ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

জালিয়াতি করে ঢাবিতে শতাধিক ভর্তি : সিআইডি

প্রকাশিত : ০৫:৩০ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

প্রশ্নফাঁস আর ডিভাইস জালিয়াতির মাধ্যমে গত তিন বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থীপ্রত্যেকটি পরীক্ষায় জনপ্রতি লেনদেন হয়েছে থেকে লাখ টাকা পর্যন্তশুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক নিয়োগ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা জালিয়াতিতেও বড় চক্র জড়িত। মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিট (সিআইডি) সূত্র জানায়, জালিয়াতি চক্রের দুই হোতাসহ ভর্তি হওয়া ৭ ছাত্রকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। গত ১৪ নভেম্বর এ চক্রের ‘হোতা’ এনামুল হক আকাশকে গাজীপুর এবং একইদিন নাবিদ আনজুম তনয়কে রংপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের গ্রেফতার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২০ অক্টেবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে অমর একুশে হল ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে সিআইডি। আদালতে এই দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ এবং প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মূল হোতা হিসেবে নাভিদ অনজুম তনয়ের নাম আসে। এছাড়া ওই চক্রের আরও বেশ কয়েক সদস্যের নামও জানা যায় স্বীকারোক্তিতে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনার অন্যতম মূল হোতা নাভিদ আনজুম তনয় (২৪)। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। আর অপরজন হলো আকাশ, সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তারা বাইরে থেকে উত্তর বলে দিয়ে এবং পরীক্ষার দিন প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে আসছিল।

নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্ত আমরা জানতে পেরেছি, এ জালিয়াতি চক্র শুধু ঢাবি নয়, ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতির সঙ্গেও জড়িত। ওই সব বিষয়েও তদন্ত চলছে। প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রত্যেকটি ভর্তি পরীক্ষায় ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে পর্যন্ত।

তিনি বলেন, মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে গত ১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় এ চক্রের আরেক হোতা আনিন চৌধুরী। তারাও ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ১৪ নভেম্বর রংপুরের কামাল কাছনা বাজার এলাকা থেকে তনয়কে ও গাজীপুর থেকে আকাশকে আটক করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে ডিজিটাল একে একে জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে।

এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তনয় জানিয়েছে, ২০১৫ সাল এবং ২০১৬ সালে টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল ডিভাইস এবং পরীক্ষার আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে অবৈধ উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সে সহায়তা করেছে।

তনয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে প্রক্টোরিয়াল টিমের সহায়তায় অবৈধ উপায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির. প্রসেনজিৎ দাস, রিফাত হোসাইন এবং আজিজুল হাকিম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব চক্র পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য মাস্টারকার্ডের মত দেখতে পাতলা এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ভেতরে মোবাইলের সিম থাকে। ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল ও ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় বড় একটি চক্রের আমরা সন্ধান পেয়েছি। এ নিয়েও কাজ চলছে।

 

/ আর / এআর