তাসকিনের বিয়ে নিয়ে কটুক্তিকারীদের একহাত নিলেন আশরাফুল
প্রকাশিত : ০৮:৩০ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার তাসকিন আহমেদ গত মঙ্গলবার গাঁটছড়া বেঁধেছেন তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা সৈয়দা রাবেয়া নাঈমার সঙ্গে। ২২ বছর বয়সী এ পেসারের বিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ তো তাসকিনের স্ত্রীকে নিয়ে কটু মন্তব্যও করছেন।
এ বিষয়ে তাসকিন কোনো মন্তব্য না করলেও চুপ করে বসে থাকতে পারেননি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তাসকিনের বিয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সমালোচনাকারীদের এক হাতে নিয়েছেন টেস্টে ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। ২১ ঘন্টা আগে দেয়া আশরাফুলের সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
“তাসকিনের বিয়ে এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে যারা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, লেখাটা তাদের জন্য।
গত মঙ্গলবার তাদের সাত বছরের সম্পর্ক বিয়েতে রূপ পেয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেখছি তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। সাধারণত যেকোনো ব্যাপারে আমি খুব একটা প্রতিক্রিয়া দিই না। তবে এবার আর কিছু না বলে থাকতে পারলাম না।
সাকিব, তামিম, মুশফিক, আমি, বা তাসকিন বিয়ে করার করার পর প্রতিবারেই আমাদের শুনতে হয় অমুক ক্রিকেটারের বৌ বুড়া, তমুক ক্রিকেটারের বৌ মোটা, অমুক ক্রিকেটারের বৌ নাক ভোচা, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাসকিন ও রেহাই পেলোনা। তাসকিন কেন অল্প বয়সেই বিয়ে করল, তার বৌ কেন সুন্দরী না, দাত বের করে কেন হাসে এসব কমেন্ট আর স্ট্যাটাসে ফেসবুক ভরে গেছে। সাথে তাসকিনকে নিয়ে ১৮ + বাজে ট্রলও দেখেছি অনেক।
আচ্ছা সংসারটা তাসকিন তার পছন্দ করা বৌয়ের সাথে করবে। সেখানে তার বৌ সুন্দরী না দাঁত বের করে হাসে এটা বলার আপনি কে? সংসার তাসকিন করবে, আপনি নন। তাসকিন যদি তার বৌয়ের সাথে সুখী থাকে তাহলে সেখানে নাক গলানোর আপনি কে? এই অধিকার কোথায় পেয়েছেন? মানছি আমরা পাবলিক ফিগার, কিন্তু তাই বলে আমরা আপনাদের আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দিয়ে দেইনি।
আমাদের পেশা ক্রিকেট খেলা। দর্শক হিসেবে আমাদের খেলা নিয়ে আপনি গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন, কিন্তু আমি কি খাব, কোন ড্রেস পড়ব, কাকে বিয়ে করব এসব নিশ্চয়েই আপনি ঠিক করে দিতে পারেননা। কার বৌ মোটা, কার বৌ বুড়ি, কার বৌয়ের দাঁত উচু এসব নিচু মানের কমেন্ট আর স্ট্যাটাস দেয়ার আগে নিজেকে আয়নায় দেখেছেন তো?
তাসকিন কেন ২২ বছর বয়সে বিয়ে করল এটা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই অনেকের। সেকি কোনো খারাপ কাজ করেছে? না করেনি, বরং ৭ বছরের প্রেমকে বিয়েতে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারকা হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু নাঈমার সাথে তাসকিনের রিলেশন। তারকা হওয়ার পরও যে সে মেয়েটিকে ভুলে অন্য কেউ কে বিয়ে করেনি এজন্য তাসকিন বরং বাহবা পেতে পারে। বলবেন বিয়েটা তাড়াতাড়ি করা হয়ে গেছে?
তাসকিনের বাবা মায়ের চেয়ে নিশ্চয়ই আপনারা আপন নন। তাদের সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে এবং তারা মনে করেছে এটাই ছেলের বিয়ের উপযুক্ত সময় তাহলে সমস্যা কি? এটা নিয়ে যদি নেতিবাচক সমালোচনা করেন তাহলে বলতেই হচ্ছে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।
একজন সাধারণ মানুষের সাথে আমাদের মিডিয়ার মানুষের অনেক পার্থক্য। কোথাও যাওয়ার আগে, কিছু বলার আগে আমাদের দশবার ভাবতে হয়। স্টারডামের কারণেই সব কথা খোলাখুলি বলা যায়না। এসব কারণে সবকিছু মেইনটেইন করতে গিয়ে কখন যে আমরা একা হয়ে যাই নিজেরাই টের পাইনা। এই সময় পাশে কাউকে দরকার হয়, যে কিনা সবসময় আগলে রাখবে।
তারকাখ্যাতির কারণে প্রতিদিন আমাদের মেয়ে ভক্তদের থেকে অসংখ্য প্রেম আর বিয়ের প্রস্তাব পেতে হয়। সবসময় নিজেদের সামলে রাখা কিন্তু কষ্টের, কারণ দিনশেষে আমাদের পরিচয় তারকা নয়, বরং রক্ত মাংসের মানুষ। সেখানে তাসকিন ছেলেটা সব উপেক্ষা করে তার সম্পর্কটা কিন্তু ৭ বছরে টেনে নিয়ে গেছে। নিজের বান্ধবীকে ভুলে আপনাদের কথা অনুযায়ী কিন্তু নাঈমার চেয়ে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেনি। যদি করত আপনারাই বলতেন তাসকিন প্রতারক।
সমস্যা কি জানেন আমরা সুন্দরের ব্যাখ্যাটাই জানিনা। সুন্দর মানে এখনো আমাদের কাছে শারীরিক সৌন্দর্য। সুন্দর মানে গায়ের রং ফর্সা হতে হবে, সুন্দর চোখ, নাক, গাল, ঠোট, হাসি হতে হবে। অথচ মনের সৌন্দর্য যে আসল সৌন্দর্য তা তলিয়ে দেখছিনা।
৭ টা বছর তারা প্রেম করেছে, এরপর তাদের মনে হয়েছে এখন এক ছাদের নিচে থাকা যায় আর আপনারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন মেয়েটি দাঁত ভালোনা, হাসি সুন্দর না ইত্যাদি নিয়ে। বাহ কি মানসিকতা। অন্যে সুন্দর কিনা সেটা খুজে বেড়াচ্ছেন ? স্যরি টু সে...এসব যারা বলে বেড়াচ্ছেন আপনারাই বরং সুন্দর নন। কেন জানেন? আপনারা নিচু মানসিকতার মানুষ। আর কেউ যদি নিচু মানসিকতার মানুষ হয়, তিনি যতোই শারীরিক ভাবে সুন্দর হোন না কেন তাকে আমার অসুন্দরই মনে হবে।
পাবলিক ফিগার হিসেবে এই ধরনের কড়া কথা কখনোই বলিনি, আজ বিরক্ত হয়ে বলতে বাধ্য হলাম। আর এভাবে বলার জন্য একটুও অনুতপ্ত নই। কারণ যা বলেছি মন থেকে বলেছি, বিশ্বাস থেকে বলেছি।”
এমআর/ডব্লিউএন