ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

টাকার অভাবে ঢাবিতে ভর্তির অনিশ্চয়তায় জুয়েল

দীপংকর দীপক

প্রকাশিত : ০৮:৩৭ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:৫৫ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অর্থ সংকটের কারণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হতে পারছেন না কুষ্টিয়ার ছেলে জুয়েল আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১৫১৫তম স্থান অধিকার করেন তিনি। জুয়েল রসায়ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য মনোনিত হয়েছেন।

জুয়েলের বাবা আবদুর রশিদ পেশায় একজন রিকশাচালক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু তার বাবা দিনরাত রিকশা চালিয়ে এ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা জমাতে পেরেছেন। চলতি মাসের মধ্যে বাকী টাকা জোগাড় করতে না পারলে তার পক্ষে ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

ছেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আব্দুর রশিদ। তিনি জানান, ঢাকার রাস্তায় দিনরাত রিকশা চালিয়ে এ পর্যন্ত মাত্র ১০ হাজার টাকা জামিয়েছেন। বাকী টাকা এত অল্প সময়ের মধ্যে তার পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। কয়েকজনের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়েও তিনি পাননি। অনেকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেননি। এমন পরিস্থিতিতে ছেলের ভর্তির বিষয়টি নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত।

তার ছেলে জুয়েল এখন কোথায় আছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুর রশিদ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, জুয়েল এখন ঢাকায় একটি মেসে থাকছে। মেসে থাকতে তার প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। গত মাসখানেক ধরে জুয়েল ছোটখাটো একটি চাকরি খুঁজছে। কিন্তু পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি করা যায় এমন কোনো উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না।

তিনি কান্না করতে করতে বলেন, `আমাগো এই বিপদের দিনে কেউ আগাইয়া আসলে ভালো হতো। কিন্তু এহন ভালো মাইনষের খুব অভাব। পোলার ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে দুই চোখে আর ঘুম আইসে না।`

জুয়েলের মা আরফা খাতুন একজন গৃহিণী। তার চার ভাই বোনের মধ্যে বড় দুই বোনকে এইচএসসি পাশের পর পরই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছোটবেলা থেকে অভাব-অনটনের মধ্যেই বেড়ে উঠেছেন জুয়েল। তবে দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলে টিউশনি করে পড়াশুনাটা চালিয়ে গেছেন। ২০১৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বায়তুন নূর আলিম মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। এরপর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। মেধা তালিকায় ১৫১৫তম স্থান দখল করেন। পরে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য মনোনিত হন।

কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে ভর্তির বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকায় তাদের পরিবারে চরম হতাশা নেমে এসেছে। সমাজের কোনো বিত্তবানের একটু সহযোগিতায় পূর্ণ হতে পারে জুয়েলের পরিবারের স্বপ্ন। হাসি ফুটতে পারে জুয়েলের মুখে।

 

কেউ সাহায্য পাঠাতে চাইলে জুয়েলের বাবা আবদুর রশিদের মোবাইল (০১৭৬৫-৪৬০৮৪২) নম্বরে যোগযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

টিকে/