পরিবেশ দূষণে মৃত্যুর শীর্ষে বাংলাদেশ ও সোমালিয়া
প্রকাশিত : ০৬:০৪ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার
বিশ্বে প্রতি বছর ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে পরিবেশ দূষণের কারণে। আর পরিবেশ দূষণে মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশ ও সোমালিয়া সবার উপরে রয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট এর দাবি, বাংলাদেশ ও সোমালিয়ায় মোট মৃত্যুর প্রায় ২৮ শতাংশ পরিবেশ দূষণজনিত রোগের কারণে হয়।
ল্যানসেট এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী ৯০ লাখ মানুষ মারা গেছে পরিবেশ দূষণের কারণে। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশে। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ ও সোমালিয়া।
অপরদিকে দূষণে ব্রুনাইয়ে সবচেয়ে কম মানুষের মৃত্যু হয়। দেশটিতে মোট মৃত্যুর মাত্র আড়াই শতাংশের কারণ পরিবেশ দূষণ, সুইডেনে এই হার প্রায় চার শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ পরিবেশ দূষণে শীর্ষে থাকা দেশগুলো হচ্ছে যথাক্রমে: বাংলাদেশ, সোমালিয়া, চাদ, নাইজার, নেপাল, দক্ষিণ সুদান, ইরিত্রিয়া, মাদাগাস্কার, পাকিস্তান। পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত সমস্যায় মৃত্যুর দিক থেকে এই দেশগুলো শীর্ষে রয়েছে।
আর পরিবেশ দূষণের ফলে সবচেয়ে কম মৃত্যু হচ্ছে এমন দেশের তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছে: ব্রুনাই, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, বার্বাডোজ, নিউজিল্যান্ড, ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো, কানাডা, আইসল্যান্ড, বাহামা, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য।
দূষণ জনিত কারণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হওয়া দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান পঞ্চম, চীন আছে ষোড়শ স্থানে।
যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর দূষণ জনিত কারণে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, তালিকায় ৫৫তম স্থানে রয়েছে দেশটি। আর যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৫৫ হাজার মানুষ দূষণ জনিত কারণে মারা যায়।
প্রতিবেদনটির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব রাখছে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যুই বায়ু দূষণের কারণে হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
দূষণ জনিত মৃত্যুতে সবচেয় বড় ভূমিকা বায়ু দূষণের, যা মোট মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। প্রতি বছর বায়ু দূষণের কারণে ৬৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
পরিবেশ দূষণের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়।
ল্যানসেটের প্রধান গবেষক আইকন স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক ফিলিপ ল্যান্ডরিগান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের চেয়ে পরিবেশ দূষণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নানা দিক দিয়ে মানবজাতির স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর একটি গভীর ও বিস্তৃত হুমকি।”
বায়ু দূষণের পরই পানি দূষণের অবস্থান। প্রতি বছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষ পানি দূষণ জনিত রোগে ভুগে মারা যান। কর্মক্ষেত্রে দূষণ ৮ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
বাংলাদেশে পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ আর্সেনিক। দেশটির প্রায় পাঁচ কোটি ৭০ লাখ মানুষ যে পানি ব্যবহার করে সেখানে আর্সেনিকের মাত্রা প্রতি লিটারে ৫০ মাইক্রোগ্রাম। যেখানে ডব্লিউএইচও নির্ধারিত সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটার ১০ মাইক্রোগ্রাম।
তবে ভারত ও চীনের মত দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এ ধরণের মৃত্যুর হার বাড়ছে।
১৮৮ দেশের উপর দুই বছর ধরে গবেষণার পর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সূত্র : বিবিসি।
ডব্লিউএন