ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আইসিএএন পেল শান্তিতে নোবেল

প্রকাশিত : ০৩:২২ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৩২ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার

কোনো ব্যক্তি নয়, এবার শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জিতলো পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপে প্রচারণাকারী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস (আইসিএএন)। শুক্রবার সকাল ১১টায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এই সংগঠনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী ঘোষণা করা হয়। 

যদিও ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। তালিকায় ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, সিরিয়ার উদ্ধারকর্মী দল হোয়াইট হেলমেটস, যৌথভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি ও ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ, পশ্চিম আফ্রিকান জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ গ্রান্দি, আমেরিকান সিভিল রাইট ইউনিয়নের নাম আলোচনায় ছিল। শেষ পর্যন্ত পুরস্কার জিতে নিয়েছে আইসিএএন। 

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বেরিত রেইস অ্যান্ডারসন চলতি বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণায় বলেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্বে যে ভয়াবহ মানবিক বির্যয় ডেকে আনবে, সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় আইসিএএন-কে নোবেল দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বতর্মান বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি বিগত বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কিছু রাষ্ট্র এখনও তাদের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নত করে কাজ করছে। উত্তর কোরিয়ার মত আরও দেশ এ ধরনের অস্ত্রের মালিক হতে চাইবে- সে আশঙ্কাও রয়েছে।  

নোবেল কমিটি বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র এই পৃথিবীর বুকে মানুষ এবং সব ধরনের প্রাণের জন্যই হুমকি। আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষ এর আগে ল্যান্ড মাইন, ক্লাস্টার বোমা, রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারলেও সবচেয়ে ভয়াবহ যে অস্ত্র, সেই পারমাণবিক বোমার ব্যবহার বন্ধে এখনও কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সম্ভব হয়নি।  ওই আইনি ঘাটতি পূরণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আইসিএএন। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তারা সামনে এনেছে। এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে বন্ধে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোকে আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান। 

পুরস্কার বাবদ একটি সোনার মেডেল ও ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার) পাবে আইসিএএন। আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, সাহিত্য শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম। 

পাঁচ দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে ফার্ক গেরিলাদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসকে গতবছর নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।

নোবেল পুরস্কারের ছয়টি ক্যাটাগরির মধ্যে পাঁচ ক্যাটাগরির বিজয়ী সুইডিশ নোবেল কমিটি ঘোষণা করলেও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা নরওয়ে কমিটি দিয়ে থাকে। এ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন একজন। তিনি হলেন ভিয়েতনামের বিপ্লবী, কূটনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লি ডাক থো।

১৮৯৫ সালের নভেম্বর মাসে আলফ্রেড নোবেল তার মোট উপার্জনের ৯৪% (৩ কোটি সুইডিশ ক্রোনার) দিয়ে নোবেল পুরষ্কার প্রবর্তন করেন। মানব কল্যাণে যারা কাজ করবে তাদের জন্য এই পুরষ্কার প্রবর্তন করেন তিনি। এ লক্ষ্যে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান। আর নোবেল পুরষ্কারের তালিকায় অর্থনীতি সংযুক্ত হয় ১৯৬৮ সালে।

পুরস্কার ঘোষণার আগেই মৃত্যু বরণ করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। আইনসভার অনুমোদন শেষে তার উইল অনুযায়ী নোবেল ফাউন্ডেশন গঠিত হয়। তাদের উপর দায়িত্ব বর্তায় আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা এবং নোবেল পুরষ্কারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করা। আর বিজয়ী নির্বাচনের দায়িত্ব রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি আর নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়।

ডব্লিউএন