ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ট্রাম্পের এশিয়া সফর : কূটনৈতিক মারপ্যাচের বড় পরীক্ষা

প্রকাশিত : ০৫:৩১ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফরকে কূটনৈতিক মারপ্যাচের বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। আর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ট্রাম্পের সফর নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমাণ নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপের মধ্যেও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র উৎপাদন বন্ধ না হওয়া, দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি, জাপানে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র আগ্রাসন, ফিলিপাইনের সাথে ভাঙ্গা সম্পর্ক, উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে চীনের অসহযোগিতাসহ নানা ইস্যুতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমতাবস্থায় এ সফরকে ট্রাম্পের জন্য এসিড টেস্ট বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসিতে ট্রাম্পের এশিয়া সফর নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে এশিয়ার দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্র কি চাইতে পারে, বিপরীতে এশিয়ার দেশগুলো ওয়াশিংটনের কাছে কি চায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৫ নভেম্বর থেকে ১১ দিনের দীর্ঘ সফরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৯৯২ সালের পর এটাই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম দীর্ঘ সফর।  

উত্তর কোরিয়াকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনা-

দক্ষিণ এশিয়া সফরের প্রথম দিনেই টোকিওতে পা রাখবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া জাপানের ভূখণ্ডে ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালালে জাপান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টোকিওতে এক বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকে উত্তর কোরিয়া ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে। এদিকে জাপানও উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সামরিক সহায়তা চাইবে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ৭-৮ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিউল ভ্রমণের কথা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণকালে একমাত্র উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন নীতির বিষয়টি প্রাধান্য পেতে যাচ্ছে বলে একটি সূত্রের বরাতে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৬ষ্ঠ বারের মতো ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা চালালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এদিকে উত্তর সীমান্তে ফায়ারিং লাইন এলাকায় উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন রুখতে ‍যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা চাইতে যাচ্ছে সিউলও।

বেইজিং সফর : বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে নজর

পারষ্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধিই বেইজিং সফরের মূল লক্ষ্য। এছাড়া উত্তর কোরিয়া ইস্যুও আলোচনার টেবিলে আসতে যাচ্ছে বলে কূটনৈতিক মহলে জোড়েসোড়ে আলোচনা চলছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাণিজ্য সহায়তা চাইবেন। তবে উত্তর কোরিয়াকে চীন গোপনে সব ধরণের সহায়তা করছে এমন অভিযোগও আছে চীনের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে কোরিয়া ইস্যুতে বিশ্বমতের চিত্র তুলে ধরে, উত্তর কোরিয়ার মারাত্মক পদক্ষেপের ভয়ানক পরিণতির দিকটিও তুলে ধরবেন ট্রাম্প। চীনকে পিইং ইংয়ের ব্যাপারে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার আহবান জানাবেন তিনি।

ফিলিপাইন সফর : সামরিক সহায়তা চাইবে দুতার্তে

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাতে আগামী ১২-১৩ নভেম্বর পা রাখবেন ট্রাম্প। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সাথে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্পর্কের অবনতির কারণে দীর্ঘদিন ওয়াশিংটন ম্যানিলার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে শিথীলতা চলছিল। ট্রাম্পের এই ভ্রমণ দু’দেশের মধ্যে আবারও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। তবে রদ্রিগো আমেরিকার কাছে সামরিক সহায়তা চাইলে সে সম্পর্ক কতটুকু শক্তিশালী হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এর কারণ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। এতে নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কাউকে সামরিক সহায়তা দিতে চাচ্ছেনা যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, ১০-১১ নভেম্বর ভিয়েতনাম সফরকালে দানাংয়ে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার (অ্যাপেক) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন ট্রাম্প। রাষ্ট্রীয় সফরে যাবেন হ্যানয়ে। ফিলিপাইনের ম্যানিলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এশিয়া সফর শেষ করবেন তিনি। আর এখানে নিজের কূটনৈতিক দক্ষতা কতটা দেখাতে পারেন তিনি, সেটিই এখন জল্পনা-কল্পনার বিষয়।

এমজে/ডব্লিউএন