তিনি বলেন, মিয়ানমার যদি মনে করে গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে পারবে তাহলে তারা ভুল করবে। আমরা আমাদের আধিকারের জন্য সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে যাবো।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সংগঠিত হচ্ছে। সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চলছে এবং শীঘ্রই রোহিঙ্গাদের একটি অভিন্ন রাজনৈতিক প্লাটফরমের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
তুন কিন বলেন, যেভাবে গণহত্যা চালানো হয়েছে তা নজিরবিহীন, বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারকে ভালোভাবে প্রেশার দিতে না পারলে তারা (মিয়ানমার) সেখান থেকে রোহিঙ্গাদেরকে চিরতরে উচ্ছেদ করে দিবে। মিয়ানমার এখন জাতিগত নির্মূলের চূড়ান্ত পয়ায়ে পৌঁছেছে।
রোহিঙ্গাদেরকে এবার বাংলাদেশ সরকার যে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছে তা নজির বিহীন। এভাবে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দৃষ্টান্তমূলক মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন তা রোহিঙ্গারা কোনোদিন ভুলবেনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান স্যালভেশান আর্মি আরসার কার্যকালাপ সম্পর্কে তুন কিন বলেন, আমি অনেকদিন ধরে মিয়ানমার যেতে পারিনা। সেখানকার প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে বহুদিন ধরে রোহিঙ্গারা সেখানে বন্দি জীবন যাপন করছে। শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ পায় না, এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হলেও সেনা-পুলিশের অনুমোদন নিতে হয়। এমনকি সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিয়ে- শাদিও হয়না। আমার জানা মতে অনেক যুবক বিয়ের অনুমতি পায়নি, এই রকম পরিস্থিতিতে বিক্ষুদ্ধ যুবক সমাজের বিদ্রোহী হয়ে উঠা খুবই স্বাভাবিক।
যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত এ নেতা আরও বলেন, রোহিঙ্গারা শান্তিপ্রিয় জাতি। আমার শান্তিপূর্ণভাবে শত শত বছর ধরে সেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সাথে বসবাস করে আসছি। শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর কাছে আমরা অনুরোধ করছি।
৩৭ বছর বয়স্ক মং তুন কিন দীর্ঘ ২০বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। পেশায় তিনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তুন কিনের পরিবার মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রাজধানী আকিয়াব (বর্তমানে সিটুয়ার অধিবাসী ছিলো)। তার বাবা মোহাম্মদ শফি ছিলেন সেই দেশের রাজস্ব বিভাগের কমিশনার। দাদা আবদুল গাফফার ছিলেন মিয়ানমার পার্লামেন্টের আকিয়াব আসনের সদস্য।
টিকে