ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৪ ১৪৩১

বিবিসির বিশ্নেষণ

কাতালোনিয়া স্পেন ছাড়লে কার লাভ কার ক্ষতি?

প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার

দীর্ঘদিনের স্বায়ত্ত্বশাসিত কাতালোনিয়া গণভোটের পর স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার পরপরই  সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করেছে স্পেন। ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্ট। ঘোষণা করা হয়েছে নতুন নির্বাচনের তারিখ।


কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন ও তার সরকারকে অপসারণ করে স্পেনের উপপ্রধানমন্ত্রী সোরায়া সায়েঞ্জ দে সান্তামারিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে শাসনভার। কাতালোনিয়া ও স্পেন এখন মুখোমুখি। স্পেন থেকে কাতালোনিয়া শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বেশ কিছু বিষয় দু`পক্ষেরই হাতছাড়া হয়ে যাবে। স্বাধীনতার তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে কাতালোনিয়ানরা। আর স্পেন একটি অঞ্চল হারাবে, বাজেটও কাটা পড়বে। বিবিসির বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে।
 
কাতালোনিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে স্পেন হারাবে তার সবচেয়ে উন্নত অর্থনৈতিক এলাকা। তার বাজেটের ৮ শতাংশই কমে যাবে। জিডিপি কমে যাবে ১৯ শতাংশ। স্পেনের বিভিন্ন কোম্পানি ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যবসা হারাবে। স্প্যানিশদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে ব্যাপক ধস নামবে। স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাতালোনিয়ার অর্থে বিপুল গবেষণা হয়ে থাকে।

বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) সদস্যপদ ও এতে যুক্ত থাকার সুযোগ-সুবিধা হারাবে কাতালোনিয়া। আর ইইউতে না থাকতে পারলে, ইউরোপের অর্থনৈতিক জোনের একক বাজারের সুবিধাও পাবে না। ইইউর চাহিদা, শর্ত পূরণ করে এসব সুবিধা ফিরে পেতে অনেক বছর সময় লাগবে কাতালোনিয়ার।
এসব সুবিধা ফিরে পেতে কাতালোনিয়া যদি ছাড় পায়, তাহলে কাতালোনিয়ার পথে হাঁটতে পারে জার্মানিয়ার ভ্যাবারিয়া কিংবা ইতালির লোম্বার্ডি। স্বাধীনতার দাবি তুলবে এবং আশা করবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর তারা ইইউ থেকে একইভাবে সাময়িকভাবে হারানো সুবিধা ফিরে পাবে। তাই কাতালোনিয়ার পক্ষে ইইউর এ ধরনের সিদ্ধান্ত এ জোটের প্রভাবশালী সদস্য স্পেন, জার্মানি ও ইতালিকে নিশ্চিতভাবেই নাখোশ করবে। ফলে সদস্যপদ পাওয়া যে দীর্ঘ জটিলতার মধ্যে পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

আর কাতালোনিয়ার ইইউ থেকে বাইরে ছিটকে পড়াটা হবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি। একক বাজারে না থাকায় কাতালোনিয়া ইউরোপে ভিসা ও শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। কাতালোনিয়ার পণ্য ইউরোপে মুক্তভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হবে না। ইউরোপের রিসার্চ প্রোগ্রামে কাতালোনিয়ার কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অংশ নিতে পারবে না। এ প্রোগ্রামটি কাতালোনিয়ার অনেক গবেষণার আর্থিক পৃষ্ঠপোষক।

ইউরো জোনের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের নিরাপত্তা জাল থেকেও ছিটকে পড়বে কাতালোনিয়া। এতে স্বাধীনতার পর প্রথম তিন মাস হয়তো তারা নিজের সরকারি কর্মচারীদের বেতনই দিতে পারবে না।

কাতালোনিয়া দাবি করে থাকে, স্পেনের বাজেটে ১ হাজার ৬০০ কোটি ইউরো দিয়ে থাকে। কিন্তু কাতালোনিয়া স্বাধীন হওয়ার পরপরই যে এই পরিমাণ অর্থ হাতে পাবে, তার সুযোগ কম। কারণ এ এলাকার সামরিক, সামজিক নিরাপত্তা ও অবসর ভাতা বাবদ অনেক অর্থই স্পেন দিচ্ছে, কাতালান বিচ্ছিন্ন হলে এসব খাতে অর্থ ব্যয় করতে হবে। এজন্য আরও ৮০০ কোটি ডলার লাগবে। কাতালোনিয়া থেকে অনেক কোম্পানি চলে যাবে মাদ্রিদে, একই সঙ্গে অনেক কোম্পানি কাতালোনিয়াকে বয়কট করবে। এর ক্ষতিও কাতালোনিয়াকে স্বীকার করে নিতে হবে।


/ এআর /