২০২৪ সালের মধ্যে দেশ দারিদ্রমুক্ত হবে: অর্থমন্ত্রী
প্রকাশিত : ০৬:১৬ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার
বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণে শতভাগ সাফল্য অর্জন করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রোববার দুপুরে আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত উন্নয়ন মেলা-২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ছয় দিনের এ উন্নয়ন মেলার আয়োজক পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফের সভাপতি কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এ সময় পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিমসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে দরিদ্র জনসংখ্যা এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে নামেনি। এখনও ৩ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। যা মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। তবে এ দারিদ্র্যতা ২০২৪ সালের মধ্যে থাকবে না।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ- জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনতে চাই। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় পরিচয়, এ সরকার জনসেবা নিবেদিত সরকার। আর সরকারের এ জনসেবা নীতি যতদিন থাকবে ততদিন দেশে উন্নয়ন হতে থাকবে।
উন্নয়ন মেলার আয়োজক পিকেএসএফের প্রশংসা করে আবদুল মুহিত বলেন, পিকেএসএফ ২৭ বছর হয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তাদের ২৭৭টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দারিদ্র দূরীকরণের জন্য সময় উপযোগী একটি প্রকল্প পিকেএসএফ গত ২০১০ সালে সমৃদ্ধি কার্যক্রম শুরু করে। যা করতে গিয়ে পিকেএসএফকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। এখন সে ঢেলে সাজানোর সুফল আসতে শুরু করেছে। পিকেএসএফ অনেককে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করেছে। সমাজের উন্নয়নে অনেক নিবেদিত ব্যক্তিকে সম্মাননা দিয়ে সমৃ্দ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত ও অর্থবহ করেছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি অর্জন করেছি। এখন শেখ হাসিনার সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে কাজ করছে। উন্নয়নের ইতিহাস ঘাঁটলে জনগণ দেখতে পাবে কারা উন্নয়ন করেছে।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশে ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন আছে। পিকেএসএফ ১৫৩টি ইউনিয়নে কাজ করছে। তাই পিকেএসএফের আরও পথ পাড়ি দিতে হবে। আমি মনে করি দেশের টেকসই উন্নয়নে পিকেএসএফ আরও এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, উন্নয়ন সংস্থাগুলো সরকারের সহায়ক হিসেবে কাজ করে এটা আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু এটাও জানি যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো সরকারের থেকে বড় কিছু না। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, কোন সংস্থার ইন্ধনে যদি পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক পিছিয়ে যায়, তবে আমরাও প্রমাণ করতে পারি যে, আমরা কারো সহযোগিতা ছাড়াই মাথা উঁচু রাখতে পারি। নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ তারই বাস্তব উদাহরণ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ বলেন, পিকেএসএফ দেশের দরিদ্র্য মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে ৫২ হাজার নারী-পুরুষকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১ হাজার ভিক্ষুককে অর্থায়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করেছে। তবে ১ জন ভিক্ষুক আবার তার ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছে। আর ১৯জন ভিক্ষুক ভালভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বাকি ৯৮০ জন ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছে। আমাদের সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র আছে। তবে আমি মনে করি দেশের প্রকৃত উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। এর জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কাজের গতি বাড়াতে হবে।
পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিম বলেন, পিকেএসএফ গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এরইমধ্যে পিকেএসএফ যে সফলতা দেখিয়েছে তা দেশের জনগণের কাছে স্পষ্ট। তাই পিকেএসএফ আরও কার্যক্রম বাড়াতে চাই। সেজন্য সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতার ধারাবাহিকতা থাকবে বলে আমি মনে করি।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা ও আইটি, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৯০টি প্রতিষ্ঠানের ১৩৩টি স্টল মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলা রোজ সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আরকে // এআর