ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে আছেন পাঠক হৃদয়ে

তবিবুর রহমান

প্রকাশিত : ০১:৩৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী লেখক হুমায়ূন আহমেদ। নন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী ছিল গতকাল। এদিন নানা আয়োজনে পালিত হয় দিবসটি। হুমায়ূন আহমেদ তরুণদের মাঝে কতটা সারা ফেলেছেন, তাকে নিয়ে তরুণদের চিন্তা কী এ বিষয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বেশ কয়েকজনের। তারা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তাদের প্রায় সবাই মনে করেন, হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি বেঁচে থাকলে আরও কিছু সৃষ্টি বেরিয়ে আসতো। পাঠক হৃদয় তৃপ্তিবোধ করত। হুমায়ূন মরেননি, বেঁচে আছেন পাঠকের হৃদয়ে।  

৭০তম জন্মদিরে গতকাল শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে শুরু হয়েছে ‘হুমায়ূন আহমেদের একক বইমেলা’। এ মেলার উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার, সাহিত্যিক যতিপ্রকাশ দত্ত, প্রকাশক আলমগীর রহমান, সাহিত্যিক আসলাম সানী প্রমুখ। হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশকারী ১৮টি প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশকরা ৯ম বারের মত এই মেলার আয়োজন করেছে। ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত রোজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

মেলার আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আরিফুল ইসলাম ইটিভি অনলাইনকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। শুরু থেকেই তাকে নিয়ে আমাদের উন্মদনা ব্যাপক ছিলো। তিনিও গল্প-উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্র দিয়ে আমাদের খুব গভীরে প্রবেশ করেছেন। আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদ স্যার মরেন তিনি বেচেঁ আছেন, প্রতিটি ভক্তের হৃদয়ে। এমনকি আজীবন থাকবেন। ভক্তরা তাকে আজীবন ভালোবাসবেন বলেও মনে করে তিনি।

বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুর আজিজ ইটিভি অনলাইনকে বলেন, সাহিত্যিকরা কখনো মরেন না। সাহিত্য কর্ম দিয়ে সামাজের মধ্যে আজীবন বেঁচে থাকেন। তেমনি আমার কাছে মনে হয় হুমায়ুন আহমেদ তার  সাহিত্য, নাটক-চলচ্চিত্র সব মাধ্যমে ভক্তদের হৃদয় বেঁচে আছে, আর আজীবন থাকবেন। সব ক্ষেত্রেই তিনি একজন সফল মানুষ। সফল মানুষদের ক্ষয় নেই।

নাছিম নামের আর এক ভক্ত জানান, সবাই বছরের নিদিষ্ট দিনগুলোতে হুমায়ুন আহামেদ স্যারকে স্মরণ করলেও  আমি স্মরণ করি প্রতিদিন। একদিন তার লেখা বই না পড়তে পারলে মনে আজ কি যেন একটা কাজ বাকি আছে। আমার কাছে হুমাযুন এক অন্য রকম নাম।

মেলায় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, হুমায়ুন আহমেদ কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক সৃজনশীল মানুষ। তিনি সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের মাঝে প্রবেশ করেছেন।সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি গল্প, নাটক, সিনেমা, উপন্যাসসহ সব জায়গায় সম্রাটের মত বিচরণ করেছেন।

মেহের আফরোজ শাওন বলেন, হুমায়ূনের অসমাপ্ত কাজকেগুলো এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। এই বইমেলা আজীবন চলবে এবং এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে হুমায়ূন আহমেদকে পৌঁছে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এ লেখক। পড়ালেখা শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।

উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক একুশে পদক লাভ করেন। হুমায়ূন আহমেদের শরীরে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।

উন্নত চিকিত্সার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। সেখানে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে তাঁরই গড়ে তোলা নন্দনকানন নূহাশ পল্লীর লিচুতলায়।

আমি প্রতিটি দিনই হুমায়ূন আহমেদের শূন্যতা অনুভব করি। তাকে ছাড়া আমার পৃথিবী অসম্পূর্ণ। তার সঙ্গের প্রতিটি দিন আমার স্মৃতিময়। সেই দিনগুলোর কোনোটি ভুলে থাকার মতো নয়। তার সন্তানরা তাকে ছাড়া বড় হচ্ছে। প্রতিটি দিন তারাও তাদের বাবাকে মিস করছে। সত্যি বলতে পরিবারের মানুষদের শূন্যতা কোনো ভাষা দিয়ে বোঝানো যায়না।

/ এআর /