ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

পর্ব-৭

এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস হৃদরোগ নিরাময়ে স্থায়ী সমাধান নয়

ডা.হাসনাইন নান্না

প্রকাশিত : ০৫:৩৩ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৪:৪৯ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার

একজন হৃদরোগ-চিকিৎসক হিসেবে আমাকে প্রতিদিন কিছু রুটিন কাজের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যেমন, রোগী দেখা, প্রয়োজনে তাদের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো, কখনো-বা এনজিওগ্রাম করা এবং রোগীর ব্লকেজের পরিমাণ অনুসারে স্টেন্ট বা রিং লাগানো। আর ব্লকেজের পরিমাণ অনেক বেশি হলে তাকে বাইপাস অপারেশনের পরামর্শ দেয়া।

একটা গান আছে,‘বলতে হলে নতুন কথা, চেনা পথের বাইরে চল’। আজ আমি আমার প্রতিদিনকার এই চেনা পথের বাইরের কিছু কথাই আপনাদের বলবো। তার আগে আমার চেনা পথের দুটি বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা শোনাই।

২০০৮ সালের কথা সেটা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। আনুষঙ্গিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তাকে বললাম, মনে হচ্ছে আপনার হার্টে ব্লকেজ থাকতে পারে। এনজিওগ্রাম করে নিলে ব্যাপারটা নিশ্চিত করে বলা যাবে।

তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এমনিতে বেশ হাসিখুশি মানুষ। এবং খুব সাহসী। বললেন,কুচ পরোয়া নেহি। এনজিওগ্রাম করে ফেলুন। আমরা এনজিওগ্রাম করলাম। দেখা গেল, ব্লকেজের পরিমাণ এমন যে, তাতে স্টেন্ট লাগিয়ে কাজ হবে না। বাইপাস অপারেশন করাতে হবে। বিষয়টা শুনে তিনি প্রথমে কিছুটা দমে গেলেও, পরে বাইপাস করাতে রাজি হলেন। বাইপাস করা হলো। এক মাসের মাথায় মোটামুটি সুস্থ হয়ে তিনি তার ব্যস্ত জীবনে ফিরে গেলেন।

ছয় মাস পর একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ আবার তার ফোন। বললেন, খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, এখন কী করণীয়? একটা এম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চলে আসতে বললাম। স্যার এলেন। ভর্তি করা হলো তাকে। প্রথমবার অসুস্থ হয়ে যখন এসেছিলেন, তখন বাইপাস করানোসহ সবমিলিয়ে হাসপাতালে ছিলেন একমাস। এবার তাকে থাকতে হলো বেশ অনেকদিন। অস্বাভাবিক রকমের একটা লম্বা সময় তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাটালেন। প্রায় চার মাস লাগলো তার সেরে উঠতে।

এ ঘটনার প্রায় বছর তিনেক পর এই কিছুদিন আগে একটা ব্যক্তিগত কাজে তাকে ফোন করলাম। জানতে চাইলাম, স্যার কেমন আছেন? তার খুব সহজ স্বীকারোক্তি –‘আমি ভালো নেই্’। কেন স্যার, কী হলো? তিনি বললেন, ‘আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে, মাত্র গতকালই হাসপাতাল থেকে ফিরেছি। এবার একমাস হাসপাতালে ছিলাম। আবার এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। বাইপাস আর্টারিতে নতুন ব্লক। এখন যে কী করবে বুঝে উঠতে পারছি না।’

আমার দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটা যাকে নিয়ে, তিনি আমার এক ডাক্তার বড় ভাই। বহুদিন দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরলেন ১৯৯০ সালে। রাজশাহীতে প্র্যাকটিস শুরু করলেন। ছাত্রজীবনে রাজনীতি করতেন, খুব ভালো বক্তা ছিলেন। দেশে ফিরেও প্র্যাকটিসের পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন আবার।

হঠাৎ একদিন তার ফোন। তিনি ঢাকায় আসবেন, ডাক্তার দেখাতে হবে। দিন কয়েক আগে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ গিয়েছিলেন একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে। বক্তৃতা শুরুর আগে হঠৎ তার ভীষণ বুকব্যথা। সাথে দরদর করে ঘাম। বক্তৃতা আর দেয়া হয়নি। তিনি ঢাকায় এলেন। এনজিওগ্রাম করা হলো। হার্টের বামদিকের রক্তনালী পুরোপুরি বন্ধ। হান্ড্রেড পার্সেন্ট ব্লক। রিং পরানো হলো। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। আবার শুরু করলেন রাজনীতি। সাথে নিয়মিত প্র্যাকটিস।

দু’বছরের মাথায় হঠাৎ একদিন তার ফোন। আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঢাকায় এলেন। এবার করা হলো সিটি এনজিওগ্রাম। তাতে দেখা গেল, আগে যেখানটায় রিং পরানো হয়েছিল তার পাশে আরেকটি ব্লকেজ। সব শুনে তার মন খুব খারাপ। বললেন, দেশে আর নয়। চলে গেলেন দিল্লি। ওখানে আবার এজিওগ্রাম করা হলো। তাতেও একই রিপোর্ট। অগত্যা আরেকটি রিং পরিয়ে তিনি দেশে ফিরে এলেন।

এখানেই শেষ নয়, এক বছরের মাথায় আবার বুকব্যাথা। আবার দিল্লি। আবার এনজিওগ্রাম। এবার আরো দু:সংবাদ। দ্বিতীয়বার যে রিংটি লাগানো হয়েছিল সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। সাথে অন্যান্য রক্তনালীতেও নতুন ব্লকেজ। ফুসফুসেও কিছু সমস্যা দেখা গেছে। তাকে বলা হলো, বিশেষ ধরনের একটা বাইপাস অপারেশন আছে, আপনি সেটা করাতে পারেন। সেটি হলো, রোবটিক সার্জারি।

রোবটিক সার্জারি করেন যিনি, সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হলো। ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। যা-ই হোক সেবার কিছু না করে তিনি দেশে চলে এলেন। কিছুদিন আগেও যে মানুষটি নিয়মিত প্র্যাকটিস করতেন, রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, এবার তিনি হয়ে গেলেন পুরোপুরি গৃহবন্দী। প্র্যাকটিস, রাজনীতি বন্ধ। এখন সারাদিন ইন্টারনেটের সামনে বসে সার্চ করতে থাকেন রোবটিক সার্জারি কোথায় হয়, কেমন করে হয়, কত টাকা খরচ ইত্যাদি।

এই যে দু’টি অভিজ্ঞতা আমার, এমন ঘটনার সংখ্যা কিন্তু খুব একটা কম নয়। এ দু’জন হৃদরোগী আধুনিকতম চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সেটা কোনো স্থায়ী সমাধান ছিলো না। তাদের দু’জনেরই অর্থ আছে, সামর্থ্য আছে, কিন্তু এখন কোনো উপায় নেই। হৃদরোগীদের অনেকেই আছেন, যাদের কাছে এসব অভিজ্ঞতা নতুন নয়।

করোনারি আর্টারিতে হৃদরোগ সম্পর্কে এখন আমরা কমবেশি জানি। হার্টের করোনারি আর্টারিতে কোলেস্টেরল জমে জমে রক্ত চলাচলে ব্যাঘত ঘটে। ফলে হার্ট বঞ্চিত হয় তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবং পুষ্টি থেকে। এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয় বুকে ব্যথা ও চাপ, শ্বাসকষ্টসহ আরো নানা উপসর্গ। আমরা যদি দেখি, এ রোগ কেন হয়? ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, বিজ্ঞাপন-নির্ভর ভুল খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম না করা, মানসিক চাপ এবং টেনশন করোনারি হৃদরোগের প্রধান কারণ।

কেউ একজন যখন আমাদের কাছে এসে বলেন, একটু হাঁটলে বা পরিশ্রম করলে কিংবা সিঁড়ি বেয়ে উঠলে তার বুক ব্যথা হচ্ছে, তিনি বুকে চাপ অনুভব করছেন, এই ব্যথা আবার ছড়িয়ে যাচ্ছে দাঁতের গোড়া অবধি বা পিঠে, বাম হাতে যাচ্ছে, তখন প্রাথমিকভাবে আমরা এগুলোকে করোনারি হৃদরোগের উপসর্গ বলেই ধরে নিই।

করোনারি হৃদরোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীকে আমরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর মধ্যে প্রথমেই আসে ইসিজি’র কথা। অনেকেরই ধারণা, ইসিজি রিপোর্ট স্বাভাবিক তো সবই ঠিক, হৃদরোগ নেই। আমিও একসময় তা-ই মনে করতাম। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। আমার নিজের এই ভুল ভাঙলো একজন রোগীর এটেনডেন্ট। আমরা ডাক্তাররা বই পড়ে যা শিখি, কখনো কখনো তারচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখি রোগী এবং রোগীর এটেনডেন্টের কথা শুনে।  

২০০০ সালের প্রথম দিকের ঘটনা। আমি তখন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে কার্ডিওলজিতে এমডি করছি। একদিন সিসিইউতে ডিউটি করছি। এক রোগীর এটেনডেন্ট এসে বললেন, ডাক্তার সাহেব, আমার রোগীটা জরুরি বিভাগে আছে, এই তার ইসিজি, একটু দেখে নিন। দেখলাম। বললাম, আপনার রোগীর ইসিজি তো নরমাল, রোগী ভালো আছে। তখন তিনি বললেন, এটাই তো আমার রোগীর সমস্যা। রোগীর ইসিজি সবসময় স্বাভাবিকই থাকে, কিন্তু বুকের ব্যথা কমছে না এবং ডাক্তাররা বলেছেন, এটা হার্টের অসুখ, হার্টে ব্লক আছে।

সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম; পরে অবশ্য আমার শিক্ষকদের কাছে জেনেছি, ভালো কার্ডিওলজিস্ট হতে হলে ইসিজিকে অবিশ্বাস করতে হবে। কারণ, শুধুমাত্র ৪৮ ভাগ হার্ট অ্যাটাক বোঝা যায় ইসিজি দেখে, বাকি ৫২ ভাগ বুঝতে হয় রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে এবং মমতা দিয়ে শুনে। তাই চিকিৎসকের কাছে গেলে আগে আপনার শারীরিক অসুবিধাগুলো তাকে বলুন, রোগের উপসর্গগুলো বিস্তারিত বলুন। কেউ বলতে পারেন যে, ডাক্তার সাহেব কথা শোনেন না, শুনতে চান না। অভিযোগটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্যি। কিন্তু রোগীদের আমি বলি, এর সমাধান খুব সহজ। আপনার কথা যিনি শুনবেন সেই ডাক্তারের কছে যান। খুঁজে বের করুন।

উপসর্গ বিবেচনার পাশাপাশি ইসিজি ছাড়াও করোনারি হৃদরোগ নির্ণয়ের জন্য আছে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। যেমন- ইটিটি, ইকোকার্ডিওগ্রাম এবং করোনারি এনজিওগ্রাম। এগুলোর ফলাফল অনুসারে কার্ডিওলজিস্টরা ‍রোগীকে এনজিওপ্লাস্টি কিংবা বাইপাস অপারেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সাথে সারাজীবন ওষুধ সেবনের নির্দেশনা তো আছেই।

বাইপাস অপারেশন নিয়েও আমার একটা অভিজ্ঞতা আছে। সেটিও আমি যখন হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে কাজ করছিলাম, সেই সময়কার ঘটনা। একজন রোগী এলেন। তার সব কাগজপত্র আর রিপোর্ট দেখে জানলাম, এনজিওগ্রাম করা হয়েছে এবং হার্টের তিনটা আর্টারিতে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ব্লক। তিনটা রক্তনালী পুরোপুরি বন্ধ। লোকটা তাহলে  বেঁচে আছে কীভাবে? রোগীর এটেনডেন্ট বললেন, ডাক্তার তাদের বলেছেন যে, রোগীর তিনটা আর্টারিতে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ব্লক আছে সত্যি কিন্তু রিং লাগানো বা বাইপাস কিছুই প্রয়োজন নেই; আল্লাহর রহমতে তার আটো-বাইপাস হয়ে গেছে (চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, ন্যাচারাল বাইপাস)। আমার সত্যিকারের শেখা শুরু হলো।

পরে জেনেছি, এই ন্যাচারাল বাইপাস ঘটে মূলত কোলেটারাল সারকুলেশনের মাধম্যে। আমাদের হার্টের চারাপাশে বেশকিছু সংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালী রয়েছে। নিয়মিত হাঁটা এবং ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে এই পরিপূরক রক্তনালীগুলো তখন প্রয়োজনীয় কাজটুকু চালিয়ে নেয়। মূলত এটাই ন্যাচারাল বাইপাস।

আসলে হৃদরোগ থেকে নিরাময় ও সুস্থ জীবযাপনের জন্যে নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম, স্বাস্থকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান বর্জন আর টেনশনমুক্ত থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, করোনারি হৃদরোগের প্রচলিত চিকিৎসাগুলো রোগীদের জীবনে কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারছে না। রোগী যে চিকিৎসাই নিচ্ছেন, কিছুদিন পরই ঘুরে-ফিরে আবার সেই একই সমস্যা। আমার পরিচিত এরকম দু’জন রোগীর কথা আমি প্রথমেই বলেছি। আবার অন্যদিকে যারা জীবনের ভুল অভ্যাসগুলো পাল্টে ফেলেছেন তারা সত্যিই ভালো আছেন, তিনি এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস করুন আর না-ই করুন। সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটেই এ কথাটি সত্যি।

সন্দেহ নেই, আমেরিকার চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ। বাইপাস অপারেশনের শুরুও ওখানেই। ১৯৬৭ সালে আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে প্রথম সফল বাইপাস সার্জারি করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে। বাইপাস তো হরদম হচ্ছে দেশে বিদেশে, কিন্তু তারপর কী অবস্থা? সবাই কি ভালো আছেন?

আমেরিকার একজন রোগীর কথাই বলি। রোগী আর কেউ নন, খোদ আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। বুকে ব্যথা হলো। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এনজিওগ্রাম করা হলো। আমেরিকার সেরা সেরা কার্ডিওলজিস্টদের নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করা হলো। সিদ্ধান্ত হলো বাইপাস করতে হবে। করা হলো বাইপাস। ক্লিনটন সুস্থ হয়ে আবার কাজকর্ম শুরু করলেন। কিছুদিন পর ব্যক্তিগত জীবনে কিছু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লেন। প্রেসিডেন্টশিপ চলে যাওয়ার মতো গুরুতর অবস্থা তৈরি হলো। সবমিলিয়ে ভীষণ এক স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন।

ঝামেলা একসময় মিটলো ঠিকই, কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। বাইপাসের ছয় বছরের মাথায় আবার বুকে ব্যথা। যথারীতি আবার এনজিওগ্রাম, আবার মেডিকেল বোর্ড। সিদ্ধান্ত হলো রিং পরানোর। রিং পরালেন। এবার জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন করার ব্যাপারে তিনি সচেতন হয়ে উঠলেন। তার চুরুট খাওয়ার অভ্যাস ছিলো, ত্যাগ করলেন দীর্ঘদিনের সে অভ্যাস। চর্বিযুক্ত খাবার আর ফাস্টফুড ছেড়ে দিলেন পুরোপুরি। শুরু করলেন শাক-সব্জি আর ফলমূল খাওয়া। এখন তিনি ভালো আছেন।

শুধু তা-ই নয়, বিল ক্লিনটন দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালে হোয়াইট হাউজে তার ব্যক্তিগত চিকিৎকসকদের একজন ছিলেন ডা.ডিন অরনিশ। ক্যালিফোর্নিয়ার এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী মেডিটেশন এবং সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে করোনারি হৃদরোগ নিরাময়ের পথিকৃৎ। এ থেকেই বোঝা যায়, হৃদরোগ নিরাময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সুস্থ জীবনাচার অনুশীলনের ব্যাপারে ক্লিনটন নিজে কতটা সচেতন উঠেছিলেন।

সুস্থতার জন্য আসলে এই জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি এদিকে দৃষ্টি দেবেন, পৃথিবীর যে দেশেই যত উন্নততর চিকিৎসা আপনি নেন, সমস্যা সমস্যার জায়গাতেই থেকে যাবে। তাই হৃদরোগ থেকে নিরাময় ও সুস্থ জীবনের জন্যে স্থায়ী সমাধান যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তার চাবিকাঠি একমাত্র আপনার হাতেই, ডাক্তার আর ওষুধ আপনার সহযোগী মাত্র।

বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর চীফ কনসালটেন্ট ডা.হাসনাইন নান্না। কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব আয়োজিত হৃদরোগ ও নিরাময় বিষয়ক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তার দেওয়া বক্তব্য থেকে এ তথ্য নেওয়া।

 

ডব্লিউএন