৩৮তম প্রিলির প্রস্তুতি
‘সীমিত জ্ঞান নিয়ে বিসিএস না দেওয়াই ভালো’
প্রকাশিত : ০২:২৯ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৪:১২ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার
৩৬ তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার রব্বানি হোসেন
বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস প্রত্যাশীদের দরজায় কড়া নাড়ছে ৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পরীক্ষার তারিখ এখনও ঘোষণা করা না হলেও শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। এই সময়ে নিশ্চয়ই পড়ালেখায় ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন বিসিএস প্রত্যাশী বন্ধুরা।
৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীরা সামনের স্বল্প সময়ে কিভাবে গুছানো প্রস্তুতি নিবেন সে বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের স্নাতক রব্বানি হোসেন।
রব্বানি হোসেন মনে করেন, বিসিএস যেমন মর্যাদার চাকরি, তেমনি এই স্বপ্ন ছুঁতে প্রস্তুতিটাও সেভাবেই নিতে হবে। পরীক্ষার আগে কয়েকমাস পড়লে বিশাল সিলেবাস কভার করা কঠিন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের জন্য একটু একটু করে প্রস্তুতি শুরু করে দিতে হবে। খুটিনাটি বিষয়গুলো ভালো করে আয়ত্বে আনতে হবে। সব বিষয়েই অগাধ জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে বিসিএস না দেওয়াই ভালো। তবুও প্রিলিমিনারির আগমুহূর্তে স্বল্প সময়ে কিভাবে গুছানো প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে এ বিষয়ে রব্বানি হোসেন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। শ্রুতিলিখন করেছেন মীর মাহবুবুর রহমান।
বাংলা
প্রিলিমিনারিতে ৩৫ নম্বর আসে বাংলা থেকে। এর মধ্যে সাহিত্য ও ব্যাকরণ দু’টোকেই গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। কবি-সাহিত্যিকদের লেখা ও জীবনী গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে এপার বাংলা ও ওপার বাংলার জনপ্রিয় ও শক্তিমান লেখকদের লেখা পড়তে হবে। এক্ষেত্রে শুধু বর্তমানের লেখক নয় প্রাচীন ও মধ্যযুগের লেখকদের সম্পর্কে ও তাদের সৃষ্টি সম্পর্কেও জানতে হবে।
বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, মাইকেল মুদুসুধন দত্ত, কাজী নজরুল, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, প্রমথ চৌধুরী, শামসুর রাহমানকে ভালো করে পড়তে হবে। তাদের জীবন ইতিহাস ও রচনা থেকেও প্রশ্ন আসে। সেগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
ব্যাকরণ অংশের জন্য গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে সমাস, যুক্তবর্ণ, বানান। সেক্ষেত্রে পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো অবশ্যই পড়ে নিতে হবে। প্রিলিমিনারি খুব অল্প সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, তাই কোনো বিষয়েই গভীরে না গিয়ে শর্টকার্ট পদ্ধতিতে পড়তে হবে। সময় যেহেতু কম তাই ব্যাকরণের বাগধারা অংশটা আপাতত বাদ দিতে পারেন।
বাংলা বানানে ভালো করার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে পড়তে হবে বাংলা একাডেমি প্রণীত বানান রীতি। প্রতিদিন কয়েকটা নিয়ম অনুশীনের মাধ্যমে এ বিষয়ে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠা যায়। সিলেবাস ধরে ধরে সবগুলো টপিকস পড়তে হবে। প্রতিদিন অনুশীলনের মাধ্যমে শব্দভাণ্ডার দ্রুত সমৃদ্ধ করার দিকে জোর দিতে হবে। সন্ধি ও সমাসের ব্যতিক্রম নিয়মগুলো পড়ে ফেলতে হবে। এগুলো থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে।
নবম দশম শ্রেণির এবং একাদশ শ্রেণির বোর্ড বইটাতে বেসিক ধারণা নেয়া যেতে পারে তবে গভীর প্রস্তুতির জন্য বাজার থেকে ভাল বই সংগ্রহ করতে হবে। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক সম্পর্কিত বিষয়গুলো জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যর উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জানতে হবে।
ইংরেজি
বাংলার মতো ইংরেজিতেও ৩৫ নম্বর থাকে প্রিলিমিনারিতে। বিসিএসে ভালো করতে হলে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো করতে হবে। সেজন্য শব্দভান্ডার বাড়াতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে ইংরেজি সাহিত্যের দিকে। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখতে হবে। ইংরেজি সাহিত্যিকদের সম্পর্কে জানতে হবে। জেনে নিতে হবে ইংরেজি সাহিত্যের বড় বড় নাটক উপন্যাসের চরিত্র সম্পর্কেও। এসব বিষয়ে বিসিএসে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
প্রিলিমিনারিতে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা অংশ থেকে ৩০ নম্বর থাকে। গণিতে ভালো করার জন্য অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীর গণিত বইটিকে সমাধান করতে হবে। এছাড়া উচ্চতর গণিত, ধারা, শতাংশ, পরিসংখ্যান, সম্ভাব্যতা, বিন্যাস ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বাসায় বসে গণিত অনুশীলনের সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না।
এতে ক্যালকুলেটরের প্রতি নির্ভরশীলতা কমবে। অভ্যাসটা গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন। তবে সবার আগে সমাধান করে ফেলতে হবে পিএসসির বিগত বছরের যাবতীয় প্রশ্ন গুলো। শর্টকার্ট টেকনিকও কাজে দিতে পারে গণিতের প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে।
মানসিক দক্ষতা : গণিতের বিভিন্ন ধারা, আইকিউসহ বিভিন্নভাবে মানসিক দক্ষতা যাচাই করা হয়ে থাকে। মানসিক দক্ষতা অংশে ভালো ফলের জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগসহ পড়তে হবে। এজন্য বাজারে প্রচলিত জব সল্যুউশনগুলোর একটি বইটি ভালোভাবে সমাধান করতে হবে। এছাড়া এমপি থ্রি বইটিও পড়া যেতে পারে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী-দু’টোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলী : বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রিলিমিনারিতে ৩০ নম্বর থাকে। এ অংশে ভালো করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। আবহমান বাংলা থেকে শুরু করে, সুলতানি আমল, ব্রিটিশ পিরিয়ড, ১৯৪৭ – এর দেশভাগ, বায়ান্নার ভাষা আন্দোলন, ৬২ সালে শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রশ্ন থাকে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে থাকবে প্রশ্ন। তাই এসব বিষয়গুলো রাখতে হবে স্মৃতিতে। এছাড়া, বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিগণের সম্পর্কেও যাবতীয় তথ্য জানতে হবে।
আন্তর্জাতিক : এ অংশ থেকে ২০ নম্বর থাকে প্রিলিমিনারিতে। বিশ্ব মানচিত্র, বিভিন্ন দেশ, রাজধানী, মুদ্রা, পার্লামেন্ট, সরকার প্রধান, জাতীয় প্রতীক, প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বৈশ্বিক রাজনীতি, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা করতে হবে। পরিবেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন সম্মেলন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বিশ্ব সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখতে হবে। এজন্য টেলিভিশনের সংবাদ, পত্রপত্রিকা নিয়মিত পড়তে হবে।
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
প্রিলিমিনারিতে এ অংশ থেকে ১০ নম্বর থাকে। বিশ্বের কোনো দেশ কোথায় অবস্থিত সেটা জানা না থাকলে এই অংশে মোটেও ভাল করা যাবেনা। তাই বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। সৌরজগৎ, আগ্নেয়গিরি, শিলা, ভূত্বক, প্রণালী প্রভৃতি সম্পর্কে জানতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তগুলো সম্পর্কে ভালো করতে জানতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন দেখলে একটা ধারণা পাওয়া যাবে কেমন প্রশ্ন হতে পারে।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
এ অংশ থেকে ১০ নম্বর থাকে। এ অংশে প্রশ্নের উত্তরগুলো প্রায় কাছাকাছি হয়ে থাকে। ফলে সঠিক উত্তরটি খুঁজে পেতে কনফিউজড হতে হয়। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
/ এমআর / এআর