ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

বিষমুক্ত খাবারের সন্ধানে- শেষ পর্ব

প্রকাশিত : ০৬:০৯ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০১:২১ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

গ্রামাঞ্চলের মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে বাড়ির আঙ্গিনায় শিম, বেগুন, মুলা, ধনিয়া ইত্যাদি সবজি চাষ করে থাকেন। ভালো ফসলের জন্য তারা গোবর কিংবা অন্য জৈব সার ব্যবহার করেন। নিজেদের সংগ্রহে রাখা বীজ ব্যবহার করেন, যেগুলো পোকার আক্রমণ থেকে নিজেরা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। কিন্তু ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যেসব ফসল ফলানো হয় তাতে জৈব সার ব্যবহার করা হয় না। সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিক সারের পাশাপাশি কীটনাশক এবং হরমোন ব্যবহার করা হয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। যার ফলে উৎপাদিত ফসল থেকে মানুষের শরীরে ঢুকছে বিষ।

এ ধারণা পাল্টে দিতে কাজ করছে প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র। খুব অল্প পরিসরে হলেও রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের মাধ্যমে চাষ করার পদ্ধতি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে তারা। কৃষকদের বুঝিয়ে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে উৎসাহী করছে প্রাকৃতিক বিপণন কেন্দ্র।  ‍

ভোক্তাদের জন্য বিষমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে না পারলে সবাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে বলে জানান প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের প্রধান উদ্যোক্তা দেলোয়ার জাহান। তাই ভোক্তাদের বিষয়টি মাথায় রেখেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’ স্থাপন করেছেন দেলোয়ার জাহান।  

বিষমুক্ত ফসল সংগ্রহ

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, টাইঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, বান্দরবান, সুনামগঞ্জ, নওগা এবং পটুয়াখালিসহ আরোও বেশ কিছু জায়গা থেকে সংগ্রহ করে।         

নিজস্ব লিজ নেয়া জমি  

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হাজিপুর গ্রামে সাড়ে চার বিঘা জমি লিজ নিয়েছে। লিজ নেয়া জমিতে জৈব চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে ফসল ফলানো হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা ‍হচ্ছে।

পরিবহন

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের এ খাদ্য পণ্যগুলো সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহ করার পর বাস অথবা পিকআপের মাধ্যমে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

ক্রেতা কারা

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র থেকে সাধারণত মধ্যবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণির ক্রেতারা শাক সবজি, মাছ ও ফলমুল কেনেন। তবে বিশেষ করে রোগী ও বাচ্চাদের জন্য এখান থেকে বেশি পারিমাণ খাদ্যপণ্য কেনা হয়। এর বাইরে ডাক্তার, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের অনেকেই এখান থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করেন।   

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র থেকে নিয়মিত বাজার করেন সরকারী কর্মকর্তা শফিকুল আলম। এর কারণ সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সবাই চায় রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি, মাছ ও ফলমূল কিনতে। কিন্তু অনেক সময় তা সম্ভব হয়ে উঠে না। অধিকন্তু ফলে ফরমালিন যেন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম শোচনীয় মুহূর্তে শিক্ষিত কিছু ছেলেমেয়ে আমাদের হাতে রাসায়নিক সারমুক্ত সবজি তুলে দিচ্ছে এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ কারণেই আমি নিয়মিত এখান থেকে আমার পরিবারের জন্য বাজার করে থাকি। কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখি। নিদির্ষ্ট দিন এসে সেটা নিয়ে যাই।‘

এর বাইরে বিভিন্ন উপায়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্রেতা এখানে এসে হাজির হন এখানে।

প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে দেলোয়ার জাহান বলেন, “এ ধরনের উদ্যোগকে বাণ্যিজিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা চাই প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় প্রাকৃতিক কৃষির প্রতি সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। আমরা সেই কৃষি চাই, যে কৃষি হবে প্রতিটি প্রাণির জন্য নিরাপদ।”

এম/ডব্লিউএন