ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

পর্ব-৮

হৃদরোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস

প্রকাশিত : ০৫:২৩ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৫:২৫ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার

সাধকদের হাজার বছরের সাধনালব্ধ জ্ঞান এবং আধুনিক পুষ্টি বিজ্ঞানের সমন্বিত প্রয়াসই হচ্ছে কোয়ান্টাম খাদ্যাভ্যাস। অনেক Anthropologist বা নৃ-বিজ্ঞানী মনে করেন যে, আমাদের পূর্ব-পুরুষরা ছিলেন মূলত: Vegetarian বা নিরামিষভোজী। এর পক্ষে তারা প্রমান হাজির করেছেন যে, মানুষের দাঁতের গঠন মূলত: শাক-সবজী, তরি-তরকারি-শস্যদানা খাওয়ার উপযোগী। এছাড়া মানুষের দীর্ঘ পরিপাকতন্ত্র আঁশ সম্বলিত উদ্ভিদজাত খাবারের ধীরে ধীরে হজম প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।

খাদ্যাভ্যাস  পরিবর্তন

১৯০০ সালের দিকেও আমেরিকানরা মূলত নিরামিষভোজী ছিলেন, তাদের খাদ্য তালিকার দুই-তৃতীয়াংশ প্রোটিন বা আমিষ আসতো উদ্ভিদজাত খাবার থেকে। আর বর্তমানে আমেরিকানদের খাদ্য তালিকার দুই-তৃতীয়াংশ প্রোটিন আসে মাছ, মাংস, ডিম বা দুধ থেকে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রেফ্রিজারেটরের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে প্রাণিজ প্রোটিনের ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যাভ্যাসে এই পরিবর্তনের ফলে আমেরিকানদের মধ্যে মেদ-স্থূলতা, করোনারি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সারসহ অন্যান্য অসুখ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে আমাদের খ্যাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এসেছে। অতিরিক্ত ফাস্টফুড, মাংস ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের দেশেও  করোনারি হৃদরোগউচ্চ রক্তচাপ ও  ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।

ফ্যাটের ধরন/প্রকারভেদ

করোনারি ধমনীতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল জমে জমে ব্লকেজ তৈরির পেছনে চর্বি জাতীয় ও তৈলাক্ত খাবারের ভূমিকা এখন বিভিন্নভাবে প্রমানিত। প্রত্যেক চর্বিজাতীয় খাবারে ৩ ধরনের চর্বি বা ফ্যাট থাকে - স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। স্যাচুরেটেড ফ্যাট অত্যন্ত ক্ষতিকর কারণ এই ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল লেভেল বাড়ায়। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট উপকারি কেননা এগুলো রক্তের কোলেস্টেরল লেভেল বাড়ায় না বরং কখনো কখনো কমায়।

কোলেস্টেরল প্রধানত ২ ধরনের - এইচডিএল কোলেস্টেরল ও  এলডিএল কোলেস্টেরল। এইচডিএল কোলেস্টেরলকে বলা হয় ভালো কোলেস্টেরল আর এলডিএল কোলেস্টেরলকে বলা হয় খারাপ কোলেস্টেরল । এই এলডিএল কোলেস্টেরলই করোনারি ধমনীতে জমে জমে ব্লকেজ তৈরি করে।

কোন কোন খাবার বর্জন করবেন

যে সকল খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে সেগুলো বর্জন করতে হবে যেমন, গরুর মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, ডিমের কুসুম, কলিজা, মগজ (ব্রেন), হাঁস ও মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, মাখন, ঘি, ডালডা, মার্জারিন, চিংড়ি, নারিকেল, দুধের সর, বড় মাছের মাথা। হৃদরোগীরা এই সকল খাবার অবশ্যই বর্জন করবেন। আর যারা হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে চান তারা যত কম খাবেন তত ভালো।

কোন কোন খাবার খাবেন

সব ধরণের ডাল, সব ধরণের শাক ও সবজি, ফল, সালাদ বেশি বেশি খাবেন। এছাড়া প্রতিদিন এক কাপ টকদই, ৫০ গ্রাম যেকোনো ধরণের বাদাম, ১ গ্লাস সয়াদুধ, রসুনের ১টি কোষ, স্পিরুলিনা ও লেবু খাবেন। ভাত বা রুটি খাবেন পরিমিত।

কতটুকু খাবেন

সবসময় পরিমিত খাবার খাবেন। এ ব্যাপারে নবীজীর (স.) একটি হাদিস আমরা অনুসরণ করতে পারি। তিনি বলেছেন, তুমি তোমার পাকস্থলির এক-তৃতীয়াংশ খাবার ও এক-তৃতীয়াংশ পানীয় দ্বারা পূণর্ করো। আর বাকী এক-তৃতীয়াংশ ফাঁকা রাখো।

দীর্ঘ নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে, এভাবে খাবার গ্রহণ করলে শরীরের ওজন সব সময় নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কখন খাবেন

সকাল বেলা তুলনামূলক বেশি নাশতা করুন, দুপুরে তৃপ্তির সাথে খান এবং রাতে খুব হালকা খাবার গ্রহণ করুন।

কীভাবে খাবেন

        সপ্তাহে ২ দিন : ভাত/ রুটি, ডাল, শাক, সবজি, সালাদ, ফল, ছোট মাছ

        সপ্তাহে ২ দিন : ভাত/ রুটি, ডাল, শাক, সবজি, সালাদফল, বড় মাছ বা সামুদ্রিক মাছ

        সপ্তাহে ১ দিন : ভাত/ রুটি, ডাল, শাক, সবজি, সালাদ,ফল, সালাদ, মুরগীর মাংস

        সপ্তাহে ২ দিন : ভাত/ রুটি, ডাল, শাক, সবজি, সালাদ, ফল, ভর্তা

 

    প্রতিদিন ২/৩ ধরনের মৌসুমি ফল খাওয়া উচিত।

লেখক : কোঅর্ডিনেটর, কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব।

ডব্লিউএন