ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৩ ১৪৩১

বেলফোর ঘোষণার শতবর্ষ

তেরেসা মে-কে ফিলিস্তিনি শিশুর আবেগময় চিঠি

প্রকাশিত : ০৩:২৯ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৩৯ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

কয়েকদিন পরেই বেলফোর ঘোষণার শতবর্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে এতে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসে মে। যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে যৌথভাবে দিনটি উদযাপন করে আসছে।

মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মূল কারণ বেলফোর ঘোষণা, এমন অভিযোগ তোলে শতবর্ষ ধরে দিনটিকে ‘কালোদিবস’ হিসেবে মনে করে ফিলিস্তিনিরা। এরই ধারাবাহিকতায় দিনটি পালন না করার আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনের ১১ বছরের ছোট্ট শিশু হালা নাসরুল্লাহ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মেকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেছে। চিঠিটি মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ মাধ্যম মিডল ইস্ট মিররে প্রকাশিত হয়েছে। চিঠিটির ভাষান্তর করেছেন ইটিভি অনলাইনের সহ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল-

‘জনাবা তেরেসা মে, আশা করি ভাল আছেন।

আমি ইতোমধ্যেই জেনেছি, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েল যৌথভাবে বেলফোর ঘোষণা দিনটি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বেলফোর ঘোষণা ছিল ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিন দখলের একটি ঘোষণা। যদিও ফিলিস্তিন কখনো বেলফোর সম্পত্তি ছিল না। এ ঘোষণার পর থেকে ফিলিস্তিন একটি দুঃখ ও মৃত্যুর সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কিভাবে এটি গর্বের সঙ্গে উদযাপন করতে যাচ্ছেন?

আপনি কি ফিলিস্তিনিদের গৃহহীন করে গর্ববোধ করেন? আপনি কি ফিলিস্তিনিদের হৃদয়, আত্মা ও মন থেকে শান্তি কেড়ে নিয়ে গর্ববোধ করেন?

আমি কাতারে বসবাস করি, আমার অনেক ব্রিটিশ বন্ধু আছে এবং আমি একটি ব্রিটিশ স্কুলে পড়াশুনা করছি। আমার বয়স মাত্র ১১ বছর । কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। আমি উপলব্ধি করি যখন আমি ও আমার বন্ধুরা গ্র্যাজুয়েশান শেষ করবো, তারা যার যার বাড়িতে চলে যাবে। কিন্তু আমার যাওয়ার মতো কোনো বাড়ি থাকবে না।

যদিও আমি কোনদিন ফিলিস্তিনে যেতে পারিনি। তারপরও আমার দাদা আমাকে তৎকালীন ফিলিস্তিনের সেই সোনালী দিনের কথা বলেন। তিনি যে গ্রামে বাস করতন, সেই গ্রামের চিত্র তুলে ধরেন। দাদা যেই গ্রামে বাস করতন তার নাম বুরাজ। এটি ছিল একটি শান্তির গ্রাম। কিন্তু এটি এখন অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি শুধু আমার বা আমার দাদার চিত্রই নয়, এ চিত্র প্রতিটি ফিলিস্তিন নাগরিকের, যারা নিজেদের ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন, যারা আজ অমানবিক জীবন-যাপন করছেন।

আমি নিশ্চিত যে, ফিলিস্তিনি ক্যাম্পগুলোতে কি হচ্ছে আপনি তা জানেন। তাদের অমানবিক জীবনের চিত্র আপনি দেখছেন।

আমার মনে হয় যে, আপনি বেলফোর ঘোষণার বিষয়ে ক্ষমা চাইবেন না, যদিও ক্ষমা চাওয়াটাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। ক্ষমা ফিলিস্তিনিদের কি আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে? ফিলিস্তিনিদের সেই সোনালী দিন কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়-ই ফিরিয়ে দিতে পারে ।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেখা যাচ্ছে আপনি বেলফোর ঘোষণার শতবর্ষ উদযাপন করতে যাচ্ছেন। এটি শান্তির পথে নতুন বাধা হয়ে দাঁড়াবে, যা অনেক মানুষের জন্য ন্যয় বিচারের পরিপন্থী।

এরপরও আমরা আশা নিয়ে বেঁচে থাকি। এই ১১ বছর বয়সে আমি কিছুই করতে পারি না । কিন্তু ফিলিস্তিনের শান্তিকামী মানুষকে সহায়তা করতে চাই। এ কারণেই আমি আপনাকে লিখছি। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে এই লজ্জাকর দিবসটি পালনে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি ।’

হালা নাসরুল্লাহ

শেরবর্ন কাতার স্কুল (কাতার)

এমজে/ এআর /