তারকালাপ
অন্তুর আইডল নোবেল
প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০১:৩০ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার
জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা অন্তু করিম। ‘এক জীবন’গানটির মিউজিক ভিডিওতে মডেল হয়ে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। তার আরও কিছু মিউজিক ভিডিও এরইমধ্যে দর্শকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। নাটক বা চলচ্চিত্রে খুব একটা বেশি আগ্রহ নেই অন্তুর। তবে নিয়মিত মিউজিক ভিডিওর মডেল হিসেবে কাজ করতে চান তিনি। মডেলিং বলেন আর নাটক বলেন মিডিয়াতে অন্তুর আইডল জনপ্রিয় মডেল নোবেল। তাই নিজেকে তৈরি করছেন নোবেলের মত করেই। মনের মত চরিত্র পেলে কাজ করেন নোবেল। অন্তুও স্বস্তা জনপ্রিয়তার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান না। কাজ করে যাচ্ছেন মেপে মেপে। তার পরবর্তী মিউজিক ভিডিও ‘দূরত্ব’। অন্তু আশাবাদী এটি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, নাড়া দেবে।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে অন্তু করিম জানালেন মনের কথা। বর্তমান ব্যস্ততার কথা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : কেমন আছেন?
অন্তু করিম : অনেক ভালো আছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : বর্তমানে কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
অন্তু করিম : মডেলিংয়ের পাশাপাশি এখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত আছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনার তো নতুন মিউজিক ভিডিও আসছে। কেমন হয়েছে কাজটি?
অন্তু করিম : নতুন যে মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশের অপেক্ষায় আছে সেটি দূরবীন ব্র্যান্ডের কর্ণধার ও ভোকালিস্ট শহীদ ভাইয়ের ‘দূরত্ব’ শিরোনামের একটি গান নিয়ে করা হয়েছে। লুৎফর হাসান ভাই, আমার খুব পছন্দের একজন কবি (গীতি কবি), ওনার লেখায় আর আমজাদ হোসেনের কম্পোজিশনে গানটির ভিডিও তৈরি করেছেন তানজিম মিশু। যেখানে আমার বিপরীতে কাজ করেছেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : মিউজিক ভিডিওটির শুটিং কোথায় হয়েছে?
অন্তু করিম : ভিডিওটির চিত্রায়ন হয়েছে কক্সবাজারে। গানের লিরিক্স এর কারণেই ওখানে শুটিং করা। আমরা উখিয়া, টেকনাফ, সোনাপুর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে শুটিং করেছি। এই ভিডিওটিতে আমি ভিন্ন একটি লুক নিয়ে আসছি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : শুটিং সময়ের কোনো অভিজ্ঞতা বা ঘটনার কথা কি বলবেন?
অন্তু করিম : একটা কথা না বললেই নয়; ভিডিওটির শুটিং করতে গিয়ে আমাদের বেশ কিছু দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ওই সময়টাতে প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি চলছিলো। কক্সবাজারে তখন ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত জারি করা হয়। আমাদের শুটিং টাইমে আমরা কখনও সূর্যের দেখা পাইনি। এমনকি একদিন বিচে আমার একটা দৃশ্য শুট করার সময় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় এসে আমাদের সব কিছু লণ্ড-ভণ্ড করে দেয়। ভিডিওটির শুটিং দু’দিনেই শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সম্ভব হয়নি। লেগেছিলো চার দিন।
মজার বিষয় হচ্ছে- যেহেতু বৃষ্টি থামছেই না তাই বৃষ্টি নিয়ে একটি দৃশ্য তৈরি করা হলো। রাতে একটি দৃশ্য নেওয়া হবে। বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য। এটাই ছিলো শেষ দৃশ্য। একটু ভিন্ন লুকে আমাদের সাজানো হয়। ডিজাইনার আশুর করা ড্রেস দিয়ে। তাৎক্ষণিক চিন্তা ভাবনা করেই পোশাক তৈরি করলো। হিমির জন্য দড়ি দিয়ে একটা পোশাক তৈরি করা হয়। আমি বলবো অনেক মেধাবী একটা কাজ হয়েছিলো। আমরা দুজনই পোশাক পড়ে তৈরি। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নাই। আর বৃষ্টি আসে না। হা হা হা…।
পরে বৃষ্টি ছাড়াই করতে হয়েছে দৃশ্যটি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনি তো ‘এক জীবন’ দিয়েই দর্শকদের হৃদয়ে মাঝে সাড়া ফেলেছেন। সেই কাজটি নিয়ে কিছু বলবেন?
অন্তু করিম : একজন শিল্পীর জন্য একটা সিগনেচার ওয়ার্ক খুবই জরুরী। যা দিয়ে একজন শিল্পীকে চিহ্নিত করা যায়। এই আইডিন্টিটি পাওয়ার জন্য একজন শিল্পী বছরের পর বছর কষ্ট করেন। সে যেই হোক না কেনো। হলিউড, বলিউড কিংবা আমাদের দেশের যে কারও কথাই বলেন, সবার ক্ষেত্রে এটি খুবই জরুরি। আসলে আমরা যারা মানুষকে বিনোদন দিতে কাজ করি আমাদের টার্গেট থাকে আমি যেকোন একটি কাজ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারি। সেই আসনটি ছোট্ট হলেও সবাই নিতে চাই।
আসলে আমাদের ক্ষেত্রে অপ্রকাশিত হলেও সত্য যে আমরা সবাই কিন্তু খ্যাতির ক্ষুধার্ত। আমার মনে আছে, কাজ করে যাচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি, কখনও প্রিন্ট মিডিয়ার মডেল, কখনও র্যাম্প শো এর মডেল, কখনও টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের মডেল, আবার নাটকেও কাজ করছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর মত কাজ হয়ে উঠছিলো না। যেটা ‘এক জীবন’ দিয়ে সম্ভব হয়েছে।
এই গানটির আগে আমি কিন্তু মিডিয়াতে প্রায় দশ বছর একটিভ। আমার প্রথম নাটক প্রচার হয় ২০০৫ সালে। কৌশিক শঙ্কর দাশের নাটক। আমার বিপরিতে ছিলো তিশা। সত্যি কথা বলতে আমি বাস্তবে ব্রেক পাই দশ বছর পরে এই ‘এক জীবন’ গানটি দিয়ে। যে গানটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে সাড়া ফেলে দেয়।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনি ‘এক জীবন’ দিয়ে বুঝিয়েছেন যে একটি মিউজিক ভিডিও দিয়েও ব্রেক পাওয়া সম্ভব। যেই সময়টাতে আপনি এটা সম্ভব করেছেন তখন কিন্তু মিউজিক ভিডিওর ততটা কদর ছিলো না। বর্তমানে মিডিয়ার অন্যতম মাধ্যম মিউজিক ভিডিও। কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
অন্তু করিম : আপনার হয়তো মনে আছে- ওই সময়টাতে ফেসবুকে শুধু একটা ছবি পোষ্ট করা যেতো। ইউটিউবও তেমনটা জনপ্রিয় ছিলো না। ইন্টারনেট খুব কম সংখ্যক মানুষই ব্যাবহার করতো। আমার এ গানটি মানুষের কাছে ছড়িয়ে পরে শুধুই ব্লুটুথে। মূলত: ব্লুটুথের মাধ্যমেই একজনের মোবাইল থেকে অন্যজনের মোবাইলে গানটি ছড়িয়ে যায়। বিষয়টা কল্পনা করা যায়? আমি নিজে দেখেছি। ওই সময় আমি যখন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুটিং এ গিয়েছি তখন দেখেছি। যেখানে বিদ্যুৎ নাই। তারা মোবাইলে চার্জ দেয় বাড়ি থেকে তিন চার মাইল দূরে কোন একটা মসজিদে গিয়ে। এমনকি এজন্য তাদেরকে মাসে একটা পেমেন্টও দেওয়া লাগতো। সেই মানুষগুলোর মোবাইলে ছিলো গানটি। তারা বলছে ভাই আপনার একটা গান দেখেছি। এ যাবৎ আমি যত কাজই করেছি আমাকে এই একটা গান সব দিক থেকে সম্মান, পরিচিতি এনে দিয়েছে। শুধু দেশের মানুষই নয়; আমি ইদানিং বিদেশি ভক্তও পাচ্ছি। যারা বাংলা জানেও না বোঝেও না। বর্তমানে আমার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারতে তো আছেই, তুরস্কের কিছু ভক্ত আমি পেয়েছি। যারা বাংলা-তো দূরের কথা, বাংলাদেশ নামে যে একটা দেশ আছে তাদের অনেকে জানে না। তারাও গানটির ভিডিও পছন্দ করেছেন।
এবার আসি তখনকার মিউজিক ভিডিও ও বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে। তখন মিউজিক ভিডিওর প্রতি তেমন একটা আগ্রহ ছিলো। নাক শিটকানো একটা ভাব ছিলো। কোনো হিরোইন বা নতুন মডেলদের প্রস্তাব দিলে রাজি হতো না। আর এখন কোন নতুন কাউকে যদি জিজ্ঞেস করেন কি কি কাজ করছেন? তখন সে গর্ব করে বলে কিছু শর্ট ফিল্ম, মডেলিং ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করছি। এরপর নাটক ও চলচ্চিত্রে কাজের পরিকল্পনা আছে। এই ক্রেডিটটা সম্পূর্ণই আমরা নিতে চাই। বিষয়টিকে পজেটিভ করাতে আমরা পুরো টিম তখন কাজ করেছি। আপনি ভেবে অবাক হবেন এখন একটি সিনেমাতে যে খরচ করা হয় তার চেয়েও বেশি একটি মিউজিক ভিডিওতে ব্যয় করা হচ্ছে। এমন উদাহরণ অনেক আছে। মিউজিক ভিডিওর এই সুদিনকে যদি একটি যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করি। এই পরিবর্তনের একজন যোদ্ধা আমি।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : আপনার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে পাঠকের অনেক আগ্রহ আছে, যদি কিছু বলেন?
অন্তু করিম : ব্যাক্তিগত জীবনে আমি একজন ব্যাবসায়ী। আমার একটা স্বপ্ন আছে। আমি জানি না আমার স্বপ্নটি পূরণ হবে কিনা। আমি একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট হতে চাই। পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমি মজার একটা তথ্য দিচ্ছি। আমার বাবার নাম গোলাম মোস্তফা। চলচ্চিত্রে মোস্তফা নামে তাকে পাওয়া যাবে। তিনিও একজন অভিনেতা ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছিলেন। যদিও তিনি ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু আমি গর্ব করি যে- বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্রে তিনি কাজ করেছেন। আমার অনুপ্রেরণা তিনি। রাতারাতি অভিনয় করে ফেমাস হওয়ার জন্য আমি মিডিয়ায় আসিনি। অভিনয় আমার রক্তে। বাবার নির্দেশেই আমার মঞ্চ করা। আমি মঞ্চ থেকে এসেছি। মিডিয়াতে কিছু হলেও শিখে এসেছি। আমি আমার পরিবার নিয়ে গর্ব করি। আমার সবক্ষেত্রে স্বাধীনতা ছিলো। আমি ই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কি করতে হবে। তবে বাবার উপদেশ নিয়েছি। আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু আমি অনুভব করলাম যে, না আমি একজন ব্যবসায়ী হবো। আমি আমার বাবাকে জানালাম। বাবা সঙ্গে সঙ্গে জানালেন তোমার যেটা ভালো লাগে তাই ই করো।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : চলচ্চিত্রে আসছেন না কেন?
অন্তু করিম : আমি আসলে চলচ্চিত্র করার জন্য মিডিয়াতে আসিনি। আমার কাজ মিউজিক ভিডিও বা মডেলিং নিয়ে। এখানেই আমি কিছু একটা করতে চাই। এ ক্ষেত্রে বলবো- আমার বেশ কিছু মেন্টর আছে। তাদের কাজ, কথা, স্টাইল আমি ফলো করি। আমি অনেক বছর ধরে আমাদের দেশের প্রখ্যাত মডেল নোবেল ভাইকে আইডল হিসেবে ফলো করে আসছি। আমি দূর থেকে সব সময় ফলো করতাম। তিনি খুব অল্প কাজ করেন কিন্তু যে কাজটি করেন সেটি পারফেক্ট করেন। সময় নিয়ে এবং সে কাজটি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। যারা অনেক বেশি কাজ করেন তাদের চেয়েও তিনি জনপ্রিয়। আমার মনে আছে আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখনও নোবেল ভাই স্টার। আর এখন ত্রিশ বছর পরেও তিনি একই অবস্থানে আছেন। বরং আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। মডেলিংয়ে তার উচ্চতা এখনও কেউ ছুঁতে পারেনি। তাই বলতে পারি আমি খুব ভালো একজন আইডল পছন্দ করতে পেরেছি।
তবে নাটক, চলচ্চিত্রে যে একেবারেই কাজ করবো না তা নয়। ভালো কাজ হলে অবশ্যই ভেবে দেখব।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : ভক্ত ও পঠকদের উদ্দেশ্যে কি কিছু বলবেন?
অন্তু করিম : ভক্ত, দর্শক ও পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপকামিং মিউজিক ভিডিওটিতে (দূরত্ব) অনেক ভালো কাজ হয়েছে। আমি আশাবাদী এটি দর্শক হৃদয়কে নাড়া দেবে। আরও একটা ব্রেক থ্রু এনে দেবে।
একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন : অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।
অন্তু করিম : আপনাদেরও ধন্যবাদ। একুশে টিভি অনলাইন ও ইটিভির দর্শকদের জন্য রইলো শুভ কামনা।
এসএ/ এআর