ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

৩৮তম বিসিএস প্রিলি

আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দিনগুলো কাজে লাগান

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:০৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ শুক্রবার

৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসছে। দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ চাকরি প্রার্থী অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন এ পরীক্ষায়। প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হায়দার জাবেদ। একুশে টেলিভিশনের অনলাইনের পাঠকদের জন্য তার টিপস নিয়ে লিখেছেন রিপোর্টার মো. মাহমুদুল হাসান।

৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিয়ে এ মুহূর্তে আপনারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তাই আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। অনেকে বলছে ৩৮তম প্রিলির জন্য খুব অল্প সময় রয়েছে। কিন্তু তা আমি মনে করি না। কারণ এখনো এক মাসের বেশি সময় রয়েছে। এই সময়টুকু যদি ভালোভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব। এ সময়টুকুতে যদি আপনারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে পারেন তাহলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মোট ১০টি বিষয়ের মধ্যে যে কোনো ৩টি বা ৪টি বিষয়কে মূল হিসেবে ধরে প্রস্তুতি নিতে পারলে ভালো করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান অথবা বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও কম্পিউটারকে মূল বিষয় হিসেবে ধরে প্রস্তুতি নিতে পারেন। বাকি বিষয়গুলোতে গড় নম্বর তুলতে পারলে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হওয়া সহজ হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সবার আগে বিসিএস-এর প্রশ্নের কাঠামো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যারা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করেছেন প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তারা বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে তুলনামূলক অনেক এগিয়ে থাকেন। আর যারা বাণিজ্য, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলো থেকে পাশ করেছেন তাদের জন্য এ দু’টি বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে পরীক্ষার্থীদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ২০০ নম্বরের মধ্যে ২০০ -ই যে পেতে হবে তা কিন্তু নয়। শতকরা ৫০ থেকে ৬০ নম্বর পেলেই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব। এবার চলুন বিষয় ভিত্তিক কিছু আলোচনা করা যাক।

 

বাংলা- ৩৫:

বাংলা বিষয়ে সাহিত্য ও ব্যাকরণ এই দু’টি অংশ থেকে মোট ৩৫ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। সাহিত্য অংশের প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও অধুনিক যুগ-এই তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রাচীন ও মধ্যযুগ অংশে তুলনামূলক পড়া কম। প্রিলিমিনারির সিলেবাস অনুযায়ী এ অংশ থেকে মোট ৫ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। তাই একটু ভালো করে পড়লে এ অংশে সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব। অন্যদিকে আধুনিক অংশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম এবং তাদের জীবনী সম্পর্কে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির ২৫ থেকে ৩০ জন কবি-সাহিত্যিকের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের নাম ও কবি সাহিত্যিকদের উপাধি ও ছদ্মনাম ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। এ অংশ থেকে একাধিক প্রশ্ন আসে। আর ব্যাকরণ অংশের জন্য ধ্বনি, বর্ণ, বানান, প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, প্রতিশব্দ, পারিভাষিক শব্দ, বিপরীত শব্দ, পদ-প্রকরণ (বিশেষ করে বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয়), সন্ধি ও সমাসের ব্যতিক্রম উদাহরণগুলো পড়তে হবে।

বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকের সাম্প্রতিক তথ্যসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম জেনে রাখলে ভালো হবে।

বাংলা সাহিত্য এবং ব্যাকরণ অংশে ভালো করতে হলে বিসিএসসহ পিএসসির নন-ক্যাডার ও অন্যান্য সরকারি চাকরির বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখে নিলে পরীক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা যায়। কেননা বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে অনেক প্রশ্ন কমন পড়ে অনেক সময়।

 

ইংরেজি- ৩৫:

প্রথমে গ্রামার সম্পর্কিত বিসিএস ও পিএসসির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো পড়ে নিতে হবে। অন্যদিকে ইংরেজির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইংরেজি শব্দার্থ জানা। যার যত বেশি শব্দার্থ দখলে থাকবে তিনি তত বেশি এগিয়ে থাকতে পারবেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সিলেবাস অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় প্রয়োজনে লিখে লিখে পড়া যেতে পারে। এতে গ্রামারের নিয়মগুলো সহজেই আয়ত্বে আসবে।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্য অংশের ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কবি সাহিত্যিকদের নাম, আলোচিত গ্রন্থ, সাহিত্যে তাদের অবদান সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু ক্ল্যাসিক্যাল বইয়ের নামসহ বিতর্কিত বই সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে।

 

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা -(১৫+১৫):

বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি বিসিএসের সিলেবাস অনুযায়ী অষ্টম এবং নবম-দশম শ্রেণির গণিতসহ উচ্চতর গণিত বইটি ভালোভাবে শেষ করতে হবে। গণিত অনুশীলনের সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহার না করা বুদ্ধিমানের কাজ। গণিতের জন্য সামন্তধারা, গুণোত্তরধারা, বিন্যাস-সমাবেশ, সাম্ভাব্যতা, সেট, মান নির্ণয়, সূচক-লগারিদম ও জ্যামিতিক অংশগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। গণিতে ভালো করার মূলমন্ত্র হচ্ছে বেশি পরিমাণে অনুশীলন। যে যত বেশি অনুশীলন করবেন সে তত বেশি এগিয়ে থাকবেন। তাই প্রতিদিন গণিত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত রাখুন। মানসিক দক্ষতা অংশে ভালো করতে হলে বিগত সালের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।

 

সাধারণ জ্ঞান- ৫০:

সাধারণ জ্ঞান বিষযে দু’টি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য ৩০ নম্বর ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য ২০ নম্বর। উভয় বিষয়েই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাস থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কেও জানা থাকতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিভিন্ন আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, প্রাচীন স্থাপত্যের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এ অংশ থেকে তিন নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

বাংলা পত্রিকার প্রথম ও শেষ পাতা, সম্পাদকীয় ও মতামত, আন্তর্জাতিক, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিষয়গুলো পড়তে হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও সরকারি বিভিন্ন জরিপের প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে হবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।

 

সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি- (১৫+১৫):

সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে ভালো করতে হলে বিসিএসসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আসা প্রশ্নগুলো পড়ে নিতে হবে। এছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটি ভালোভাবে পড়তে হবে। বাজারে প্রচলিত যে কোনো একটি বই অনুশীলন করতে পারেন। অন্য দিকে কম্পিউটার বিষেয়ে ভালো করতে হলে বাস্তব জ্ঞানের মাধ্যমে শিখতে পারলে খুব ভালো হয়।

 

ভূগোল পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা - ১০:

এ বিষয়ে ভালো করতে হলে বিগত সালের প্রশ্নগুলো আগে পড়ে নিতে হবে। এছাড়াও মানচিত্র সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। বিশ্বের কোন দেশ কোথায় অবস্থিত সেটা জানা না থাকলে এ অংশে ভালো করা সম্ভব নয়। তাই বিশ্ব মানচিত্র সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। নবম-দশম শ্রেণির ভুগোল বইটি পড়ে নিলে ভালো হয়। এছাড়াও পড়ার সময় যে বিষয়টি কঠিন মনে হবে সে বিষয়টি মার্ক করে পড়লে সহজে আয়ত্তে আসবে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে এমন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে হবে।

 

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন- ১০:

এ বিভাগের প্রশ্নের উত্তর শতভাগ নিশ্চিত হয়ে দিতে হবে। তা না হলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিগত সালের প্রশ্নগুলো পড়ে এ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যেতে পারে।

সবশেষে ৩৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া সব প্রার্থীর জন্য শুভকামনা রইলো।

 

এসএইচ/টিকে