৩৮তম বিসিএস
শেষ সময়ে প্রস্তুতিটা নিতে হবে নিজের মতো করে
প্রকাশিত : ১১:০৯ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:৫৯ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার
বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস প্রত্যাশীদের দরজায় কড়া নাড়ছে ৩৮ তমের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই পরীক্ষা। এই সময়ে নিশ্চয়ই পড়ালেখায় ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন বিসিএস প্রত্যাশী বন্ধুরা।
৩৮ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীরা সামনের স্বল্প সময়ে কিভাবে নিজেদের পড়াশুনা গুছিয়ে নিবেন সে বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির স্নাতক বিশ্বজিত দেবনাথ।
বিশ্বজিত দেবনাথ মনে করেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছুঁতে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হবে। তাঁর মতে, বিসিএসের পড়াশোনাটা সম্পূর্ণ নিজের উপর নির্ভর করে। কোচিং শুধু গাইডলাইন দিতে পারে। প্রস্তুতিটা নিতে হতে নিজের মতো করে। এক্ষেত্রে ইউটিউবও হতে পারে আপনার প্রস্তুতি সহায়ক।
বিসিএসে ক্যাডার হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে। একটাই স্বপ্ন দেখতে হবে – বিসিএস স্বপ্ন। এজন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। বিসিএসের পরিধি অনেক বড়। তাই অনেক সময় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। তবুও প্রিলিমিনারির আগমুহূর্তে স্বল্প সময়ে কিভাবে গুছানো প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে এ বিষয়ে বিশ্বজিত দেবনাথ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। অনুলিখন করেছেন মীর মাহবুবুর রহমান।
নিচে তাঁর বিষয়ভিত্তিক পরামর্শগুলো তুলে ধরা হলো-
বাংলা ৩৫
বিবিএসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলা। বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১২০ পেলে মোটামুটি নিরাপদ থাকা যায়। সেজন্য যে বিষয়গুলোকে নিজের ‘স্ট্রং জোন’ বানানো যায় সে বিষয়গুলোর মধ্যে বাংলা অন্যতম। বাংলা ৩৫, ইংরেজি ৩৫ ও সাধারণ জ্ঞানের বাংলাদেশ অংশ ৩০। এই তিন বিষয় থেকেই ১০০ নম্বরের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। এখানে আপনাকে অর্ধেক সময় দিতে হবে। সুতরাং বাংলা অংশটাও আপনার জোর দিতে হবে। এজন্য ৩-৪টি সেট পড়তে হবে। সময় কম, তাই প্রিলিমিনারির জন্য রিডিংয়ের প্রতি জোর দিতে হবে।
প্রতিবছরই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ থেকে প্রশ্ন আসে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া, মীর মশাররফ, ফররুখ আহমেদ, প্রমথ চৌধুরী, শামসুর রাহমানের মতো ব্যক্তিদের জীবন ইতিহাস ও রচনা থেকেও প্রশ্ন আসে। সুতরাং তাদের কর্ম ও জীবনী জেনে নিতে হবে।
ব্যাকরণ অংশে ভালো করতে হলে বিসিএসসহ পিএসসির নন-ক্যাডার ও অন্যান্য সরকারি চাকরির ও বিভিন্ন ব্যংকে নিয়োগের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো আগে দেখে নিতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নপত্র থেকে অনেক প্রশ্ন কমন পড়ে।
বিপরীত শব্দ, সমার্থক শব্দ, সমাস, বানানরীতি, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান ইত্যাদি বিষয়গুলো দ্রুত দেখে নিতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু হতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। তাই কোনো বিষয়েই বিস্তারিত জানার সুযোগ কম। শর্টকার্ট পদ্ধতিতে পড়তে হবে। বাজারের অনেক বইয়েই শর্টকার্ট বিভিন্ন পদ্ধতি দেওয়া আছে। শর্টকাটের জন্য নিয়মিত ইউটিউবে বিসিএস বাংলা সম্পর্কিত শর্টকাট ভিডিও ক্লিপগুলো অনেক সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
বাংলা বানানের জন্য বাংলা একাডেমি প্রণীত বানান রীতিগুলো আয়ত্ব করে ফেলতে হবে। বাংলা একাডেমি ও একুশে পদক সম্পর্কে প্রতিবছর প্রশ্ন আসে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যর উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জানতে হবে।
ইংরেজি - ৩৫
বিসিএসে ভালো করতে হলে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো করতে হবে। বিসিএসের ইংরেজি এতো বেশি কঠিন হয় না। ব্যাংক জবের তুলনায় বিসিএস পরীক্ষার ইংরেজি সহজ হয়।
ইংরেজি সাহিত্য অংশের জন্য স্নাতক সিলেবাসটি পড়তে হবে। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ সম্পর্কে পরিস্কার হতে হবে। জানতে হবে ইংরেজি সাহিত্যিকদের জীবন সম্পর্কেও। ইংরেজি সাহিত্যের বড় বড় নাটক উপন্যাসের চরিত্র সম্পর্কে জানতে হবে। বিসিএসে প্রতিবছরই প্রশ্ন আসে এসব থেকে।বিসিএস ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ইউটিউবে ভালো ভালো ভিডিও ক্লিপ পাওয়া যায়। সেগুলো অনেক সহায়ক হিসেবে কাজ দিবে।
ইংলিশ লিসেনিংয়ের জন্যও ইউটিউব আপনার সহায়ক হতে পারে। এছাড়া বিসিএস ও পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে নিতে হবে।
গ্রামার অংশের জন্য Subject Verb agreement, Sentence correction, Tense,Voice, narration, Right forms of Verbs, Conditionals ইত্যাদি টপিকগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। এগুলো বিসিএস প্রিলি ও লিখিত উভয় পরীক্ষার জন্যই কাজে দিবে।
পাশাপাশি ভোকাবলারির জন্য ইংরেজি শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে। গ্রামার সম্পর্কিত বিসিএস ও পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়ে নিতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান - ৫০
সাধারণ জ্ঞান দুটি অংশে বিভক্ত ।
১. বাংলাদেশ বিষয়াবলী
ও
২. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী।
বাংলাদেশ বিষয়াবলী-৩০ : প্রিলিমিনারিতে ৩০ নম্বর থাকে বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে। এ বিষয়ে ভালো করতে হলে বাংলার সব ইতিহাস জানতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যেহেতু সন্নিকটে সেহেতু সব কিছু বিস্তারিত জানার সুযোগ কম। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহগুলোর প্রতি আপাতত জোর দিন। যেমন : ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রবাহগুলো জেনে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিগণ সম্পর্কেও তথ্য জানতে হবে।
আন্তর্জাতিক ২০ : প্রিলিমিনারিতে ২০ নম্বর থাকে আন্তর্জাতিক বিষয়বলি থেকে। তাই বিভিন্ন দেশ, সরকার প্রধান, জাতীয় প্রতীক, পার্লামেন্ট প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বৈশ্বিক রাজনীতি, বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা করতে হবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য স্বনামধন্য সংগঠনগুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। নোবেল পুরস্কার সম্পর্কে জানতে হবে।
এছাড়া সাম্প্রতিক বিশ্ব সম্পর্কে হালনাগানাদ থাকতে টেলিভিশনের সংবাদ দেখতে হবে , সংবাদপত্র নিয়মিত পড়তে হবে।
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা – ৩০
গনিত অংশে ভালো করতে হলে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর গণিত বইগুলো পড়ে নিতে হবে আগে। এটা প্রিলি ও লিখিত উভয়ই পরীক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজে দিবে। এছাড়া ৩-৪টি সেট বই পড়লেও কাভার হয়ে যাবে। প্রিলির জন্য শর্টকাটের জন্য ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপ দেখতে পারেন। তবে সবার আগে সমাধান করে ফেলতে হবে পিএসসির বিগত বছরের যাবতীয় প্রশ্ন গুলো।
মানসিক দক্ষতা অংশটা ইংরেজি ও বাংলার সাথে সম্পৃক্ত। গণিতের বিভিন্ন ধারা, আইকিউসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো থেকেই মূলত প্রশ্ন থাকে। ইংরেজি ও বাংলা ব্যাকরণের প্রতি জোর দিলেও মানসিক দক্ষতা বিষয়ে ভালো করা যায়।
বিজ্ঞান - ১৫
বিজ্ঞানের জন্য নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি পড়তে হবে। জীব বিজ্ঞান, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি বিষয়গুলোও পড়ে নিতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন বিজ্ঞানীর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে হবে।
এছাড়া বিসিএসসহ পিএসসির অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়ে নিতে হবে।
ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা – ১০
এ অংশ থেকে প্রিলিমিনারিতে ১০ নম্বর থাকে। এ অংশে ভালো করতে হলে বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ভাল ধারনা রাখা জরুরি। নবম দশম শ্রেণির ভুগোল বইটি পড়ে নিলে ভালো হয়। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি – ১৫
কম্পিউটারের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এছাড়া মাউস , হার্ডওয়ার, সফটওয়ার, সিপিইউ, হার্ডডিস্ক, ই-কমার্স, ইন্টারনেট, সংখ্যা পদ্ধতি, প্রোগ্রামিং নেটওয়ার্ক প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন আসে।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত পিএসসি নন-ক্যাডার ও অন্যান্য সরকারি চাকরির ও বিভিন্ন ব্যংকে নিয়োগের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়তে হবে।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন - ১০
এই অংশ সম্পর্কে বিগত বছরের খুব বেশি প্রশ্ন নেই। তাই অংশে ভালো করতে হলে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, আইনের শাসন, মুল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা নিতে হবে। নবম – দশম শ্রেণীর পৌরনীতি বইটা সহায়ক হিসেবে কাজে দিবে। তাছাড়া ওরাকল ও অ্যাসিওরেন্স সিরিজের বইগুলো পড়ে নিতে পারেন।
/ এমআর / এআর