লতা মুঙ্গেশকরের জন্মদিন আজ
প্রকাশিত : ০৬:১২ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার
মিষ্টি কণ্ঠের জাদুকর উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকরের ৮৮তম জন্মদিন আজ (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯২৯ সালের এই দিনে বৃটিশ ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ঝোঁক ছিল কিংবদন্তী এ কণ্ঠশিল্পীর। পরিবারের উৎসাহে গানের চর্চাও শুরু করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পেশাগত শিল্পী হিসেবে পরিচিত পান। এক হাজারেরও বেশি হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছেন তিনি। হিন্দিসহ বিশ্বের মোট ২৬টি ভাষায় এখন পর্যন্ত গান গেয়েছেন এ গায়িকা। এছাড়া ভারতের ২০টি আঞ্চলিক ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তাঁরই। ২৫ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও লিখিয়েছেন এ গায়িকা। এ জন্য ভারতের ইতিহাসের সর্বাধিক সফল নারী প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে ধরা হয় লতা মঙ্গেশকরকে।
অবশ্য এই রেকর্ডটি ২০১১ সালে ভেঙে দেন তারই ছোট বোন আশা ভোঁসলে। সংগীতের ইতিহাসে সর্বাধিক গানে কণ্ঠ দেয়ার গৌরব অর্জন করে গিনেস বুক অব রেকর্ড ওয়ার্ল্ডে নাম লেখান আশা। তবে আশা নিজেও তার সংগীতের অনুপ্রেরণা হিসেবে সব সময় বড় বোন লতাকেই মেনে আসছেন।
তাঁর গাওয়া জনপ্রিয় হিন্দি গানের মধ্যে রয়েছে ‘পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া’, ‘আজিব দাসতা হে ইয়ে, ‘কাহি দিল জালে কাহি দ্বীপ, ‘আজারে পারদেশী’, ‘আপকি নজরোসে সামঝা’, ‘লাগজা গালে’, ‘ন্যায়না বারসে রিমঝিম’, ‘তুঝে দেখাতো ইয়ে জানা সনম’, ‘মেরে জীবন সাথি’, ‘শিশা হো ইয়া দিল হো’, ‘নদীয়া কিনারে’, ‘আভি তো ম্যায় জাওয়ান হু’, ‘ধীরে সে আজা রে’, ‘রাত ভি কুচ হ্যায়’, ‘হামকো হামিসে চুরালো’, ‘কাভি খুশি কাভি গাম’সহ আরও অসংখ্য গান।
অন্যদিকে বাংলা গানের মধ্যে রয়েছে - ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’, ‘ওই গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি’, ‘যদিও রজনী পোহালো’, ‘হায়হায় প্রাণ যায়’, ‘চলে যেতে যেতে দিন’, ‘সাত ভাই চম্পা জাগরে’, ‘আকাশ প্রদীপ জ্বেলে’, ‘না যেও না’, ‘যারে যারে উড়ে যা পাখি’, ‘কি লিখি তোমায়’ ইত্যাদি।
১৯৪২ সালে লতার সঙ্গীত ক্যারিয়ার শুরু মারাঠী গানের মাধ্যমে। হিন্দিতে লতা প্রথমবার প্লেব্যাক রেকর্ড করেন ১৯৪৩ সালে। হিন্দি সিনেমায় প্রথম গান করেন ১৯৪৬ সালে।
১৯৭০ এর দশকজুড়ে একের পর এক হিট গান উপহার দিয়েছেন রাহুল দেব বর্মণ ও লতা মঙ্গেশকর। তাদের জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘অমর প্রেম’ (১৯৭২) সিনেমার ‘রায়না বেটি জায়ে’, ‘কারাভান’ চলচ্চিত্রের ‘চাদি জাওয়ানি’ ও ‘কিতনা পেয়ারা ওয়াদা হ্যায়’, ‘কটি পাতাং’ (১৯৭১) এর ‘আজ না ছোড়েয়েঙ্গে’ এবং ‘আন্ধি’ (১৯৭৫)-সহ অনেক সিনেমার স্মরণীয় গান।
লতা সবচেয়ে বেশি প্লেব্যাক করেছেন লক্ষীকান্ত পেয়ারলালের সঙ্গীত পরিচালনায়। এ সংখ্যা ৭১২। এ ছাড়া— শংকর জয়কৃষাণ (৪৫৩), আর ডি বর্মণ (৩২৭), সি রামচন্দ্র (২৯৮), মদন মোহন (২১০), এস ডি বর্মণ (১৮২), নওশাদ (১৫৫)-সহ অনেক বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালকের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
সংগীতে বিশেষ অবদান রাখায় পুরস্কারের ঝুলিটাও তাই বেশ ভারী কিংবদন্তী এ গায়িকার। ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ফিল্মফেয়ারে ১৯৯৪ সালে ‘আজীবন সম্মননা পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে পান ‘মহারাষ্ট্রভূষণ’ পুরস্কার। ১৯৯৯-তে জেতেন ‘এনটিআর জাতীয় পুরস্কার’। একই বছর ভারত সরকার তাকে দেন ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কার। ১৯৮৯ সালে পান ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’। এমনকি ২০০১ সালে ভারত সরকারের সবচেয়ে সম্মানিত পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’ও লাভ করেন জীবন্ত এ কিংবদন্তী।
//এস//এআর