ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিসিএস প্রিলি

কোনটি পড়ব তার চেয়ে জরুরি হচ্ছে কোনটি বাদ দেব

প্রকাশিত : ০৩:৩৪ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৭:০০ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

৩৫ তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার সালাহ উদ্দিন রাজু

৩৫ তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার সালাহ উদ্দিন রাজু

কড়া নাড়ছে ৩৮ তম বিসিএস। মাস খানেক বাদেই (সম্ভাব্য তারিখ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ) প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। শেষ সময়ে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে প্রস্তুত বিসিএস ক্যাডার প্রত্যাশীরা। এই সময়ে কি কি পড়ব তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কী কী বাদ দেব। তাই বিসিএস প্রত্যাশী বন্ধুদের এই মুহূর্তে দরকার হচ্ছে সব বিষয়ে গুছানো প্রস্তুতি। এমনটিই মনে করেন ৩৫ তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সালাহ উদ্দিন রাজু । সামনের স্বল্প সময়ে ৩৮তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীরা কিভাবে গুছিয়ে প্রস্তুতি নেবেন এ বিষয়ে ইটিভি অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদেরকে গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন। শ্রুতিলিখন করেছেন মাহমুদুল হাসান।  

বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী বন্ধুদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে- প্রিলির প্রস্তুতি যদি ভালো হয় তবে তা লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রায় ৪০% এবং ভাইভার ক্ষেত্রে প্রায় ৮০% প্রস্তুতি হয়ে যায়।

অন্যদিকে বিসিএস মানেই প্রিলিমিনারি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিলে প্রিলিমিনারিসহ লিখিত ও ভাইভাতেও ভাল করা সম্ভব। কারণ প্রিলিমিনারি থেকেই প্রায় ৯৫% শিক্ষার্থী বাদ পরে যান। অন্যদিকে রিটেনে প্রায় ৩০% থেকে ৪০% শিক্ষার্থী বাদ পড়ে যান। ভাইভাতে গিয়ে বর্তমানে প্রায় সবাই চাকরি পাচ্ছেন। হয় ক্যাডার, না হয় নন-ক্যাডার জব হয়ে যাচ্ছে।

আমি মনে করি বিসিএসের প্রিলির প্রস্তুতির জন্য শর্ট-কাট কোনো পথ নেই। কেননা প্রিলি একাধারে রিটেন ও ভাইভার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখে। তাই শুরু থেকেই একটু কষ্ট করে যদি প্রিলির প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া যায় তাহলে তা লিখিত ও ভাইভাতে কাজে আসে।

প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে পড়তে হবে। তুলনামুলক কঠিন বিষয়গুলো খাতায় লিখে প্রস্তুতি নিতে হবে। পড়ার সময় গুরুত্ব অনুযায়ী লাল, সবুজ কালি দিয়ে দাগিয়ে পড়া যেতে পারে। যা পরবর্তীতে রিভিশনের সময় কাজে লাগে।

যেকোনো বিষয়ে পড়ার আগে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে পরীক্ষায় কিভাবে প্রশ্ন আসবে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। শেষ সময়ে এসে সব না পড়ে বাছাই করে পড়া ভালো। এই সময়ে কোনটি পড়ব তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে কোনটি বাদ দেব।

এবার চলুন বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক-

বাংলা, নম্বর ৩৫

নবম ও দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যকরণ বইটি-ই বিসিএসে ব্যাকরণ বিষয়ক প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট। সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির ২৫ থেকে ৩০ জন কবি-সহিত্যিকদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। সম্ভব হলে নোট করে লিখে পড়লে ভালো হয়। রোজ বাংলা ও ইংরেজি প্রতিশব্দ, বিপরীত শব্দ, সন্ধি ও সমাসের ব্যতিক্রম উদাহারণগুলো পড়তে হবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য,বাংলা সাহিত্যর উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জেনে রখতে হবে।  প্রাচীন ও মধ্যযুগে পড়া কম। তাই একটু ভালো করে পড়লে এ অংশে সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়। সম্ভব হলে একাদশ শ্রেণীর বইটি  অনুশীলন করতে হবে। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকের সাম্প্রতিক তথ্যসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যর উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জেনে রাখতে হবে।

ইংরেজি, নম্বর ৩৫

ইংরেজির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ভোকাবিউলারি বা শব্দ ভান্ডার। তাই এই শব্দভান্ডার বৃদ্ধির লক্ষ্যে হুয়াইট বোর্ডে লিখে শিখতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে জিআরই (GRE) এর শব্দগুলো মুখস্ত করে নিতে পারলে অনেক উপকারে আসবে। ইংরেজির জন্য বিসিএসের সিলেবাসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রয়োজনে লিখে লিখে পড়া যেতে পারে। এতে গ্রামারের নিয়মগুলো সহজেই আয়ত্বে আসবে।

ইংরেজি সাহিত্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিখ্যাত সাহিত্যিকদের নাম, সাহিত্যকর্ম ও সাহিত্যে তাদের অবদান সম্পর্কে জানতে হবে। কিছু ক্ল্যাসিকাল বইয়ের নাম ও লেখকের নাম, বিতর্কিত বই ও লেখকের নাম জেনে নিতে হবে। তবে Grammar এবং Vocabulary তে ভালো করতে হলে দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস প্রয়োজন।

গাণিতিক যুক্তি মানসিক দক্ষতা (১৫+১৫)

গণিত বিষয়টি প্রিলিমিনারি ও লিখিত দুটো পরীক্ষার জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। গণিতে দখল না থাকলে তা দু’টি পরীক্ষাতেই বিশেষত লিখিতে গলার কাঁটা হয়ে দাড়াবে। এজন্য কোনো গাফলতি না করে বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণীর গণিতসহ উচ্চতর গণিত বইটি ভালোভাবে শেষ করতে হবে। গণিত অনুশীলনের সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। কেননা পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ।

মানসিক দক্ষতায় ভালো করার জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মনোযোগসহ পড়তে হবে। এজন্য বাজারে প্রচলিত জব সল্যুউশনগুলোর একটি বই ভালোভাবে সমাধান করলে ভালো করা সম্ভব।

সাধারণ জ্ঞান, নম্বর ৫০

সাধারণ জ্ঞানের বাংলাদেশ বিষয়টি প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবা তিনটি পরীক্ষার জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লিখিতে বাংলাদেশ অংশ থেকে ২০০ নম্বর এবং ভাইভায় প্রায় ৫০% থেকে ৬০% প্রশ্ন আসে এ অংশ থেকে। বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো করার জন্য নবম ও দশম শ্রেণীর ইতিহাস বইটি পড়া যেতে পারে। নিয়মিত দৈনিক ও মাসিক পত্রিকা পড়তে হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও সরকারি বিভিন্ন জরিপের প্রয়োজনীয় অংশ পড়তে হবে। বাংলাদেশ অংশের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রাচীন স্থাপত্যের উপর বেশি জোর দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভালো করার জন্য মানচিত্রের জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের যখন যে অংশ পড়া হবে সঙ্গে সঙ্গে মানচিত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে পড়লে তা অনেক বেশি কাজে আসবে। পড়ার সময় যে বিষয়টি কঠিন মনে হবে সে বিষয়টি মার্ক করে পড়া যেতে পারে। তবে লিখে লিখে পড়লে তা বেশি কাজে দেবে। বাংলাদেশের সংবিধান থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো পড়তে হবে।

তবে বিস্তারিত পড়লে লিখিত এবং ভাইভায় তা অনেক কাজে দেবে। বাংলা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতা, সম্পাদকীয় ও মতামত, আন্তর্জাতিক, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিষয়গুলো পড়তে হবে। পত্রিকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।

সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি, নম্বর (১৫+১৫)

বিগত বছরে পিএসসির অধীনে যে প্রশ্ন এসেছে তা ভালোভাবে রিভিশন দিতে হবে। আমি মনে করি বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে পারলে বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো করা সম্ভব। তবে নবম-দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে।

আইসিটি বা কম্পিউটার বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তব পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিতে পারলে শতভাগ কমন পড়া সম্ভব। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক এর আইসিটির বইগুলো পড়তে হবে।

ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : নম্বর ১০

প্রথমেই ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হবে এবং তাদের করা রিপোর্টসমূহের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের জলবায়ু ও সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনের তথ্যগুলো জানতে হবে। বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে পারলে ভূগোল বিষয়ে ভালো করা সম্ভব।

নৈতিকতা, মূল্যবোধ সুশাসন: ১০

এ বিভাগের প্রশ্নগুলোর উত্তর অনেকটা কাছাকাছি হয়। তাই অনেক সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ বিভাগের  প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে উত্তর দিতে হবে।

সর্বোপরি, প্রিলি পরীক্ষার জন্য এর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সময় ব্যবস্থাপনা। অনেক সময় দেখা যায় ভাল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব হয় না । অনেকে জানা বিষয় পরীক্ষার চাপে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পরীক্ষার আগেই সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং বাসায় মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে হবে।

সালাহ উদ্দিন রাজু

৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার

-প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর। 

/ এআর /