ঝালমুড়ি-ফুচকা-ভেলপুরিতে টাইফয়েড-আমাশয়-ডায়রিয়ার জীবাণু!
প্রকাশিত : ০৮:৫৫ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার
রাস্তার পাশের খোলা খাবার বিশেষ করে ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে মিলেছে টাইফয়েড, আমাশয় ও ডায়রিয়ার জীবাণু।
সরকারি সংস্থা জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এসব খাবারে জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ফলে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও পথচারীদের এসব খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সভাকক্ষে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন অব হর্টিকালচার প্রোডাক্টস অ্যান্ড আদার ফুড কমোডিটিস ফর কেমিক্যাল অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কন্টামিনেশন অ্যাট এনএফএসএল: অ্যান অ্যাপ্রাইজাল অব ফুড সেফটি সার্ভে ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে করা দ্বিতীয় জরিপে এসব তথ্য প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম রঙ ও ইস্ট তো ব্যবহার হচ্ছেই এছাড়াও সংগৃহীত নমুনায় কলিফর্ম, সালমোনিলা ও ই-কলাই এর মতো মারাত্মক সব জীবাণুর দেখা মিলেছে। ই-কলাই আমাশয়, সালমোনিলা টাইফয়েড ও কলিফর্ম ও মাইকোটক্সিন ডায়রিয়ার জীবাণু। এসব খাদ্যের পরীক্ষায় জীবাণুর মাত্রা নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ছিল অনেক বেশি।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ঢাকা শহরের ৪৬টি থানায় অবস্থিত স্কুলের সামনের থেকে ৪৬টি ঝালমুড়ি, ৩০টি ফুচকা, ১৬টি ভেলপুরি ও ৪২ টি আচারের নমুনা সংগ্রহ করা হয় পরীক্ষার জন্য। এগুলো জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ভেলপুরি, ফুচকা ও ঝালমুড়িতে আমাশয়ের জীবাণু ‘ই কোলাই’ এর মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৫টি ভেলপুরি ও ৩ টি ঝালমুড়ির নমুনায় টাইফয়েড এর জীবাণু ‘সালমোনিলা’র উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়াও নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া ১২টি ভেলপুরি, ৩০টি ফুচকা, ১৩টি ঝালমুড়ি ও ৪টি আচারের নমুনায় পাওয়া গেছে ‘ঈস্ট মোল্ড’-যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি। মাইক্রোবায়োলজির অন্যান্য পরীক্ষায় প্রাপ্ত জীবাণুর মাত্রাও ছিল নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইন্সটিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি বছরের মার্চ এবং এপ্রিল মাসে এসব খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে এনএফএসএল এর ল্যাবরেটরিতে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। সেখানে রাস্তার এসব খাবারে কৃত্রিম রং, ইস্ট, ই-কোলাই, কলিফর্ম, মাইকোটক্সিন ও সালমোলিনার মতো মারাত্মক সব ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। আর এসব জীবাণু থেকেই শিশুরা আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ২০১৬-১৭ সালের খাদ্যপণ্য রুটিন পরীক্ষার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নুডলস, ঘি, সরিষা ও সয়াবিন তেল, সেমাই প্রভৃতি এবং সবজির মধ্যে ফুলকপি, বেগুন, সীম, কাঁচামরিচ, টমেটোসহ মোট ৪৬৫টি খাবারের গুণগতমান, টেস্টিং সল্ট, পেস্টিসাইড, রঙ, আফলা টক্সিন এর উপস্থিতি ও মাইক্রো-বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।
ঢাকার বিভিন্ন বাজার ও সুপার শপ থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন ব্রান্ডের ৫৫টি নুডুলসের গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখা গেছে ১৪টি নুডলসে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক কম। অনেকগুলো ব্র্যান্ডে লেড এর পরিমাণও ছিল নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম, অনেকগুলো ব্র্যান্ডে লেড এর মাত্রা ছিল একেবারেই শূন্য। একইসঙ্গে এসব নুডলসে পাওয়া গেছে বিভিন্ন মাত্রার টেস্টিং সল্ট যা স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি বয়ে আনে।
একইসঙ্গে পরীক্ষা করা ৩টি সাধারণ সেমাই এবং ১০টি লাচ্ছা সেমাইয়ে পাওয়া গেছে মাত্রার চেয়েও কম পরিমাণে প্রোটিন। সেইসঙ্গে আয়রনের মাত্রাও ছিল সবগুলো নমুনাতে কম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ফুড সেফটি প্রোগ্রাম এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক শাহ মনির হোসেন বলেন, ঘি-তেল এসব খাদ্য উপকরণ নির্ধারিত স্ট্যার্ন্ডাড মেইনটেইন করতে পারেনি। প্রচুর রোগ হচ্ছে এসব খাবারে থাকা কেমিক্যালের জন্য। তাই সব ধরনের খাবারের কোয়ালিটি (গুণগতমান) এবং রিস্কি স্ট্যার্ন্ডাড দুটোই মেইনটেইন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বেসিক সায়েন্স অ্যান্ড প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস কে রায়সহ অন্যরা।
কেআই/ডব্লিউএন