ক্যাম্পের বাইরে আত্মীয়দের কাছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা
জাহাঙ্গীর আলম, টেকনাফ থেকে :
প্রকাশিত : ০৭:১২ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃসংশতা থেকে সম্প্রতি জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে এখনও আশ্রয় শিবিরের বাইরে অবস্থান করছেন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা আত্মীয়দের আশ্রয়ে রয়েছেন তারা। এদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকের বসবাস টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নে।
বাহারছড়া হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি ইউনিয়ন। এখানকার শামলাপুর বাজারের পাশে একটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আছে। এই অবতরণ কেন্দ্র দিয়ে নৌ পথে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই পথে যেসব রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে তাদেরই একটি অংশ অবস্থান করছে বাহারছড়া ইউনিয়নে।
বাহারছড়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গারা বিগত গত আট থেকে দশ বছর ধরে অত্র এলাকায় অবস্থান করছেন। ক্যাম্পের সুযোগ সুবিধা রেখে নিজদের মত করে তারা আয় রোজগারের পথ তৈরি করেছেন।
এদের একজন ষাটোর্ধ্ব নুরুল আমিন। তিনি জানান, রাখাইনের মংডুর দক্ষিণে সীতাপাড়ায় অনেক জমি-জমা ছিল তাদের। ১৯৯১ সালে শরণার্থী হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে। জমি, ঘর-বাড়ি ফিরে পাবেন তিন— জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এই আশ্বাসে দুই বছর পর মিয়ানমারে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি, উল্টো বাংলাদেশ ফেরত রোহিঙ্গা হিসেবে সব সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকতে হয়েছে তাকে।
তিনি ইটিভি অনলাইনকে বলেন, ক্যাম্পে প্রথম দিকে কোনো সুযোগ সুবিধা ছিলো না। কেউ কোনো সহযোগিতা করত না। এখানে থাকলে স্থানীয়দের মাছ ধরার নৌকায় কাজ পাই। এখন আমার দুই ছেলে মাছ ধরে ভালোভাবেই জীবন চালাচ্ছে।
বাহার ছড়ায় নিজের বোনের ঘরে এসে উঠেছেন পাঁচ সন্তানের জননী মংডুর রহিমা খাতুন। আত্মীয়তার সূত্র ধরে বসবাস করছেন এখানে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসার আগে পালাতে গিয়ে তার স্বামী ও মেয়ে মিয়ানমার সেনা-পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।
বাহারছড়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা আই্ওএমসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলো স্যানিটেশন, খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেছে। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য চালু করা হয়েছে শিশুবান্ধব কেন্দ্র। এই রকম একটি কেন্দ্রের প্রশিক্ষক জামাল হোসেন জানিযেছেন, ক্যাম্পের শিশুদের তুলনায় এখানকার শিশুরা বেশিসুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।
জামাল হোসেন আরো জানান, বাহারছড়া ইউনিয়নে এখন প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। যার মধ্যে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে গত ২৫ আগষ্টের পর। অপর রোহিঙ্গারা এসেছে গত দশ বছরে ধরে।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলভী আবদুল আজিজ জানিয়েছেন, বিগত সময়ে যে সব রোহিঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ রাস্তা ও হাট বাজারে অবস্থান করেছে তাদেরকে আইওএমের সহায়তায় সরিয়ে এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনকার রোহিঙ্গারা সবাই গত বছর শুরু হওয়া রোহিঙ্গা শুমারির অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। সদ্য আসারাও প্রশাসনের সহযোগিতায় উখিয়ার বালুখালিতে সরকার নির্ধারিত স্থান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যাচ্ছে।
জেএ/ডব্লিউএন