ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

৪৪-এ সাবেক বিশ্বসুন্দরী

সালমানের রক্তাক্ত প্রেম ও ঐশ্বরিয়ার সংসার

প্রকাশিত : ০৪:২২ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৪:৩৭ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনের ৪৪ তম জন্মদিন আজ (১ নভেম্বর)। জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলিউডের তারকারা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পরিচালক করণ জোহর ও অভিনেত্রী  মালাইকা অরোরা।

তবে ঐশ্বরিয়া ভক্তদের মনে প্রশ্ন স্ত্রীর জন্মদিনে কি পরিকল্পনা অভিষেকের? এ বিষয়ে জানা গেছে- জন্মদিনে একের পর এক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে ঐশ্বরিয়ার জন্য। তবে সেগুলো কী তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। জানা গেলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে?

তবে ঘটা করে নয়, বরং পরিবারের সঙ্গে একান্তে জন্মদিন পালন করবেন বচ্চন বধু। কারণ গত মার্চ মাসে মারা গেছেন ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনের বাবা। এর আগে শ্বশুর অমিতাভ বচ্চনও পরিবারের সঙ্গে একান্তে নিজের জন্মদিন পালন করেছিলেন। স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে, বউমা ও নাতনিদের নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন মালদ্বীপ।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর-জন্মদিনে মায়ের জন্য তার প্রিয় কেকের অর্ডার দিয়েছেন আরাধ্য। অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠ লোকেরা জানিয়েছেন, জন্মদিন বলে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই ঐশ্বরিয়ার। তবে গতবারের মতো এবারও জন্মদিনে দুঃস্থ ছেলে-মেয়েদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন সাবেক এই বিশ্বসুন্দরী।

এদিন সকালে আরাধ্যকে স্কুলে দিয়ে মা বৃন্দা রাইয়ের কাছে চলে যান ঐর্শ্বযা। একসঙ্গে দুজনে অনেক সময় কাটান। এছাড়া আজ তার মন্দিরে যাওয়ার কথা। এরপর পরিবারের সঙ্গে কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করবেন বচ্চন বধূ ৷ অপরদিকে স্ত্রীকে ডিনারে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান বানিয়েছেন অভিষেক।

এতো গেলো ঐশ্বরিয়ার বর্তমান অবস্থার কথা। সংসার নিয়ে সুখেই আছেন তিনি। কিন্তু অতীতে এই সুন্দরীকে ঘিরে বলিউড তারকা সালমান খানের রয়েছে এক বেদনাবহুল কাহিনী। একসময় ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে গভীর প্রেম ছিল বলিউড তারকা সালমান খানের। সেই প্রেম উপাখ্যান সবারই জানা আছে। বলিউডে সবচেয়ে আলোচিত প্রেমকাহিনিগুলোর মধ্যে অ্যাশ-সাল্লুর ভালোবাসা অন্যতম।

একটা সময় ছিলো যখন ঐশ্বরিয়ার প্রেমে পাগল ছিলেন সালমান। রক্ত দিয়ে তিনি লিখেছিলেন তাঁর ভালোবাসার কথা।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ঐশ্বরিয়ার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ নভেম্বর। ১৯৯৭ সাল থেকে সালমান আর ঐশ্বরিয়ার প্রেমের গল্পগাথা শুরু। তার আগে বলিউডের ভাইজান অভিনেত্রী সোমি আলীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। এমনকি সাল্লু মিয়া তাঁর প্রেমিকা সোমির বিষয়ে খুবই আবেগপ্রবণ ছিলেন। একদিন তাঁর নজরে আসেন অ্যাশ। সালমান তখন রীতিমতো তারকা। আর রাই সুন্দরী তখন তাঁর বলিউড ক্যারিয়ার সবে শুরু করছেন। ঐশ্বরিয়াকে দেখার পর সালমান তাঁর প্রেমিকা সোমির সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দেন।

শোনা গেছে, সালমান মনসুর আলীর ‘জোশ’ ছবিটি ফিরিয়ে দেন শুধু অ্যাশের জন্যই। কারণ, এই ছবিতে তাঁকে সাবেক বিশ্বসুন্দরীর ভাইয়ের চরিত্র দেওয়া হয়েছিল। পরে এই চরিত্রটি করেন শাহরুখ খান।

আরও শোনা গেছে, সালমান বলিউড সুন্দরীর ক্যারিয়ারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেন। ছবির প্রযোজকদের তিনি অনুরোধ করতেন তাঁদের ছবিতে অ্যাশকে নেওয়ার জন্য। সালমানের হাত ধরেই বড় সুযোগ পান ঐশ্বরিয়া। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ ছবির নায়িকা হন এই বলিউড অভিনেত্রী। সাল্লু ভাই তাঁর বন্ধু বানসালির কাছে অ্যাশের নাম প্রস্তাব করেন। ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমার শুটিং চলার সময় একে অপরকে মন দিয়ে বসেন। সালমান-অ্যাশ পরস্পরের কাছে আসেন। তাঁদের মধ্যে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। এমনকি সালমানের ব্যক্তিগত জীবনেও অ্যাশের দারুণ প্রভাব ছিল। সাবেক বিশ্বসুন্দরী ধীরে ধীরে খান খানদানের একজন হয়ে ওঠেন।

সালমানের বন্ধুরা ঐশ্বরিয়াকে ‘ভাবি’ বলেও সম্বোধন করতেন। কিন্তু রাই পরিবার কখনোই সালমানের সঙ্গে তাদের মেয়ের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। অ্যাশকে তারা সালমানের থেকে দূরে থাকতে বলে। আর এই কারণে বলিউড সুন্দরী রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে আলাদা থাকা শুরু করেন। এরপর বলিউডের ভাইজান তাঁদের প্রেমকে বিয়ের রূপ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঐশ্বরিয়া বেঁকে বসেন। তিনি চেয়েছিলেন মন দিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে। তাই বিয়ের প্রস্তাব অ্যাশ ফিরিয়ে দেন। সালমান বলিউড সুন্দরীকে রাজি করানোর জন্য গভীর রাতে তাঁর ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হন। এমনকি এই বলিউড তারকা রাগে অন্ধ হয়ে গিয়ে ১৯তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। কিন্তু কিছুতেই অ্যাশ সেদিন তাঁর ফ্ল্যাটের দরজা খোলেননি।

সকাল পর্যন্ত সালমান সাবেক বিশ্বসুন্দরীর ফ্ল্যাটের দরজা পেটাতে থাকেন। এর ফলে তাঁর হাত রক্তাক্ত হয়ে যায়। ঐশ্বরিয়ার বাবা সাল্লু মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এই ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে সালমানের সাবেক প্রেমিকা সোমি তাঁকে ফোন করে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য অনুরোধ করেন। সোমির বাবার অপারেশনের জন্য বলিউডের ভাইজান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ঐশ্বরিয়া বিষয়টি পরে জানতে পেরে ভীষণ কষ্ট পান। তিনি স্থির করেন আর সালমানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবেন না। এরপর সাল্লু যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে সোজা অ্যাশের ‘কুছ না কহো’ ছবির সেটে হানা দেন। এমনকি সেটের মধ্যে বলিউড সুন্দরীর সঙ্গে অপ্রীতিকর আচরণ করেন। ঐশ্বরিয়ার এই ছবির নায়ক ছিলেন অভিষেক বচ্চন।

শোনা গেছে, জুনিয়র বচ্চনের গাড়িও নাকি ভাঙচুর করেন সালমান। এরপর অ্যাশ তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দেন। শুরু হয় নতুন প্রেমের গল্প। অভিষেক ও ঐশ্বরিয়া একসঙ্গে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। তবে বচ্চন-রাই জুটির শুরুর দিকের ছবি ‘ঢাই অক্ষর প্রেম কি’ এবং ‘কুছ না কহো’র সময় তাঁদের মধ্যে রোমান্স শুরু হয়নি। তখন জুনিয়ার বচ্চনের সঙ্গে বলিউড অভিনেত্রী কারিশমা কাপুরের বিয়ে হওয়ার কথা। এমনকি তাঁদের আশীর্বাদ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়নি।

আসলে অভিষেক এবং অ্যাশের যখন দেখা হয় তখন দুজনেই সবে নিজেদের আগের সম্পর্ক থেকে বেরিয়েছেন। সালমান খানের সঙ্গে ঐশ্বর্যের সম্পর্ক ভাঙার পর উনি সেই সময় বেশ বিষণ্ণ। অন্যদিকে কারিশমার সঙ্গে বিয়ে অবধি ঠিক হয়ে গিয়েছিল অভিষেকের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই বিয়ে ভেঙে যায়।

অবশেষে টরেন্টোতে `গুরু `ছবির প্রেমিয়ারের পর নিউইয়র্কে অভিষেক ঐশ্বর্য্যকে হাঁটু গেড়ে বসে আংটি দিয়ে একেবারে ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করেন। অ্যাশ সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রপোজালে সম্মতি দেন। শুনলে আশ্চর্য হবেন অভিষেক কিন্তু অ্যাশকে কোন দামি হীরের আংটি দেন নি এই সময়। উনি `গুরু `ছবিতে ব্যবহৃত একটা সাধারণ আংটি দিয়ে প্রপোজ করেছিলেন। অবশেষে ২০ এপ্রিল ২০০৭ সালে বিয়ে করেন তারা। এরপর থেকে সুখের সংসার। ঘর আলো করে আসেন আরাধ্য।

অন্যদিকে সালমান এখনও ছন্নছাড়া। আজকে ক্যাটরিনার পিছু নেওয়া তো কাল নতুন কোনো নায়িকার। ঘর বাধা আর হয়ে উঠেনি। সালমান শেষ পর্যন্ত চিরকুমারই থেকে যাবেন কিনা নিয়তিই তা বলতে পারবে।

এসএ/