ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

৩৮তম বিসিএস প্রিলি

শেষ সময়ে বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি

প্রকাশিত : ০৪:২০ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ১০:০৪ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৭ সোমবার

কড়া নাড়ছে ৩৮ তম বিসিএস। মাস খানেক বাদেই (সম্ভাব্য তারিখ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ) প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এই সময়ে নিশ্চয়ই পড়ালেখায় ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন বিসিএস ক্যাডার প্রত্যাশী বন্ধুরা। ৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীরা সামনের স্বল্প সময়ে বাংলা (সাহিত্য ও ব্যাকরণ) বিষয়ে কীভাবে গুছানো প্রস্তুতি নিবেন সে বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের স্নাতক রব্বানি হোসেন। অনুলিখন করেছেন ইটিভি অনলাইনের সহ-সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান ।   

বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী বন্ধুদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে- বিসিএস মানেই Preliminary এবং লিখিত/written পরীক্ষাগুলো ভালো করা। যারা প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস Connect করে পড়তে পারেন তাদের জন্য লিখিতর চাপ অনেকাংশে লাঘব হবে। জীবনের লক্ষ্য যাদের বিসিএস তারা প্রিলিমিনারি ও লিখিত উভয় পরীক্ষা মাথায় রেখেই প্রস্ততি নিবেন বলে আশা করি। 

৩৮তম প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় ভালো করতে হলে আপনারা বাংলা-৩৫ নম্বরকে ভালো নাম্বার পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অর্থ্যাৎ বাংলায় অন্যরা যেখানে ২০/২২ পাবে আপনি একটু গুছিয়ে পড়ে ৩০/৩২ নম্বর পেয়ে যেতে পারেন।

বাংলা বিষয়কে প্রধানত সাহিত্য এবং ব্যাকরণ এই দুই অংশে ভাগ করে পড়তে পারেন। যার মধ্যে অনেকগুলো Sub – division থাকবে; যা আপনাকে প্রশ্ন কমন এবং সহজেই উত্তর দিতে সাহায্য করবে।

সাহিত্য-২০

বিসিএস পরীক্ষায় সাহিত্যে নম্বর বেশী পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। Huge সিলেবাস হলেও জেনে বুঝে পড়তে পারলে ২০ এর মধ্যে ১৭/১৮ পাওয়া সম্ভব। নিচের Point গুলো শেষ সময়ে Apply করলে আশা করি ভালো করবেন।

প্রিলির জন্য সাহিত্যে প্রস্তুতির সময় মাথায় রাখবেন যে লিখিত পরীক্ষায় সাহিত্য বিষয়ে ৩০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। একটু বুঝে পড়লে আপনি দুই পরীক্ষা একভাবে পড়েই ভালো করতে পারবেন।

#লেখক : বাংলা সাহিত্যের লেখক ও তাঁদের কর্ম গুলোকে ৪টি ভাগে ভাগ করে আপনারা পড়তে পারেন। যা বিসিএস বাছাই এবং লিখিত উভয় পরীক্ষায় আপনাদের প্রশ্ন কমন এবং Informative উত্তর দিতে সাহায্য করবে।

১. প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যিক ও তাঁদের কর্ম থেকে প্রতিবছর ৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকেই । এ জন্য আপনারা প্রাচীন ও মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও সাহিত্য সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ-

সাহিত্যিক : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বড়ু চন্ডিদাস, বিদ্যাপতি, শাহ মুহাম্মদ সগীর, গোবিন্দদাস, আলাওল, আব্দুল হাকিম, ভারতচন্দ্র, ফকির গরীবুল্লাহ, দৌলত উজির, চন্দ্রাবতী।

সাহিত্য : চর্য্যাপদ, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য, লৌকসাহিত্য ও ময়মনসিংহ গীতিকা, নাথ ও আরবি সাহিত্য।

২ . পুরাতন বাঙালি সাহিত্যিক : প্রাচীন বাঙ্গালী সাহিত্যিক বলতে আমি রবীন্দ্র পূর্ব ও পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ, আলোচিত, বিখ্যাত ও বিসিএস বান্ধব সাহিত্যিকদের বোঝাতে চাচ্ছি। কারণ বিসিএস প্রিলিতে এদের প্রশ্ন আসবেই। যথা : রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, মাইকেল মুধুসূদন, ঈশ্বরচন্দ্র, মীর মোশাররফ, প্রমথ চৌধুরী, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, রোকেয়া, জীবনানন্দ।

তাদের জীবনী, কর্ম এবং উক্তি সমানভাবে বাছাই এবং লিখিত উভয় পরীক্ষাতে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

৩. ওপার বাংলার সাহিত্যিক ও সাহিত্য বিসিএস ৩৫ তম থেকে প্রতিবার আসছে। সুতরাং কোলকাতার বিখ্যাত লেখকদের সম্পর্কে জানতেই হবে।

# বিভূতিভূষণ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য‌্য ।

৪. বাংলাদেশের সমসাময়িক উল্লেখযোগ্য লেখক ও তার কর্ম থেকে প্রশ্ন থাকে। যেমন : শামসুর রাহমান, হুমায়ূন আহমেদ, নির্মলেন্দুগুন, সেলিম আলদীন, সৈয়দ শামসুল হক, শওকত ওসমান, জহির রায়হান, জসীমউদ্দিন, সেলিনা হোসেন।

# মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্য অবশ্যই জোর দিয়ে পড়তে হবে। এটি যেমন প্রিলিতে থাকে তেমনি লিখিত পরীক্ষাতে থাকেই। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস, নাটক, গ্রন্থ, উক্তি ভালোভাবে পড়তে হবে।

# উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদক সম্পর্কে শেষ সময়ে দেখে নিতে পারেন।

# উক্তি ও পংক্তি বিষয়টি মুখস্থ করে ফেলতে হবে যাতে লিখিত পরীক্ষার সাহিত্য বিষয়ক ৩০ নম্বরে ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, ভারতচন্দ্র প্রভৃতি সাহিত্যিকদের গুরুত্বপূর্ণ উক্তিগুলো মুখস্থ ফেলবেন।

কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ উক্তি

* কোন শিক্ষাকে স্থায়ী করিতে হইলে, গভীর করিতে হইলে ব্যাপক করিতে হইলে তাকে চির পরিচিত মাতৃভাষায় বিগলিত করিয়া দিতে হয় -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

* স্বাধীনতা তুমি

শহীদ মিনারে অমর একুশে ফ্রেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা

-শামসুর রাহমান।

 

* আমি বাঙালি

বাংলা আমার দেশ,

বাংলা আমার ভাষা

-শেখ মুজিবুর রহমান

* মাতৃ ভাষায় যাহার শ্রদ্ধা নাই, সে মানুষ নহে

-মীর মোশাররফ হোসেন

* মম এক হাতে বাঁকা বাশের বাশরী

আর হাতে রণ ‌তুর‌্য

‌-কাজী নজরুল ইসলাম।

* কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?

মানুষেরি মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর।

-শেখ ফজলল করিম।

*সকল কালে সকল দেশে সকল লাভ -লোভকে জয় করিয়াছে তরুণ । -- কাজী নজরুল ইসলাম

* পরজনমে দেখা হবে প্রিয় ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও-কাজী নজরুল ইসলাম

* জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে মরি যেন এই দেশে-সুফিয়া কামাল

* এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-

নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার

-সুকান্ত ভট্টাচার্য

*আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে

- কামিনী রায়।

* সাবাস বাংলাদেশ এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;

জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।

- সুকান্ত ভট্টাচার্য

* মধুর চেয়ে আছে মধুর

সে এই আমার দেশের মাটি,

আমার দেশের পথের ধূলা

 খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।

- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

# এছাড়া ভ্রমনকাহিনী যেমন : পালামৌ (সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়), বিলাতে সাড়ে সাত শ’ দিন (মুহম্মদ আব্দুল হাই), পেশোয়ার হতে তাসখন্দ (শহীদুল্লাহ কায়সার), ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র ( ইব্রাহিম খাঁ), পথে ও প্রবাসে (অন্নদাশঙ্কর রায়), বুলগেরিয়া ভ্রমন ( ড. মুহম্মদ এনামুল হক), সাত-সাঁতার ( জহুরুল হক), দ্বিতীয় পৃথিবীতে (আ.ন.ম. বজলুর রশীদ), তুরস্ক ভ্রমন (ইসমাইল হোসেন সিরাজী), রাশিয়ার চিঠি ও জাপান যাত্রী (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), সোভিয়েতের দিনগুলি (বেগম সুফিয়া কামাল), বন্দর থেকে বন্দর (সানাউল হক) প্রভৃতি এক পলক দেখে নিতে পারেন।

# চরিত্র, বাংলা গান, কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যু সাল, উপাধি প্রভৃতি বিষয়গুলো শেষ সময়ে দেখে নিতে পারেন।

ব্যাকরণ অংশ

বাংলা ব্যাকরণ : বাংলা ব্যাকরণ অংশ আপনাদের অনেক বেশী গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে। কারণ এই অংশ থেকে প্রিলি ও লিখিত উভয় পরীক্ষাতে প্রশ্ন থাকে। লিখিত পরীক্ষার ব্যাকরণের ৩০ নম্বর মাথায় রেখে এখনই খুব সুন্দর করে নিয়ম ও উদাহরণসহ মুখস্থ করতে পারেন। এছাড়া বাংলা লেখা সমৃদ্ধ নির্ভূল এবং গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ব্যাকরণ জানা অত্যাবশ্যক।

বাংলা ব্যাকরণ সিলেবাসকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।

১. শুধু প্রিলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ Topics : শুধু প্রিলির জন্য যে বিষয়গুলো জরুরী সেগুলো মুখস্থ না করে শুধু শেষ সময়ে দেখে যেতে পারেন। যেমন : বর্ণ, সমার্থক শব্দ, ধ্বনি, সমার্থক শব্দ, প্রত্যয়, সন্ধি, সমাস, পরিভাষা, বাংলা ভাষা ও লিপি, উপসর্গ, অনুসর্গ।

২. প্রিলি ও লিখিত উভয় ধরনের পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ Topics : প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য ভালো ব্যাকরণ Topics গুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে Direct মুখস্ত করতে পারেন। কারণ এগুলো উভয়ই পরীক্ষার জন্য জরুরি।

# শব্দ-শব্দের প্রকাভেদ, শব্দ গঠনের নিয়ম, বিদেশী শব্দ

# পদ- প্রকারভেদ-বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ

# বাক্য-প্রকারভেদ-বাক্য শুদ্ধি

# সমাসের নিয়ম

# ণত্ব ও ষত্ব বিধান

কিছু জটিল শব্দের বানান

নিক্বন, নির্দ্বন্দ্ব, ন্যুজ, প্রতিন্দ্বন্দ্বী, প্রত্যুষ, ব্যাতীত, ব্যূহ, যদ্যপি, যশস্বী, লঘূকরণ, শ্বশুর, শ্বশ্র, শ্মশান, শ্মশ্রু (দাড়ি), সন্ন্যাসী, সরস্বতী, সিন্দূর, হ্রস্ব, ঔজ্জ্বল্য, ঔদ্ধত্য, গৃহিনী, গণনা, গার্হস্থ্য, জ্যোতিষী, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি বানানগুলোতে।

 বিশেষ দ্রষ্টব্য : এগুলো আমার ব্যক্তিগত BCS সম্পর্কিত ভাবনা। আপনাদের যদি সামান্য কাজে লাগে আমি স্বার্থক। ভুল করে থাকলে বা এ বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

 লেখক : রব্বানী হোসেন

৩৬ তম বিসিএস ক্যাডার (পুলিশ)

 

/ এআর /