ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

জবা ফুলের চা পান করেছেন কখনও?

প্রকাশিত : ০৮:১৪ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার

চা পান করেন না এমন মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম। চায়ের মধ্যে শরীরের জন্য অনেক উপকারী ও দরকারি উপাদান রয়েছে। আর একবার চায়ের অভ্যাস হয়ে গেলে তো কথাই নেই। তবে লাভ-ক্ষতি হিসেব করতে করতে চায়ের মধ্যেও ভিন্নতা এসেছে। চা পানের ক্ষেত্রেও সচেতনা বেড়েছে। একের মধ্যে দুই পাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এজন্য অনেকে আমলকি চা, তুলসি চা কিংবা অন্য কোনো উপকারী ভেষজ দিয়ে বানানো চা পানের দিকে ঝুঁকছেন। তবে জবা ফুলের চা’য়ের বিষয়টি একেবারে নতুন। অনেকের কাছে তা অবাক করার মতো বিষয়।

জবা ফুলের চায়ে কি কি উপকারী উপাদান সে সম্পর্কে আমাদের ভালো জানাও নেই। আর্গুয়ে দা জামাইকা নামে পরিচিত জবা ফুল দিয়ে বানানো চা‘য়ে এমন সব উপকারি উপাদানের সন্ধান মেলে যেগুলো নানা রোগ থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত বাঁচিয়ে দেয়। সেই কারণেই সারা বিশ্বে এই চায়ের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে।

জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খেলে সাধারণত যে উপকার পাওয়া যায়-

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে

আজকাল অফিসে কাজের চাপে ব্লাড প্রেসার আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই তো অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই কারও কারও লো তো কারও হাই হতে শুরু করে রক্তচাপ। সে কারণেই তো আজকের পরিস্থিতিতে জবা ফুলের চা খাওয়ার প্রয়োজন বেড়েছে। প্রসঙ্গত, আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশ করা এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় এই বিশেষ চা’য়ে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ নিমেষে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়

আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে ব্লাড প্রেসারের বেস্ট ফ্রেন্ড হলো কোলেস্টেরল। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে, যেসব ছেলে-মেয়ে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেন, তাদের বেশিরভাগকে দিনের নানা সময় কাজ করতে হয়। ফলে কাজের চাপে একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসার ঊর্ধ্বমুখী হয়, তেমনি অন্যদিকে এদিক-সেদিকের খাবার খাওয়ার কারণে রক্তে বাড়তে শুরু করে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। ফলে হার্টের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে কম বয়সে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। এমন পরিস্থিতির শিকার যদি আপনি হতে না চান, তাহলে আজ থেকেই জবা ফুলের চা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হার্টের কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ এই পানীয়টি ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ব্রেন এবং হার্টের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ে

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে জবা ফুলে উপস্থিত অ্যান্টিক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তে ভেসে বেরানো টক্সিক উপাদানদের বার করে দেয়। ফলে লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে আরও অনেক উপকার মেলে। যেমন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ 

জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড, যা একদিকে যেমন ভিটামিন সি-এর ঘাটতি মেটায়, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এখানেই শেষ নয়, এই চায়ের অন্দরে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরের অন্দর মহলে প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও বাঁচায়। সেই কারণেই তো সর্দি-জ্বরের প্রকোপ কমাতে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়ার পরামর্শ দেন।

পিরিয়ডের কষ্ট কমায়

মাসের এই বিশেষ সময় যদি নিয়মিত জবা ফুল দিয়ে বানানো চা খাওয়া যায়, তাহলে পিরিয়ড ক্র্যাম্প এবং যন্ত্রণা অনেকটাই কমে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অস্বস্তিও দূর হয়। প্রসঙ্গত, হরমোনাল ইমব্যালেন্স কমাতেও এই পানীয়টি দারুন কাজে আসে। তাই মেয়েরা যদি প্রতিদিন এই চা পান করতে পারেন, তাহলে দারুন উপকার মেলে।

মানসিক অবসাদ কমায়

নানা কারণে মনটা কি বেজায় খারাপ? তাহলে ঝটপট এক কাপ হিবিস্কাস টি বানিয়ে ফেলে পান করে ফেলুন। এমনটা করলে দেখবেন মুড একেবার ফ্রেশ হয়ে যাবে। কারণ এতে উপস্থিত উপকারি ভিটামিন এবং মিনারেল নার্ভাস সিস্টেমে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি অ্যাংজাইটি কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডিপ্রেশন কমতে সময় লাগে না।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে দিয়ে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘাটতে এই পানীয়টির বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে জবা ফুলে উপস্থিত ডিউরেটিক প্রপাটিজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমাতেও এই ঘরোয়া ঔষুধটি দারুন কাজে আসে কিন্তু!

 

ওজন কমায়

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত হিবিস্কাস টি খেলে শরীরে শর্করা এবং স্টার্চের শোষণ কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। তবে এখানেই শেষ নয়, বেশ কয়েকজন গবেষক এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আরেকটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। তাদের মতে জবা ফুলের চায়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে অ্যামিলেস নামক একটি উপাদানের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

সূত্র : বোল্ডস্কাই।

ডব্লিউএন