ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

মন ছুটে যায় ঠাকুরগাঁও-এ

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৮:০৪ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ একটি জনপদ। ঐতিহাসিক স্থাপনা, দর্শনীয় স্থান, পর‌্যটন স্পট, পুরনো রাজবাড়ি, নান্দনিক নকশায় নির্মিত মসজিদ-মন্দির, শতবর্ষী গাছ, নদী-নালা, বিল-জলাধারের টলমলে স্বচ্ছ পানি, অনাবিল প্রকৃতি-এসবই টানে পর্যটকদের। যারা একবার গিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ে বারবার ছুটে যেতে মন চাইবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের শিবগঞ্জহাটে রয়েছে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ , বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণ মারি গ্রামে রয়েছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো  সূর্য্যপূরী আমগাছ, পীরগঞ্জ রয়েছে ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক , সনগাঁ মসজিদ,  ফতেহপুর মসজিদ , হরিণমারী শিব মন্দির, গড়খাঁড়ি , পীরগঞ্জ  উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের হাটপাড়ায় রয়েছে রাজভিটা, পীরগঞ্জ পৌরসভায় রয়েছে ভেমটিয়া শিবমন্দির, রানীশংকৈল উপজেলায় রয়েছে রাজা টংকনাথের রাজবাড়ি, প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন, নেকমরদ মাজার, মহেশপুর মহালবাড়ি ও বিশবাঁশ মাজার ও মসজিদস্থল, গড়গ্রাম দুর্গ, বাংলা গড়  হরিপুর উপজেলায় রয়েছে হরিপুর রাজবাড়ি , গড় ভবানীপুর , গেদুড়া মসজিদ, মেদিনী সাগর মসজিদ, রানীশংকৈল উপজেলায় রয়েছে জগদল রাজবাড়ি, গোরক্ষনাথ মন্দির এবং কূপ, মালদুয়ার দুর্গ , ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা রয়েছে সাপটি বুরুজ এবং ভাউলারহাটে রয়েছে শালবাড়ি ইমামবাড়া। ঠাকুরগাঁও শহরে রয়েছে ঢোলরহাট মন্দির , গোবিন্দনগর মন্দির, কোরমখান গড়সহ আরো অনেক কিছু। এগুলো সহজে দর্শকদের নজর কাড়ে। মনে দোলা দেয়। বারবার মন ছুটে যায়।

দেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ

ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী গ্রামের তিন বিঘা জমি জুড়ে দেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ। স্থানীয়ভাবে এটি সূর্যপুরী আম গাছ বলে ডাকা হয়। গাছটির প্রায় ১৯ টি বৃহাদাকার শাখা বা ডাল রয়েছে, যার প্রতিটি শাখার দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৮০ ফুট। গাছের প্রত্যেকটি শাখার উপর অনায়াসে হাটাচলা করা সম্ভব। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর এ গাছ থেকে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মণ আম উৎপাদন হয়, যার বাজার মূল্য আনুমানিক ১ লাখ টাকা। গাছটির বয়স আনুমানিক বয়স ২০০ বছর হবে।

ফানসিটি বিনোদন ও শিশু পার্ক

শিশুপার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্র ফানসিটি এন্ড এ্যামিউজমেন্ট পার্ক পীরগঞ্জ শহরের আর ডি আর এস মোড় সংলগ্ন এবং পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত । সব বয়সী মানুষের বিনোদন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নির্মল আনন্দ উপভোগের কেন্দ্র হিসেবে এর জন্য আলাদা কদর। ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম প্রধান এই পিকনিক স্পটে শিশুদের জন্য রাইড এবং সাম্পান নৌকা, ট্রেন, ব্রিজ, দোলনাসহ আরও বিভিন্ন ধরণের বিনোদন ,স্থাপত্য শৈলীতে আকৃষ্ট হয়ে ভিড় জমায় দর্শণার্থীরা । পিকনিকের জন্য রয়েছে লিচু বাগান। রয়েছে গাড়ি পার্কের জন্য নিজস্ব এলাকা। দেয়ালে রয়েছে বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিকের ছবি।

জগদল রাজবাড়ি

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নির্মিত বিরেন্দ্র নাথ চৌধুরীর রাজবাড়িটি বর্তমানে প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। রাজবাড়ি থেকে একশ’ মিটার পশ্চিমে নাগর নদীর পাড়ের মন্দিরের সম্পূর্ণধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই।  

রামরাই (রাণীসাগর)

বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন যা প্রচারণার অভাবে মানুষের নিকট পৌছায় না। এমনই একটি ইতিহাসের নাম রামরায়। চারিদিকে সবুজের বিশাল সমারোহ ও দিঘীর টলটলে জলরাশি দেখলে যেকোনো প্রকৃতি প্রেমী মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। রামরাই (রাণীসাগর) পুকুটির দৈর্ঘ্য উত্তর -দক্ষিণে ৯০০মিটার ও প্রস্থ পূর্ব- পশ্চিমে ৪০০মিটার। পুকুরটি ১৮.৩৪ একর সু-উচ্চ পাড় ও ২৩.৮২ একর জলভাগ সহ মোট ৪২.২০ একর বিশিষ্ট। বরেন্দ্র ভূমিতে প্রাচীন জলাশয়গুলির মধ্যে এর আয়তন ২য় বৃহত্তম।

রাণীসাগর ফাউন্ডেশন সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পুকুরটির পাড়ে ১২শাতধিক লিচু গাছ সহ অন্যান্য বৃক্ষের চারা রোপন করা হয়েছে। ফল বিক্রি করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে উপবৃত্তি দেওয়া হয় ।

খুনিয়া দিঘী স্মৃতি সৌধ

১৯৭১সালের বীর শহীদের খুনিয়া দিঘী স্মৃতি সৌধ রানীশংকৈল ঠাকুরগাঁও। খুনিয়া দিঘী মহান মুক্তিযুদ্ধে ঠাকুরগাঁও জেলা সর্বোচ্চ বড় আকারের বদ্ধ ভূমি । প্রায় দুশ’ বছর আগে স্থানীয় কোনো জমিদার খনন করেছিলেন ৬ একর আয়তনের খুনিয়া দিঘী। জনশ্রুতি আছে এই এলাকার ব্যবসায়ীরা দিঘির পাশ দিয়ে ব্যবসা করতে রায়গঞ্জে যেতেন। এক ব্যবসাযীকে খুন করে দিঘির পাড়ে ফেলে রেখেছিল। তখন খেকে দিঘির নাম হয় খুনিয়া দিঘি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০০০জনের বেশি মানুষকে হত্যা করে এই দিঘীতে ফেলে রাখা হয়। এখানে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬শে মার্চ রাত ১২টা ১মিনিটে ফুল দেওয়া হয়।

রাণীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) জমিদার বাড়ি

রানীশংকৈল  উপজেলায় কুলিক নদীর তীরে মালদুয়ার জমিদার রাজা টংকনাথের রাজবাড়িটি অবস্থিত। টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ গোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত ছিলেন। নিঃসন্তান বৃদ্ধ গোয়ালা জমিদার কাশীবাসে যাওয়ার সময় সব দলিল করে যান যে, তিনি কাশী থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত এই জমিদারির মালিক হবেন। তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথের দু’এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে। রাজবাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন বুদ্ধিনাথ চৌধুরী, সমাপ্ত করেন রাজা টঙ্কনাথ। বৃটিশ সরকারের কাছে টঙ্কনাথ রাজা পদবী পান। রাজবাড়িটি নির্মিত হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে। রাজবাড়ির পশ্চিমদিকে সিংহদরজা। দরজার চূড়ায় দিক নির্দেশক হিসেবে লৌহদন্ডে S.N.E.W চিহ্ন অঙ্কিত রয়েছে।  রাজবাড়ি সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব কোণে কাছারিবাড়ি। পূর্বদিকে দুটি পুকুর। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দু`শ মিটার দক্ষিণে কুলিক নদীর তীরে রাস্তার পূর্বপ্রান্তে রামচন্দ্র (জয়কালী) মন্দির। এই মন্দিরটিছিল রাজবাড়ির চেয়ে প্রাচীন।

হরিপুর জমিদার বাড়ী

হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হরিপুর রাজবাড়িটি  প্রতিষ্ঠা করেন ঘনশ্যাম কুন্ডুর বংশধরেরা।  আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। তখন এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা নারী । খাজনা অনাদায়ের কারণে জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায়। রাজবাড়ির দ্বিতল ভবনে লতাপাতার নকশা এবং পূর্ব দেয়ালের শীর্ষে রাজর্ষি জগেন্দ্র নারায়ণের চৌদ্দটি আবক্ষ মূর্তি আছে। তাছাড়া ভবনটির পূর্বপাশে শিব মন্দির এবং মন্দিরের সামনে নাট মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ির পাঠাগার ও সিংহদরজার অস্তিত্ব এখন নেই।  দিকে রাজবাড়িটি দুই অংশে বিভক্ত হয়ে যায় ১৯০০ সালে।

গোরক্ষনাথ মন্দির

নেকমরদ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে গোরকই বা গোরকুই নামক স্থানে  রয়েছে গোরক্ষনাথ মন্দির ও নাথ আশ্রম। কোনো কোনো ঐতিহাসিক গোরক্ষনাথকে নাথপন্থীদের ধর্মীয় নেতা মীননাথের শিষ্য বলে ধারণা করে থাকেন। গবেষকদের মতে, এই গোরক্ষনাথ হলো নাথপন্থী সম্প্রদায়ের গুরু বা যোগীর উপাধি মাত্র।  ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে গোরক্ষনাথের নাম পাওয়া যায়। নেপালেও বৌদ্ধযোগী হিসেবে গোরক্ষনাথের অস্তিত্বের কথা ইতিহাসে উল্লেখ আছে। গোরক্ষনাথ মন্দির ও আশ্রমটি রাণীশংকৈলের গোরকুইয়ের মৃত নদীর তীরে উঁচু জমির উপর অবস্থিত। মন্দির চত্বরটিতে মোট ৫টি মন্দির ,৩টি শিব মন্দির ,১টি কালিমন্দির ছাড়াও ১টি প্রধান মন্দির আছে ।

নাথমন্দিরের পেছনে অর্থাৎ উত্তর দিকে পাষাণ বাঁধানো চৌবাচ্চার মতো নিচু স্থানের মধ্যস্থলে বড় বড় কালো পাথরের খন্ড দিয়ে ঘেরা এক অলৌকিক ইদাঁরা বা কুয়ো আছে। কুয়োর একেবারে নিচু অংশটুকুও পাথর দিয়ে বাঁধানো। কিন্তু মাঝে একটি ছিদ্র দিয়ে নিচ থেকে কুয়োতে পানি আসে। কুয়োর চারপাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে অনেক লোক পূণ্যস্নান করলেও কুয়োর পানি কমে না।  মন্দিরের উত্তর চত্বরে টিনের চাল বিশিষ্ট যে আশ্রম রয়েছে তার দরজায় একটি শিলালিপি বা ফলকটি বর্তমানে দিনাজপুর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এর সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার করা সম্ভব না হলেও বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক আবু তালিবের মতে, এই শিলালিপিটি বাংলা অক্ষরে উৎকীর্ণ এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত শিলালিপিগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম।

রাজভিটা

পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের হাটপাড়া নামক স্থানে টাঙ্গন নদীর বাঁকে যে রাজবাড়ির অস্তিত্ব অনুভব করা যায় তা রাজভিটা নামে বর্তমান মানুষের নিকট পরিচিত। ‍রাজভিটায় দাঁড়িয়ে থাকা রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ মাটির গর্ভে। অনুমান করা হয় এটি শেরশাহের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এখানে শেরশাহ আমলের মুদ্রা পাওয়া যায়। একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে যার বর্ণগুলো অপরিচিত এবং শিলালিপিতে একটি উট, একটি ঘোড়া ও একটি শুকরের প্রতিকৃতি আছে। মাটি খুড়লে , নদীর ভাঙনেও নানা আকৃতির প্রচুর ইট ও পাথর বেরিয়ে আসে। রাজভিটা প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ এবং ২৫০ মিটার প্রস্থ। রাজভিটা থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরশাহ আমলের পূর্ণিয়া সড়কের নিদর্শন আছে।

মহালবাড়ি মসজিদ

মহালবাড়ি মসজিদটি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলা হতে উত্তরে মীরডাঙ্গী থেকে ৩ কিঃমিঃ পূর্বে মহেশপুর গ্রামে অবস্থিত। মসজিদে পাওয়া শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠিত। শিলালিপি সূত্রে জানা যায় মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মিয়া মালিক ইবনে মজুমদার। মহালবাড়ি মসজিদটি ছিল ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট। ছাদ থেকে পানি বের করে দেয়ার জন্য খোদিত শিলার ব্যবহার দেখা যায়। মহালবাড়ি মসজিদের জায়গায় নির্মিত হয় নতুন মসজিদ। নবনির্মিত মসজিদটির ভিত ও মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রাচীন মসজিদের পাথর এবং দেয়ালে ইট । প্রাচীন মসজিদের নকশা করা শিলাখন্ড নতুন মসজিদের মিহরাবে আটকানো আছে। নতুন মসজিদের সামনে প্রাচীন মসজিদের তিন তাকের নকশা করা শিলাখন্ডের মিম্বারটি এখনো রয়েছে। মসজিদের পূর্বপাশে আছে ছোট দিঘি। দিঘিটির ঘাট উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পাথরে বাঁধানো। মসজিদের ২ মিটার পূর্বে জঙ্গলের মধ্যে দুটি কবরইট দিয়ে বাঁধানো। একটি কবর `বিশ্বাস পীরের` মাজার বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত। সম্ভবত বিশ্বাস শব্দটি ক্রমান্বয়ে বিশওয়াশ থেকে বিশ বাইশ শব্দে বিকৃত হওয়ার ফলে এলাকাটিকে বলা হয় বিশবাইশ মহাল।

জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ

মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে তোরণ রয়েছে। নান্দনিক নকশায় নির্মিত মসজিদটি দেখতে খুবই সুন্দর। মসজিদের ৩ গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কাজ করা। মসজিদের ছাদে মিনার আছে ২৮ টি। মিনারকগুলি ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে নকশা করা রয়েছে। মসজিদটির মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি পূর্বাংশে মাঝখানে ৪ থামের উপর ছাদ বিশিষ্ট মূল দরজা। মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলংকার রয়েছে। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। মসজিদটিতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে শিবগঞ্জহাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদটি অবস্থিত।

শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া  

ঠাকুরগাঁও উপজেলার ভাউলারহাটের নিকটে শালবনে অবস্থিত শালবাড়ি মসজিদটি বাংলা ১২১৫ সালে তৈরি হয়েছে। মসজিদটির মূল নকশা এখন আর নেই । শালবাড়ি মসজিদটির অদূরে ইমামবাড়া রয়েছে।  ইমামবাড়ার বাইরের দৈর্ঘ্যে ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ১৩ ফুট।

সনগাঁ শাহী মসজিদ

ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট শাহ আলমের সময় সনগাঁ শাহী মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল। মসজিদে গম্বুজ তিনটি ও দরজা তিনটি । দক্ষিণে পাকা কূপ । পূর্বপাশে প্রাচীন কবরে শুয়ে রয়েছেন `সুধিবাদ পীর` নামক এক পূণ্যাত্মা । বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাঁ নামক গ্রামে সনগাঁ মসজিদটি অবস্থিত।

গেদুড়া মসজিদের অবশিষ্ট অংশ

গেদুড়া মসজিদটি হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নে প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে স্থাপিত হয়েছিল। একইস্থানে নতুন মসজিদ তৈরি হয়েছে । এখানে আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত শিলালিপি পাওয়া যায়। শিলালিপিটি গোলাকার ৫৪ বর্গ ইঞ্চির পরিধি বিশিষ্ট ।

হরিণমারী শিব মন্দির

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর পশ্চিমদিকে হরিণমারী হাটে অবস্থিত মন্দিরের ছাদ চারচালা পদ্ধতিতে নির্মিত। আনুমানিক মন্দিরটি চারশ বছরের পুরাতন হতে পারে । মন্দিরটির বর্তমান উচ্চতা প্রায় ত্রিশ ফুট এবং আয়তন  ১৪ ×১৪ ফুট। দক্ষিণ দিকে দরজায় পোড়ামাটির ফলকে লতাপাতার নকশার সাথে বিভিন্ন মূর্তির প্রতিকৃতি ছিল। মন্দিরের পূর্বদিকে বড় একটি পুকুর আছে।

আরো দেখ আসতে পারেন মেদিনীসাগর জামে মসজিদ

হরিপুর উপজেলার মেদিনীসাগর গ্রামে অবস্থিত মেদিনীসাগর জামে মসজিদের স্থাপত্যকাল মোঘল আমল । মসজিদের  বাইরের দিকের দৈর্ঘ্য সাড়ে একত্রিশ ফুট এবং প্রস্থ চৌদ্দ ফুট।  মসজিদের ভিতরের দৈর্ঘ্য চবিবশ ফুট এবং প্রস্থ ছয় ফুট। মিহরাব ও মিম্বার আছে। দুটি জানালা, তিনটি দরজা, আটটি কুলুঙ্গি, তিনটি খিলান রয়েছে। এছাড়া মসজিদের পূর্ব ও পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে মোট চারটি থাম । এই মসজিদের সঙ্গে ফতেহ্পুর মসজিদের স্থাপত্য মিল রয়েছে।

নদ-নদী

ঠাকুরগাঁওয়ে অনেকগুলো নদী রয়েছে- সেগুলোর মধ্যে টাঙ্গন নদী, ছোট ঢেপা নদী, কুলিক নদী, পুনর্ভবা নদী, তালমা নদী, পাথরাজ নদী, কাহালাই নদী, তীরনই নদী, নাগর নদী, তিমাই নদী, এবং নোনা নদী অন্যতম। সকাল থেকে দিনভর ঘোরাঘুরির পর পর‌্যটকরা বিকেলে এসব নদীতে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

স্বচ্ছ পানির জলাধার

ঠাকুরগাওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় রয়েছে চোশপাড়া বিল, সোপরা বিল, আমান ধামান বিল,  পীরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ধাতরা বিল, কাচনা বিল, কর্ণ বাহারা বিল, ধরধরিয়া বিল, জালুই খাল, রাণীশংকৈল উপজেলায় রয়েছে কাশিপুর বিল, পামোল বিল, লেহেম্বা বিল, গড়গড়িয়া বিল, বুড়া বিল, হরিপুর উপজেলায় রয়েছে কানুর পুকুর বিল, নিকারিয়া বিল, দামোল বিল, লৌহচান্দ বিল, যমুনা বিল। এগুলোর পানি এতটাই স্বচ্চ যে গভীরের লতাগুল্ম পর‌্যন্ত দেখা যায়।

কোথায় থাকবেন

ঠাকুরগাওয়ে থাকাতে  চাইলে সরকারী হোটেল ও আবাসনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন সার্কিট হাউস, ঠাকুরগাঁও-০৫৬১-৫৩৪০০, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঠাকুরগাঁও             (০৫৬১)৫২১৩৬ , পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি,ঠাকুরগাঁও (০৫৬১)৫৩৫৭১ , সড়ক জনপথ বিভাগ, ঠাকুরগাঁও          (০৫৬১)৫২০৭৯।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সড়কপথে ঠাকুরগাঁও যেতে পারেন বেশ কয়েকটি পরিবহণে করে। এজন্য যোগযোগ করতে পারেন হানিফ এন্টারপ্রাইজ ভাড়া : ৫৫০-৬০০/- টাকা ০২-৮১২৪৩৯৯  ০১৬৭৩-৯৫২৩৩৩৫, নাবিল পরিবহন ভাড়া : ৫৫০-৬০০/- টাকা ০২-৮১২৭৯৪৯ , বাবলু এন্টারপ্রাইজ ভাড়া : ৫৫০-৪০০/- টাকা ০২-৮১২০৬৫৩ , ০১৭১৬-৯৩২১২২, কেয়া পরিবহন ভাড়া : ৩৫০-৪০০/- টাকা ০১৭১১-১১৮৪০২ নম্বরে।

/ এআর /