ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

মেধাবী-মননশীল যুবসমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছি : ওমর ফারুক চৌধুরী

প্রকাশিত : ০৪:১৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার

আজ ১১ নভেম্বর। দেশের ঐতিহ্যবাহী যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭২ সালের এই দিনে শেখ ফজলুল হক মণি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানামুখী চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কালের পরিক্রমায় সংগঠনটি আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ডে পরিণত হয়েছে। দলের সময়-অসময় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা রাজপথে থেকে দেশবিরোধী নানা অপতরৎতার জবাব দিয়েছে। আগুন সন্ত্রাস-জঙ্গি হামলাসহ বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। তৃণমূল যুবলীগের কতিপয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ থাকলেও দেশের সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিতে যুবলীগের অবদান অসামান্য।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের মূল নেতৃত্বে আসার পর দেশের যুব রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তনে ব্রতী হন। বিশেষ করে যুবকদের রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার দিকে গুরুত্বারোপ করেন। একদিকে মেধাভিত্তিক গবেষণা চর্চায় যুবকদের উৎসাহী করছেন, অন্যদিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দেশবিরোধী নানা তৎপরতার কড়া জবাব দিচ্ছেন।    

আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর মুখোমুখি হয় একুশে টিভি (ইটিভি)অনলাইন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আলী আদনান। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি ছাপা হলো-

ইটিভি অনলাইন: আপনি নেতৃত্বে আসার পর যুবলীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন এসেছে। আবার যথাসময়ে সম্মেলন না করাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগও রয়েছে। কিভাবে দেখছেন ব্যাপারটাকে?  

ওমর ফারুক চৌধুরী: যুবলীগ এরইমধ্যে ৪০০’রও বেশি প্রকাশনা বের করেছে। তরুণ-যুব সমাজকে শিক্ষা ও গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে যুব গবেষণা কেন্দ্র করেছে। আমরা মেধা-মননের চর্চা করছি। যাতে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা আসে। এটি অস্বীকার করব না যে, আমাদের ব্যর্থতা অনেক। ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্ট করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও বঙ্গবন্ধু-কন্যার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে দেশব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে যুবলীগ।

ইটিভি অনলাইন: বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ‍যিনি পরবর্তীতে শহীদ হয়েছেন। এই সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে কতটুকু সফল মনে করছেন?

ওমর ফারুক চৌধুরী: জাতির জনকের আদর্শে লালিত সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে একটি মননশীল যুবগোষ্ঠী গঠনের লক্ষ্যে জাতির পিতার নির্দেশে শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটি একটি মুক্ত, উদার যুবমানস গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ যুবকদের সংগঠন। মানুষের জীবনে যে চারটি স্তর থাকে তার অন্যতম যৌবনকাল। যৌবন কাল হচ্ছে ইবাদতের কাল, হজ্বে যাওয়ার কাল, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার কাল। যৌবন না আসলে মানুষ জ্ঞানী হয় না, যৌবন  না আসলে মানুষ কর্মজীবী হয় না। কোন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ভালো সেটি যেন চেনা দরকার। তেমনি চিনতে হবে কোন নেতা ভাল, কেন ভালো? তা না হলে ভুল রাজনীতিকের হাতে পারে যে কেউ বিপথগামী হতে পারে। তাই যুবলীগ আদর্শ নেতৃত্ব তৈরির চেষ্টা করছে।

ইটিভি অনলাইন: ‘বিশ্ব শান্তির দর্শন, জনগণের ক্ষমতায়ন’- এ তত্ত্ব নিয়ে আপনি র্দীঘদিন কাজ করছেন। এর প্রতিপাদ্য বিষয় কী?

ওমর ফারুক চৌধুরী: রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ‘বিশ্ব শান্তির দর্শন, জনগণের ক্ষমতায়ন’-এর পতাকাবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। এই দর্শনের মূল কথা হল, জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত প্রগতিশীল বিশ্ব গড়ে তোলা। জনগণের ক্ষমতায়নের ফলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উন্নয়ন বলতে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন বুঝান না, বরং শিক্ষার উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, সংস্কৃতির উন্নয়ন, শিল্পের উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন, মেধা ও মননের বিকাশের উন্নয়ন। আজ যা কল্পনা, কাল তা বাস্তবতা- তারই নাম শেখ হাসিনা। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও মানুষ কল্পনাকেই বাস্তবে রূপ দেয়।

জাতি হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য আমরা শেখ হাসিনা’র মত একজন রাষ্ট্রনায়ক পেয়েছি। আবার আমাদের দুর্ভাগ্য তাঁকে আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি বা যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। তাঁর চিন্তা, চেতনা, দর্শনের গভীরতা উপলব্ধি করতে পারছি না। আমরা তাকে আর দশজনের মতোই সরকার প্রধান বা দলীয় প্রধান মনে করছি। অথচ বিশ্বে এই মুহুর্তে যে সরকার প্রধানকে নিয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে তারই নাম শেখ হাসিনা। ইন্টারনেটে সার্চ দিলে পাবেন, হাবার্ডের কেনেডি স্কুল, জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটি, লন্ডনের কুইন মেরী, অস্ট্রেলিয়ার সিডনী ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু করে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দুই ডজন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গবেষণা করছে। তাদের গবেষণার পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু প্রাপ্তির যোগফল একই। বঙ্গবন্ধুকন্যার বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। যার মূল কারিগর শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এক অনন্য দিক হলো, তিনি জনগণের কণ্ঠস্বর হয়েছেন, জনগণের আশা আকাংখাকে ধরতে পেরেছেন, জনগণকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে শিখিয়েছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের এক আশা জাগানিয়া গান, যেই গানের সুর এই দেশের মানুষকে করেছে অদম্য, আশাবাদী। হ্যামিলনের বংশীবাদক তিনি। শেখ হাসিনার যাবতীয় কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্র জনগণ। তিনি জনগণের ক্ষমতায়নের মূল প্রবক্তা এবং ক্ষমতায়নের আলোকেই বাংলাদেশকে বিকশিত করছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্মারক চিহ্ন এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গৌরব। আমরা মূলত এ দর্শন নিয়ে কাজ করি।

ইটিভি অনলাইন: কোন কোন দিক থেকে শেখ হাসিনা অন্য দল বা সরকার প্রধানদের থেকে ব্যতিক্রম?

ওমর ফারুক চৌধুরী: শেখ হাসিনাই বিশ্বে একমাত্র নেতা যিনি আন্তর্জাতিকভাবে ৩৯টি পুরষ্কার জিতেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিতে তিনি দশটি উদ্যোগ নিয়েছেন। যেমন- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার সহায়তা, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বিকাশ। এই উদ্যোগগুলোর যেকোনো একটির জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কার পাওয়া উচিত। এই উদ্যোগগুলো কেবল উন্নয়নের জন্য নয়, এর পিছনে আছেন একজন রাষ্ট্রনায়কের রাষ্ট্রচিন্তা ও দর্শন। এর মুখ্য বিষয় হল জনকল্যাণ।

ইটিভি অনলাইন: জনকল্যাণ তো পৃথিবীর অন্য রাষ্ট্রনায়করাও তাদের নিজ নিজ দেশে করছেন শেখ হাসিনা’র বিশেষত্ব কী?

ওমর ফারুক চৌধুরী: উন্নয়ন তো অনেক দেশে হচ্ছে এটা সত্য। লিবিয়ার চেহারা বদলে দিয়েছিলেন গাদ্দাফী। ইরাককে আধুনিক রাষ্ট্র বানিয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন। অন্যদের সঙ্গে শেখ হাসিনার পার্থক্য হলো জনগণের সম্পৃক্তকরণ, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের ভাবনাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক। মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। শুধু কী গরীব মানুষকে সেবা দান? তা না। এতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এটি সরকার ও জনগণের সম্মিলিত শক্তির অসাধারণ মাইলফলক। একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জমি দিয়েছে স্থানীয় জনগণ। সরকার শুধু ভবনটি বানিয়ে দিয়েছে। যারা হাসপাতালটি দেখভাল করেন, তদারকি করেন তারাই ক্লিনিকের মালিক। ক্লিনিকের কর্মচারীরাও এদের কাছে জবাবদিহি করে। জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় এর চাইতে অভাবনীয় উদ্যেগ আর কী হতে পারে। আমরা জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করি। আমাদের লক্ষ্য হল জনগণকে ক্ষমতার কেন্দ্রে আনা। এটি হল মূলত আওয়ামী যুবলীগের বা আমাদের কাজ। এবং এই দর্শনটি জাতিসংঘে যে স্বীকৃতি দিয়েছে তা গবেষণাও করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।

ইটিভি অনলাইন: আপনি যুবলীগের রাজনীতিতে মেধাভিত্তিক চর্চা শুরু করেছেন। যুবকদের গবেষণা কাজে উৎসাহী করছেন। মূলত আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এ ধারা শুরু হয়…

ওমর ফারুক চৌধুরী: আমি যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমার উপলব্ধি হল, আমি যার নেতৃত্বে কাজ করছি বা যাকে নেতা মানি তিনি কেমন তা আমাকে জানতে হবে। তখন আমরা বিশ্বের বড় বড় ২০ জন গবেষকের সঙ্গে ইমেইলে চিঠি লেনদেন শুরু করি। এখানে একটি কথা বলি। কেউ যদি কোনো কাজ করতে চায় সেই কাজ নিয়ে তাকে স্বপ্ন দেখতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনার পথগুলো কোন দিকে তা নিয়ে ভাবতে হবে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। একার পক্ষে কাজ করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। যে নেতা ‘আমিত্বে’ বিশ্বাস করে সেই নেতাকে দিয়ে কিছু হবে না। আপনি খেয়াল করেন, বঙ্গবন্ধু কখনো ‘আমি’ ‘আমি’ বলেছেন? বলেননি। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পরিকল্পনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে। মূলত এজন্যই মেধাভিত্তিক বা গবেষণা ধর্মী কাজে আগ্রহী হয়।

ইটিভি অনলাইন: কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যুবলীগ যথেষ্ট শক্তিশালী সংগঠন। কিন্তু তৃণমূলে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি বলে অনেকের অভিযোগ। আপনি কী তাই মনে করেন?

ওমর ফারুক চৌধুরী: দলকে শক্তিশালী করা মানে কী? ঐক্যবদ্ধ হওয়া মানে কী? শক্তিশালী হতে হলে সবার প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। ঐক্য থাকতে হবে। আমি দল করি । কে আমার বিরুদ্ধাচরণ করছে সেটা আমার দেখার বিষয় না। কোনো বৃহৎ লক্ষ্য সামনে নিয়ে এগোতে হলে আমি যেহেতু সুপ্রিম অথরিটি আমার কাজ হবে সবাইকে সমন্বয় করে চলা। পুরো সংগঠনটাই একটা পরিবার। কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওর্য়াড সবই সমান গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের একটি অঙ্গে ব্যথা পেলে যেমন পুরো শরীরে তার অনুভূতি হয়, তেমনি তৃণমূল বাদ দিয়ে কেন্দ্র শক্তিশালী হওয়া সম্ভব নয়। আমরা চেষ্ট করি প্রতিটা জেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে। তারা উপজেলা সমন্বয় করবে। উপজেলা ইউনিয়ন দেখবে। এটাই তো নিয়ম। বিভিন্ন সমাবেশে জেলা পর্যায় থেকে যারা আসে আমরা তাদের মতামতও নিয়ে থাকি। যেকোনো সমাবেশে গেলে তৃণমূল নেতাদের বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দিই। আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠন হিসাবে যুবলীগও একটি বৃহৎ সংগঠন, বৃহৎ পরিবার। কিছু বিশৃংখলা থাকতেই পারে। আমরা সেগুলো কাটিয়ে উঠব।

ইটিভি অনলাইন: বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও আপনি বক্তব্য দিয়েছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এগুলো ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। অনেক ‘হাইব্রীড’ এমপির কাছে রাজনীতি এখনও কুক্ষিগত। সেখান থেকে রাজনীতিকে বের করে আনার উপায় কী?

ওমর ফারুক চৌধুরী: ভোগ ও ত্যাগ ভাই ভাই। যে ভোগ করে নাই সে ত্যাগ করতে পারে না।যে বিরিয়ানী খায়নি সে বিরীয়ানী খাবে। যে প্রেম করে নাই সে প্রেম করতে চাইবে। আপনি যে, বলছেন হাইব্রীড, এদের দাপট তো একদিনে শুরু হয় নাই। আমাদের নেতারা এদের প্রশ্রয় দিয়েছে। অসংখ্য আজে বাজে সংগঠন- অমুক লীগ তমুক লীগ নাম নিয়ে গঠিত হয়েছে। শুধুমাত্র ব্যানার কে পুঁজি করে অনেক বড় নেতা গিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন। আপনারা সাংবাদিকরা তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। সেসব আজে বাজে সংগঠনের মাধ্যমেই তারা চেপে বসেছে। বিভাজন তৈরী করে এগিয়ে যাওয়া যায় না।

ইটিভি অনলাইন: ছাত্রলীগের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা কিছু মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন: বয়স, ছাত্রত্ব, অবিবাহিত হওয়া ইত্যাদি। যুবলীগের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নিবেন কী?

ওমর ফারুক চৌধুরী: যিনি সৃষ্টিশীল তিনি যুবক। খেয়াল করলে দেখবেন প্রতি দশ বছর পর পর মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। সে বিবেচনায় যৌবনকাল খুব গুরুত্বর্পূণ সময়। বাংলাদেশের যে কোনো যুবক, যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল, উদার, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চেতনা লালন করেন তিনি যুবলীগ করার অধিকার রাখেন। কেউ যদি সংগঠনে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী কোনো কাজ করেন তাহলে সংগঠন গঠণতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে।

ইটিভি অনলাইন: আগামী নির্বাচন নিয়ে যুবলীগের প্রস্তুতি কী? যুবলীগ কেমন ভূমিকা রাখবে?

ওমর ফারুক চৌধুরী: যুবলীগের কাজ হচ্ছে জনমত সৃষ্টি করা। সত্য মিথ্যার পার্থক্যগুলো মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া। জনগণের সামনে রাজনীতির সঠিক চিত্র তুলে ধরা। রোহিঙ্গাদের রিলিফ দেওয়ার নামে নির্বাচনী সভা করা যে ধোঁকাবাজি তা বুঝিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশ খাদ্য আমদানির দেশ নয়, খাদ্য রফতানির দেশ। বাংলাদেশ এখন কৃষিতে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ যে সঠিক গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে ,সমৃদ্ধির পথে যাচ্ছে সেটি জনগণের সামনে তুলে ধরাই যুবলীগের কাজ।

ইটিভি অনলাইন: আপনি দেখতে প্রবীণ হলেও একজন তরুণের মতোই পরিশ্রম করেন। এই সকাল আটটায় এসে হাজির হয়েছেন বঙ্গবন্ধু এভিনিউর যুবলীগ কার্যালয়ে। এতটা উদ্যম কীভাবে পান?

ওমর ফারুক চৌধুরী: (হেসে) ভাই, আমি এখনো যুবলীগ। তাই। দোয়া করবেন, যেন আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু’র আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে পারি।

ইটিভি অনলাইন: আপনাকে ধন্যবাদ। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দিলেন।

ওমর ফারুক চৌধুরী: ধন্যবাদ একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে।

/ এআর /